সুপার ওভারের রোমাঞ্চে জিতল উইন্ডিজ

মিরপুরের টার্নিং উইকেটে জমে গেলো দ্বিতীয় ওয়ানডে। স্পিনের রাজত্বে উত্তেজনা ছড়ালো প্রথম বল থেকে শেষ বল পর্যন্ত, আর শেষে গড়াল সেই রোমাঞ্চকর সুপার ওভারে। বাংলাদেশ নিজেরাই তৈরি করেছিল স্পিনের ফাঁদ, কিন্তু শেষমেশ সেই ফাঁদেই জড়িয়ে গেল তারা। ম্যাচটা জিতে গেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ, অধিনায়ক শেই হোপের ঠান্ডা মাথার ব্যাটিং আর অসাধারণ নেতৃত্বে।

মঙ্গলবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচে সুপার ওভারে জয় পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। মূল ম্যাচে দুই দলই সমান স্কোর করায় ম্যাচ গড়িয়েছিল সুপার ওভারে। যেখানে টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে করেছিল ২১৩। জবাবে ৯ উইকেট হারিয়ে ঠিক একই স্কোর করে ক্যারিবিয়ানরা। 

বাংলাদেশের এই টার্নিং উইকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের একমাত্র ভরসা ছিলেন অধিনায়ক হোপ। সেই হোপই দলকে ভরসা দিলেন, দলকে বাঁচালেন, আর শেষ পর্যন্ত দলকে জেতালেনও। পুরো ম্যাচজুড়ে তিনি ছিলেন শান্ত, স্থির ও পরিকল্পিত। ৫৩ রানে অপরাজিত থেকে দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান তিনি।

সুপার ওভারে মোস্তাফিজুর রহমানের করা ছয় বলেই নির্ধারিত হয় ভাগ্য। ওয়েস্ট ইন্ডিজ তোলে ১০ রান, এর মধ্যে ৭ রানই করেন সেই হোপ। বাংলাদেশের লক্ষ্য ছিল ১১, কিন্তু তারা থেমে যায় ৯ রানেই। তাও ক্যারিবিয়ানরা দিয়েছিল দুটি ওয়াইড ও একটি নো বল। অর্থাৎ ৯ বল খেলেও ১১ রান করতে পারেনি বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের ইনিংস শুরু থেকেই টালমাটাল। ওপেনার সাইফ হাসান ১৪ বল খেলে কোনো রান করতে পারেননি, ১৫তম বলে ছক্কা হাঁকিয়ে পরের বলেই আউট। ধীরগতিতে এগোয় ইনিংস—প্রথম ৫০ আসে ১১.৫ ওভারে, আর শতক আসে ২৯.৩ ওভারে। সৌম্য সরকার ৮৯ বলে সর্বোচ্চ ৪৫ রান করেন, কিন্তু বড় ইনিংস খেলতে পারেননি কেউই। মধ্য ওভারে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে দল। শেষদিকে রিশাদ হোসেন ১৪ বলে ঝোড়ো ৩৯ রানের ইনিংস খেলেন, যেখানে ছিল ৩টি চার ও ৩টি ছক্কা। মিরাজ ৩২*, সোহান ২৩ রানে অবদান রাখেন।

বল হাতে দুর্দান্ত সূচনা করে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ওভারেই নাসুম আহমেদ ফেরান ব্র্যান্ডন কিংকে। এরপর আলিক আথানাজে ও কেসি কার্টির ৫১ রানের জুটি ভাঙেন রিশাদ হোসেন, যিনি পরে কার্টিকেও ফেরান। ৫৯ বলে ৩৫ রান করেন কার্টি, ২৮ রান আথানাজের ব্যাটে। এরপর ক্রমাগত চাপ বাড়িয়ে উইকেট নেন নাসুম, রিশাদ ও তানভীর। এক পর্যায়ে ১৪১ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে হেরে বসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

তবে এখানেই দৃঢ় হয়ে দাঁড়ান অধিনায়ক শেই হোপ। প্রথমে গ্রিভসের সঙ্গে ৪৪ রানের জুটি, পরে আকিল হোসেনের সঙ্গে আরও ৩৪ রানের পার্টনারশিপ গড়ে দলকে ফিরিয়ে আনেন। মিরাজের থ্রোতে রানআউট হয়ে যান গ্রিভস (২৬), তবু হোপ ছিলেন অবিচল। ধৈর্য ধরে এক প্রান্ত আগলে রেখে ম্যাচের রাশ রাখেন নিজের হাতে।

শেষ ওভারে প্রয়োজন ৫ রান। অধিনায়ক সাইফ হাসানকে বল দেন। প্রথম দুই বলে রান আসেনি, এরপর দুটো সিঙ্গেল। সমীকরণ দাঁড়ায় ২ বলে ৩ রান। তৃতীয় বলেই বোল্ড হন আকিল, কিন্তু শেষ বলে তিন রানের প্রয়োজন, পিরে বলটা তুলে মারেন আকাশে, কিন্তু সোহান ধরতে পারেননি ক্যাচটি। সেই এক ভুলেই ম্যাচ গড়ায় সুপার ওভারে।

ম্যাচে একটি নতুন ইতিহাসও হয়েছে। ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো দল সম্পূর্ণ ৫০ ওভারই বল করেছে স্পিন দিয়ে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেসাররা একটিও ওভার পাননি। এর মাধ্যমে তারা ভেঙেছে শ্রীলঙ্কার এক ইনিংসে ৪৪ ওভার স্পিন বোলিংয়ের রেকর্ড (১৯৯৬, ১৯৯৮ ও ২০০৪ সালে তিনবার)।

Comments

The Daily Star  | English

Vegetable prices skyrocket as erratic rain ravages croplands

Consumers and farmers are bearing the brunt of the radical shift in weather patterns as crops are damaged and retail prices skyrocket.

14h ago