ক্রিকেটই যখন পরিবারের ভাষা
বাবা টুকটাক ক্রিকেট খেলতেন, চার ভাই-বোনের সবাই ক্রিকেট খেলেন। হ্যারি আর টিম টেক্টর একসঙ্গে মিলেই আয়ারল্যান্ডের পুরুষ দলের ব্যাটিং সামলাচ্ছেন, তাদের ভোন অ্যালিস ঠাঁই করেছেন নারী দলে। সবার বড় ভাই জ্যাক টেক্টরও আয়ারল্যান্ডের বয়সভিত্তিক দলের অধিনায়ক ছিলেন। মা ছাড়া পরিবারের প্রত্যেক সদস্য জড়িয়ে আছেন ক্রিকেটে, ডিনার টেবিলেও তাই ক্রিকেটই তাদের আলোচনার বিষয়।
আয়ারল্যান্ডের ক্রিকেটটা মূলত কয়েকটি পরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ। এজন্য তাদের দলে একই পরিবারের একাধিক সদস্যকে খেলতে দেখে গেছে নানান সময়ে। এক সময় দলটির হয়ে খেলতেন দুই ভাই কেভিন ও'ব্রায়েন ও নেইল ও'ব্রায়েন। আইরিশ ক্রিকেটের বড় নাম তারা। বিখ্যাত ছিলো জয়েস পরিবারও। এড জয়েস খেলেছেন লম্বা সময় ধরে, তার বোন ইসাবেলা জয়েস খেলেছেন নারী দলে। যিনি এখন ধারাভাষ্য দিতে আছেন বাংলাদেশে।
বর্তমান দলের মার্ক অ্যাডাইয়ারের ভাই রস অ্যাডাইয়ারও শুরুতে এই সিরিজে ছিলেন, পরে নাম উঠিয়ে নেন। টেক্টর পরিবারের দুই ছেলে হ্যারি ও টিম এবার টি-টোয়েন্টি সিরিজে ছড়াচ্ছেন আলো।
মাত্র দুই টি-টোয়েন্টির অভিজ্ঞতা নিয়ে বাংলাদেশে এসে টিম প্রথম দুই ম্যাচেই দেখান নিজের ব্যাটিং ঝলক। প্রথম ম্যাচে ১৯ বলে ৩২, পরের ম্যাচে ২৫ বলে ৩৮ রান করে আগ্রাসী শুরু পাইয়ে দেন তার দল। বাংলাদেশ সফর যেন তার টি-টোয়েন্টির ক্যারিয়ারের মোড়ও ঘুরিয়ে দিচ্ছে। বাংলাদেশকে প্রথম ম্যাচে হারাতে টিমের বড় ভাই হ্যারি খেলেন ৪৫ বলে ৬৯ রানের ইনিংস।
মঙ্গলবার সিরিজ নির্ধারনী ম্যাচের আগের দিন চট্টগ্রাম বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে এসে টিম শোনালেন তার পরিবারের গল্প, যা একদম নিখাদ ক্রিকেটীয় আমেজে ভরপুর, 'আমরা সবাই বেশ অনেক দিন ধরেই খেলছি। আমাদের বড় ভাই জ্যাক অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে অধিনায়কত্ব করেছে—মনে হয় সেটা এখানেই, বাংলাদেশেই হয়েছিল। তারপর হ্যারি তার (যুব) বিশ্বকাপে অধিনায়কত্ব করেছে, আর আমিও একই কাজ করেছি। আমাদের ছোট বোন অ্যালিসও এখন নারী দলে জায়গা করে নিয়েছে। আমরা সবাই বড় হয়েছি ক্রিকেট খেলতে খেলতে; বাবাও একটু খেলতেন। আমরা সবাই একই ক্লাবে খেলেছি পুরো পথ চলার সময়, আর আমরা সবাই এই খেলাটা খুব ভালোবাসি। একই পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের একই খেলাটা এতটা ভালোবাসা—এটা খুবই বিরল। কিন্তু আমরা সবাই এতে একসঙ্গে থাকতে পারছি, আর সবাই মিলে খেলতে পারছি—এটাই দারুণ।'
হ্যারির সঙ্গে দুই ম্যাচেই জুটি হয়েছে টিমের। প্রথ ম্যাচে দুই ভাই মিলে যোগ করেন ২৪ বলে ৩১। পরের ম্যাচে ৩১ রান আনেন ২১ বলে। তিন বছরের বড় হ্যারির সঙ্গে আন্তর্জাতিক মঞ্চে ব্যাট করা দারুণ উপভোগ করেন টিম, 'দেখো, হ্যারির সঙ্গে ব্যাটিং করা অবশ্যই খুব ভালো লাগে। আমরা ক্লাব ক্রিকেট ও ঘরোয়া ক্রিকেটে অনেক দিন ধরেই একসঙ্গে ব্যাটিং করছি, তাই ওর সঙ্গে ব্যাট করতে নেমে খুব আলাদা লাগেনি। অবশ্য এখানে ওর সঙ্গে ব্যাটিং করা একটু বড় উপলক্ষ, কিন্তু এটা আমার কাছে নতুন কিছু নয়। খুব ভিন্ন লাগেনি—স্বাভাবিকই মনে হয়েছে।'
হ্যারি ইতোমধ্যে আয়ারল্যান্ড ক্রিকেটে প্রতিষ্ঠিত নাম, তিন সংস্করণেই দলটির বড় ভরসা তিনি। টিমের যাত্রা কেবলই শুরু। শুরুটাই অবশ্য তার দারুণ কিছুর আভাস দেওয়া। বিশেষ করে পাওয়ার প্লেতে নেমেই বড় শট খেলতে পারেন অনায়াসে। স্পিনারদের খেলেন জায়গা বানিয়ে, পেসারদের শর্ট অব লেন্থের বল পিক করে একাধিকবার গ্যালারিতে পাঠিয়ে চিনিয়েছেন নিজের সামর্থ্য। জানালেন তার খেলার ধরণই তাকে ইতিবাচক, সব সময় বোলারদের উপর চাপ প্রয়োগ করে খেলতে চান তিনি, 'পাওয়ার প্লেতে ব্যাটিং আমার কাছে মূলত বোলারদের ওপর চাপ তৈরি করে খেলার চেষ্টা করা। জানি, কয়েকটা ভালো শুরু পেয়েছি, কিন্তু আমি মনে করি স্কোর বানানোর চেষ্টা করতে গিয়ে ধীরে খেলার চেয়ে, পাওয়ার প্লের বাইরে গিয়েও সেই গতি বজায় রাখতে গিয়ে আউট হওয়াটা আমি বেশি পছন্দ করব। এই দলও আসলে এভাবেই খেলতে চায়। আমরা চাই পাওয়ার প্লের পরেও একই গতি বজায় রাখতে এবং বড় স্কোর গড়ার চেষ্টা করে যেতে। অবশ্যই, শুরু ভালো করার পর আউট হওয়া হতাশার, কিন্তু যদি সেটা আক্রমণাত্মক খেলার কারণে হয়, তাহলে আমার কোনো আপত্তি নেই। আমি সেটা মেনে নিতে পারি।'


Comments