চট্টগ্রাম থেকে

বিশ্বকাপ মাথায় রেখে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচ

নেটে থ্রো ডাউনে ব্যাট করার সময় একটি বল এগিয়ে এসে খেলতে গিয়ে পরাস্ত হন জাকের আলি অনিক। ম্যাচে এই ধরণের পরিস্থিতিতে নিশ্চিত স্টাম্পিং হওয়ার কথা। ঠিক পরের বলেই কাট করতে গিয়ে হন বোল্ড। কিছুটা হতাশায় বলেন, 'পাটু (শামীমের ডাক নাম) তুই আয়।' শামীম হোসেন পাটোয়ারিকে স্ট্রাইক দিয়ে অপর দিকে চলে যান জাকের। তার এই প্রস্থান যেন প্রতীকী ছবিও।

এই দুজন ভাগাভাগি করে নেট শেয়ার করছিলেন, নুরুল হাসান সোহানকে তখনো দেখা গেছে অপেক্ষায়। শেষ দিকে টেল এন্ডারদের সঙ্গে ব্যাট করেছেন বটে। তবে একাদশের ভাবনায় যে তিনি নেই সেরকম আঁচ স্পষ্ট।

জাকের-সোহান ব্যর্থ হওয়ায় শুরুতে একাদশে মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনের সুযোগ পাওয়া হতো স্বাভাবিক। মজার কথা হলো অনুশীলনে তাকে খুঁজে পাওয়াই ছিল মুশকিল। নির্বাচকরা অঙ্কনকে স্কোয়াডে নিয়েছিলেন পরখ করার ভাবনায়, কিন্তু ডাগআউটে বসা ছাড়া আর কোনো কাজে লাগানো হয়নি তাকে। কারো চোটে শেষ ম্যাচে যদি অভিষেক করেও ফেলেন, তাহলেও এক ম্যাচ দিয়ে বিচার করা হবে মুশকিল।

এসব বিষয়ে প্রশ্ন করার জন্য উপযুক্ত কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। নির্বাচকরা আপাতত নীরবতার আশ্রয় নিয়েছেন। প্রধান কোচ ফিল সিমন্সও সংবাদমাধ্যম থেকে দূরত্বে আছেন। দলের হয়ে কথা বলতে পাঠানো হয় পেস বোলিং কোচ শন টেইটকে। নীতি-নির্ধারণী প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়ার যথেষ্ট যুক্তি আছে তার, তিনি হেঁটেছেন সহজ পথে।

নিজের বিভাগ নিয়ে অবশ্য দায়িত্ব নিয়ে কথা বলেছেন টেইট। বাংলাদেশের পেস বোলিং আক্রমণ বেশ জুতসই। এমনকি দলের ভেতর জায়গা পাওয়ার মধুর লড়াইও দেখেন কেউ কেউ। যদিও চলমান সিরিজে পারফরম্যান্স গড়পড়তা মানের একটু নিচে। মোস্তাফিজুর রহমান ছাড়া বাকি সব পেসারই ওভারপ্রতি দশের ওপর রান বিলিয়েছেন।

বিশেষ করে বিশ্বকাপ দলে জায়গা পাওয়ার লড়াইয়ে থাকা শরিফুল ইসলাম ও মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন ছিলেন বেশ বিবর্ণ। টেইট অবশ্য এক-দুই ম্যাচের পারফরম্যান্স নিয়ে ভাবতে চান না। তার ভাষায়, 'কখনও আপনি খরুচে হয়ে যান, আবার কখনও খুব ভালো বলও করেন। আগামীকাল (আজ) যে-ই খেলুক না কেন, সে আবারও ভালো খেলার সুযোগ পাবে—হোক তা ব্যাটিং বা বোলিং, স্পিনার বা পেসার। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ভালো দিক হলো এখানে অনেক ম্যাচ থাকে। টি-টোয়েন্টিতে কখনও কখনও পারফরম্যান্স ওঠানামা করতেই পারে, কিন্তু পরের দিনই আবার ভালো বোলিং করার আরেকটা সুযোগ চলে আসে। আমরা এর বেশি কিছু চাইতে পারি না।'

টি-১০ লিগ খেলার কারণে এই সিরিজ থেকে ছুটি নিয়েছেন তাসকিন আহমেদ—যিনি টেইটের চোখে 'পেস আক্রমণের নেতা'। বিশ্বকাপ দলে মোস্তাফিজ ও তাসকিনের জায়গা নিয়ে কোনো সংশয় নেই। বাকি দুটি জায়গায় লড়াই অন্তত তিনজনের। টেইটের মতে,  'আপনার কাছে যত বেশি খেলোয়াড় থেকে বাছাই করার সুযোগ থাকবে, ততই ভালো। হয়তো এটাই প্রথমবার বাংলাদেশ ক্রিকেট এতগুলো উচ্চমানের ফাস্ট বোলারের মধ্যে থেকে নির্বাচন করার সুযোগ পাচ্ছে—এটা একটি ইতিবাচক দিক। এই পরিস্থিতি প্রতিটি পেসারকে সচেতন করে দেয় যে আরও প্রতিযোগী আছে, যা তাদের মান ও পারফরম্যান্স বাড়াতে সাহায্য করবে। যেহেতু এখন অনেক বোলার আছে, শুধু দু'জনের মধ্যে বাছাই নয়—এই প্রতিযোগিতা আমাদের আরও এক ধাপ উপরে তুলতে পারে।'

প্রথম ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের কাছে বড় হারের পর দ্বিতীয় ম্যাচে ঘুরে দাঁড়িয়ে সিরিজে সমতায় ফেরে স্বাগতিক দল। মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টায় শুরু হওয়া ম্যাচটি তাই একরকম অলিখিত ফাইনাল। বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে প্রথম দুই ম্যাচ রাতের আলোয় হলেও সিরিজ নির্ধারণী লড়াই শুরু হবে ভরদুপুরে। খুব একটা প্রচার না থাকায় ম্যাচের সময়সূচি নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে বিভ্রান্তিও আছে। দিনের আলোয় খেলা হওয়ায় শিশিরের প্রভাবও নেই।

টেইট জানালেন, তারা আছেন সরল ভাবনায়— 'আমার মনে হয় আমাদের ভাবনাটা জটিল করে তোলার দরকার নেই। আমাদের শুধু ভালো ক্রিকেট খেলতে হবে এবং ম্যাচ জিততে হবে। প্রতিবার আপনি কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ জিতলে আত্মবিশ্বাস বাড়ে। আমরা যা করতে পারি তা হলো ভালো খেলা—গত ম্যাচে জেতার যে আত্মবিশ্বাস পেয়েছি, সেটাই ধরে নিয়ে আগামী ম্যাচে নামা। আশা করি আমরা জিতব। যদি জিততে পারি, বিরতিতে যাওয়ার জন্য সেটাই সবচেয়ে ভালো বার্তা হবে। তাই অযথা চিন্তাকে জটিল করার প্রয়োজন নেই।'

আসছে ফেব্রুয়ারির বিশ্বকাপ নিয়েও চলছে আয়ারল্যান্ডের প্রস্তুতি। এই সিরিজের ফলের বাইরেও তাদের নজর সেদিকে। কোচ হেইনরিখ মালান বললেন,  'দেখুন, আমরা যখন সিরিজ শুরু করি তখন থেকেই পরিষ্কার ছিল—এটা আমাদের বিশ্বকাপ প্রস্তুতির অংশ। সারা বছর আমরা যতটা ক্রিকেট খেলতে চেয়েছিলাম, তা হয়নি—কিন্তু সেটা অতীত। আমরা এখন কোথায় দাঁড়িয়ে আছি, সেটার ওপরেই মনোযোগ দিচ্ছি। প্রথম দুই ম্যাচেই যে ভাবনা, যে পরিকল্পনা আমরা করেছি তার স্বচ্ছতা স্পষ্ট হয়েছে। আশা করি, আগামীকালও আমরা সেটাই ধরে রাখতে পারব।'

Comments