অ্যানফিল্ডে ফিরছেন আলোনসো, পুরনো ঘরের বিপক্ষে নবজাগ্রত রিয়ালের লড়াই
প্রায় নিখুঁত এক সূচনার পর এবার সাবেক ঘর অ্যানফিল্ডে ফিরছেন রিয়াল মাদ্রিদের কোচ জাবি আলোনসো। মঙ্গলবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগে মুখোমুখি হবে তার বর্তমান ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ ও পুরনো ক্লাব লিভারপুল। একদিকে যেখানে লিভারপুল গত আট ম্যাচে জিতেছে মাত্র দুটি, অন্যদিকে আলোনসোর মাদ্রিদ এখন দুরন্ত ছন্দে, প্রতিদিন আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে দলটি।
গত সপ্তাহে লা লিগায় এল ক্লাসিকোতে বার্সেলোনাকে হারিয়ে উড়ন্ত আত্মবিশ্বাসে আছে ১৫ বারের ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নরা। কোচ আর্নে স্লটের লিভারপুলের বিপক্ষে এবার সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতেই মাঠে নামবে আলোনসোর দল।
এই মৌসুমে মাদ্রিদের একমাত্র হারটি এসেছে অ্যাটলেটিকোর বিপক্ষে ৫-২ ব্যবধানে। এরপর থেকেই বদলে গেছে পুরো দল, তাদের খেলার ধরন থেকে মনোভাব, সবকিছুতেই এসেছে নতুন রূপ।
২০০৪ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত লিভারপুলের মিডফিল্ডের প্রাণ ছিলেন আলোনসো। ইস্তাম্বুলে ২০০৫ সালের সেই অবিস্মরণীয় চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের অন্যতম নায়ক তিনি। এরপর রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দিয়ে জিতেছেন আরও ট্রফি, খেলেছেন বিশ্বসেরা ক্লাবের হয়ে।
অনেক লিভারপুল সমর্থকই ভেবেছিলেন, ২০২৩-২৪ মৌসুম শেষে ক্লপের বিদায়ের পর হয়তো আলোনসোই ফিরবেন অ্যানফিল্ডে। কিন্তু তিনি শেষ পর্যন্ত বায়ার লেভারকুজেনের দায়িত্ব শেষ করে মাদ্রিদের ডাগআউটে বসেন, কার্লো আনচেলত্তির স্থলাভিষিক্ত হয়ে।
তার অধীনে রিয়াল মাদ্রিদ যেন নতুন করে জন্ম নিয়েছে, ১৪ ম্যাচে ১৩ জয় দলের বর্তমান সামর্থ্যের প্রমাণ। স্প্যানিশ দৈনিক মার্কা লিখেছে, 'আলোনসোর অধীনে মাদ্রিদ এখন নতুন পরিচয়ে গড়ে উঠেছে, তারা প্রতিপক্ষকে নিয়ন্ত্রণ করে, শ্বাসরোধ করে, দমিয়ে ফেলে।'
আনচেলত্তির আমলে যেখানে দল ছিল কিছুটা অলস ও পূর্বানুমেয়, সেখানে আলোনসো এনেছেন গতি, শৃঙ্খলা ও শক্ত ডিফেন্স। তিনি বলেন, 'ট্রফি জিততে হলে আগে ভালো রক্ষণ গড়ে তুলতে হয়। বেশি ক্লিন শিট মানে বেশি জয়ের সম্ভাবনা।'
এই মৌসুমে এখন পর্যন্ত সাতটি ক্লিন শিট পেয়েছে মাদ্রিদ, যা দলের দৃঢ়তার প্রতিফলন। আলোনসোর কৌশলগত পরিবর্তনও নজরকাড়া। ম্যাচের ভেতরে বা ম্যাচভেদে তিনি ফরমেশন ও পরিকল্পনা বদলে দিতে দ্বিধা করেন না, যা আনচেলত্তির সময় খুব একটা দেখা যেত না।
আলোনসোর অধীনে তারকারা যেন নতুন উদ্যমে জ্বলে উঠেছেন। কিলিয়ান এমবাপে ইতোমধ্যে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ১৮ গোল করেছেন, এবং এখন শুধু স্কোরার নয়, প্রেশিংয়েও অবদান রাখছেন।
জুড বেলিংহামও দারুণ ছন্দে, গত দুই সপ্তাহেই বার্সেলোনা, জুভেন্টাস ও ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষে গোল করেছেন। গ্রীষ্মে কাঁধের অস্ত্রোপচারের পর তাকে ধীরে ধীরে ফিরিয়ে এনে আলোনসো সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যা এখন ফল দিচ্ছে।
ভিনিসিয়ুস জুনিয়র যদিও ক্লাসিকোতে বদলি হওয়ায় ক্ষোভ দেখিয়েছিলেন, পরে ক্ষমা চেয়ে মাঠে পারফরম্যান্স দিয়ে কোচের আস্থা ফিরিয়ে এনেছেন। অন্যদিকে তরুণ তুর্কি মিডফিল্ডার আরদা গুলারকেও ধীরে ধীরে টনি ক্রুস ও লুকা মদ্রিচের বিকল্প হিসেবে গড়ে তুলছেন আলোনসো।
মঙ্গলবারের ম্যাচের আগে অ্যানফিল্ডে অনুশীলনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আলোনসো। 'এটা আমার সিদ্ধান্ত। আমরা নিজেদের জায়গাতেই ট্রেনিং করব, যাতে তারা আমাদের ওপর ২০০টা ক্যামেরা বসাতে না পারে,' বলেন রিয়াল কোচ। তিনি চান না, তার পরিকল্পনা আগেভাগে প্রতিপক্ষ বুঝে ফেলুক।


Comments