৭১ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বাজে সময় লিভারপুলের

মৌসুমের শুরুতে টানা সাত ম্যাচ জিতে সবার চোখে ছিল শিরোপাধারীর ছাপ। আরনে স্লটের হাত ধরে লিভারপুল যেন তৈরি হয়েছিল প্রিমিয়ার লিগ ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগে বড় কিছুর দাবি নিয়ে। কিন্তু কয়েক মাসের ব্যবধানে স্বপ্ন বদলে গেছে দুঃস্বপ্নে। ভয়াবহ ছন্দপতনে ৭১ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বাজে সময় পার করছে অলরেডরা।

বুধবার রাতে অ্যানফিল্ডেই পিএসভির কাছে ৪-১ গোলের বিব্রতকর হার শুধু অবস্থানই নয়, আত্মবিশ্বাসও পাতালে নামিয়ে দিয়েছে লিভারপুলের। যা ১৯৫৩-৫৪ মৌসুমের পর প্রথমবার টানা ১২ ম্যাচে নয়টি হার, পরিসংখ্যান এতটাই অস্বস্তিকর যে চোখে পড়লেই ভীষণ ভারী লাগে।

একই সঙ্গে সব প্রতিযোগিতায় টানা তিন ম্যাচে তিন বা ততোধিক গোলের ব্যবধানে হারল লিভারপুল। সেটিও ১৯৫৩ সালের পর প্রথম। পাঁচ দিনের ব্যবধানে ঘরের মাঠে সাত গোল হজম, যেখানে অ্যানফিল্ড বহুদিন ধরেই প্রতিপক্ষের আতঙ্কের জায়গা ছিল।

দলের এমন বেহাল অবস্থায় হতাশ কুর্টিস জোন্স বললেন, 'আমার কাছে কোনো উত্তর নেই। এটা গ্রহণযোগ্যও নয়। আমি রাগ পেরিয়ে গেছি, এখন আর শব্দই খুঁজে পাই না।'

সমর্থকেরা যারা গত মৌসুমেই স্লটের প্রথম বছরেই শিরোপা দেখে উচ্ছ্বসিত ছিলেন, আজ তারা প্রশ্ন তুলছেন, এই ডাচম্যানই কি লিভারপুলকে ফের জাগাতে পারবেন?

সাবেক ডিফেন্ডার স্টিফেন ওয়ারনকও বলছেন, 'কিছুই ঠিকঠাক ক্লিক করছে না। হারগুলো জমা হয়ে দলকে আরও দুর্বল করে দিচ্ছে। লড়াইয়ের মানসিকতা দেখা যাচ্ছে না, এটাই সবচেয়ে উদ্বেগের।'

সাত ম্যাচে ছয় হারের পরেই শুরু হয় সংকটের গুঞ্জন। এর মাঝে অ্যাস্টন ভিলা ও রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে জয়ে আশার আলো দেখা দিয়েছিল, তবে তা ছিল সাময়িক। ম্যানচেস্টার সিটির কাছে ৩-০ গোলের হার, এরপর নটিংহ্যাম ফরেস্টের কাছেও একই ব্যবধানে ধরা। লিগ টেবিলে নামতে নামতে ১২তম স্থানে, আর পিএসভির বিপর্যয় নামিয়ে দিল আরও নিচে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের নতুন লিগ ফরম্যাটে শীর্ষ আটে জায়গা পাওয়া এখন বড় হিসাব-নিকাশের বিষয়।

লিভারপুল অতীতে খুব সহজে কোচ বরখাস্ত করেনি। গত মৌসুমেই ক্লপ চলে যাওয়ার পর প্রথম ১০ ম্যাচে আট জয়ে রেকর্ড গড়েছিলেন স্লট। কিন্তু এবার নতুন সাইনিংগুলোর ব্যর্থতা তাকে কোণঠাসা করছে। রেকর্ড সাইনিং আলেক্সান্ডার ইসাক এখনো গোলহীন, মিলোশ কেরকেজ ছন্দে নেই, ফ্লোরিয়ান ভির্টজ চোটে। অথচ পিএসভির ম্যাচে পিছিয়ে থেকেও স্লট মাত্র দুটি পরিবর্তন করেন, যেখানে প্রয়োজন ছিল সাহসী পুনর্গঠনের।

নিজেও স্বীকার করলেন তিনি বিস্মিত, 'এটা সবার জন্য ধাক্কা। খেলোয়াড়দের জন্য, আমার জন্যও। আমি সহজে অবাক হই না। কিন্তু আমরা সবাই আরও ভালো করতে পারি, আমিও এর বাইরে নই।'

ডমিনিক সোবস্লাই অন্তত কিছুটা উজ্জ্বলতা ফিরিয়েছেন। মাঝমাঠে ফিরেই গোল, গতি ও আগ্রাসী উপস্থিতি দেখিয়ে প্রমাণ করলেন ডান-ডিফেন্সে কাটিয়ে দেয়া তার সঠিক ব্যবহার নয়।

তবু স্টিভেন জেরার্ড সতর্ক করে বলছেন, 'এটা এখনও সরাসরি 'সংকট' নয়, কিন্তু আরেকটু পরেই হবে। এমন পারফরম্যান্সের অজুহাত নেই। দল আত্মবিশ্বাসহীন, ছিন্নভিন্ন। কোচ যদি দ্রুত সমাধান না খুঁজে পান, পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।'

পিএসভি এমনিতেই রেডদের সবচেয়ে 'অসুবিধার প্রতিপক্ষ', পেছনের আট সাক্ষাতে মাত্র এক জয়। তাই ফেরার ম্যাচ হিসেবে এটি হয়তো আদর্শ ছিল না। কিন্তু এখন স্লটকে ফিরতেই হবে, দলকে অন্তত উপরের অর্ধে তুলতে ও ইউরোপিয়ান শীর্ষ আটের স্বপ্ন জীবিত রাখতে।

'ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবছি না। দলকে উন্নত করার জন্য প্রতিদিন কাজ করছি। আমাদের সবারই ভালো করতে হবে, আমারও,' বলেন স্লট।

Comments

The Daily Star  | English

Farewell

Nation grieves as Khaleda Zia departs, leaving a legacy of unbreakable spirit

8h ago