জুনিয়রদের বিশ্বকাপ ঝলক, এবার কি ঘুরে দাঁড়াবে বাংলাদেশের হকি?
বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২১ দলের জুনিয়র বিশ্বকাপে প্রাণবন্ত পারফরম্যান্স আবারও সামনে নিয়ে এসেছে সেই পুরনো প্রশ্ন, বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন কি বিচ্ছিন্ন সফলতাকে টেকসই অগ্রগতিতে রূপ দিতে পারবে?
১৭তম হয়ে পাওয়া চ্যালেঞ্জার ট্রফি হয়তো শুনতে খুব আকর্ষণীয় নয়, কিন্তু যে খেলাটি বহুদিন ধরে সাংগঠনিক কাঠামো ও বিনিয়োগের অভাবে ক্ষয়িষ্ণু হয়ে পড়েছিল, সে খেলায় সামান্য সংগঠন ও পরিকল্পনা থাকলে কী সম্ভব, এটি ছিল তারই স্মরণ করিয়ে দেওয়া একটি মুহূর্ত।
সীমিত সম্পদ কিন্তু অগাধ আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলা জুনিয়র দলটি বিশ্বমঞ্চে প্রমাণ করেছে, সঠিক পরিবেশ পেলে তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে। অস্ট্রিয়া, কোরিয়া, চীন, মিশর এবং কানাডার চেয়ে এগিয়ে শেষ করা, সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া ও ফ্রান্সের বিপক্ষে সাহসী লড়াই, ইঙ্গিত দিয়েছে যে ব্যবধানটা অতিক্রম করা অসম্ভব কিছু নয়।
আমিরুল ইসলাম, রাকিবুল হাসান, দিন ইসলাম, মাহমুদ হাসান, ওবায়দুল জয়, হোজাইফা হোসেন ও মেহরাব হোসেনের মতো খেলোয়াড়রা সেই ঐক্য ও ক্ষুধার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
এই আশার স্ফুলিঙ্গটি স্পষ্ট বৈপরীত্য তৈরি করেছে বাংলাদেশের হকির বিস্তৃত অবক্ষয়ের সঙ্গে। শেষবার দেশজুড়ে এত উন্মাদনা দেখা গিয়েছিল ১৯৮৫ সালে, যখন পুরুষ এশিয়া কাপ আয়োজন বাচ্চাদের বাঁকা বাঁশ আর কাগজের বল দিয়ে হকি খেলতে অনুপ্রাণিত করেছিল।
চার দশক পর চিত্রটা কঠিন, নিয়মিত কোনো প্রিমিয়ার লিগ নেই, জেলা পর্যায়ে কোনো প্রতিযোগিতা নেই, আর প্রতিভার সরবরাহ কমতে কমতে এখন পুরোপুরি নির্ভর করতে হচ্ছে বিকেএসপির ওপর।
বিএইচএফ-এর সাধারণ সম্পাদক লে. কর্নেল (অব.) রিয়াজুল হাসানের কাছে সমস্যার মূলে রয়েছে একটাই শব্দ, টাকা। তিনি বলেন, আর্থিক সীমাবদ্ধতাই খেলাটির সবচেয়ে বড় বাধা, যদিও ফেডারেশন স্পনসর খুঁজে বের করা এবং সরকারের সহায়তা পাওয়ার চেষ্টা করবে বিশ্বকাপের এই গতি ধরে রাখতে। তার ভাষায়, স্পনসরদের 'ছোট ছোট অবদানও' কার্যক্রম চালিয়ে যেতে সাহায্য করতে পারে।
ডাচ কোচ সিগফ্রিড আইকম্যান, যার চার মাসের দায়িত্বে দল শৃঙ্খলা, কমপ্যাক্ট রক্ষণ আর দ্রুত ট্রানজিশনের ধারণা শিখেছিল, বাজেট সংকটের কারণে থাকার সম্ভাবনা খুবই কম। রিয়াজুল স্বীকার করেন, স্থায়ীভাবে বিদেশি কোচ রাখা বাস্তবসম্মত নয় যদি না নির্দিষ্ট তহবিল নিশ্চিত করা যায়। তবে তিনি বলেন, সরকারকে অনুরোধ করা হবে এবং সফল হলে আইকম্যানকে আবার আনা কিংবা আরেকজন শীর্ষমানের এফআইএইচ কোচ নিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে।
তিনি আরও স্বীকার করেছেন, আসন্ন মাসগুলোতে দলটিকে একত্রে রাখা কঠিন হবে। ক্যাম্পে যোগদানের আগে খেলোয়াড়দের মান বজায় রাখতে ফিটনেস বেঞ্চমার্ক চালুর কথাও ভাবছে ফেডারেশন।
এ ছাড়াও, তহবিলের ওপর নির্ভর করে দলকে বিদেশে আমন্ত্রিত প্রতিযোগিতায় পাঠানোর পরিকল্পনাও রয়েছে।
দেশীয় পর্যায়ে প্রতিযোগিতা নিয়ে রিয়াজুল খেলোয়াড়দের দাবির প্রতিধ্বনি করেন, লিগ দরকার। তবে ক্লাবগুলো তাতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। তিনি জানান, প্রিমিয়ার লিগ পুনরায় চালুর জন্য আবারও তাদের অনুরোধ জানানো হবে। নারী হকিতে ব্র্যাক ব্যাংকের সাম্প্রতিক সহযোগিতা দেখিয়েছে, বিবেচনাপ্রসূত কর্পোরেট সম্পৃক্ততা কী করতে পারে এবং রিয়াজুল আশা করেন পুরুষ হকিতেও এমন সহায়তা পাওয়া যাবে।
এই জুনিয়র বিশ্বকাপে বাংলাদেশ যে দাপট দেখিয়েছে, তা ইঙ্গিত দেয়, বাংলাদেশ হকি কেমন হতে পারে। আসল পরীক্ষা এখন এই গতি, এই সম্ভাবনাকে সুযোগ ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই কতটা আন্দোলনে রূপ দিতে পারে বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন।


Comments