'বাংলাদেশের জন্য ঐতিহাসিক এক বিশ্বকাপ'
ভারতের মাটিতে জুনিয়র বিশ্বকাপে অভিষেক আসরেই ইতিহাস গড়েছে বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব-২১ হকি দল। সেই সঙ্গে ইতিহাসের অংশ হয়েছেন দেশের দুই আম্পায়ার সালিম লাকি ও শাহবাজ আলী, যারা প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে ম্যাচ পরিচালনা করা বাংলাদেশের প্রথম কর্মকর্তা হিসেবে নাম লেখান। দ্য ডেইলি স্টার-এর আতিক আনামের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে হকি খেলোয়াড় থেকে আম্পায়ার হওয়া সেলিম লাকি কথা বলেছেন এলিট পর্যায়ের প্রটোকল শেখা, এফআইএইচ ও বিশ্বজুড়ে সহকর্মীদের প্রশংসা পাওয়া, দেশের ভেতরে সীমিত প্রতিযোগিতার চ্যালেঞ্জ এবং বাংলাদেশি আম্পায়ারদের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে। সাক্ষাৎকারের নির্বাচিত অংশ তুলে ধরা হলো—
দ্য ডেইলি স্টার: প্রথমবার বিশ্বকাপে ম্যাচ পরিচালনার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
সেলিম লাকি: আমাদের জন্য এটি ছিল একেবারেই ঐতিহাসিক। আমরা অনেক নতুন বিষয় শিখেছি ও অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি, নতুন বন্ধুত্ব, একেবারে ভিন্ন পরিবেশ এবং এত বড় একটি বৈশ্বিক আয়োজনে মানুষের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ। আমরা অমূল্য অভিজ্ঞতা পেয়েছি এবং ম্যাচ পরিচালনার নানা আধুনিক কৌশল শিখেছি। মাঠের দায়িত্বের বাইরেও আমরা দেখেছি, এলিট আম্পায়াররা কীভাবে নিজেদের আচরণ ও দায়িত্ব পালন করেন। ভিডিও রেফারেল নিয়ে আলোচনা কীভাবে হয়, সেটিও শিখেছি।
ডেইলি স্টার: আপনি ও শাহবাজ আলী মোট কতটি ম্যাচ পরিচালনা করেছেন?
সেলিম: আমি মোট ১৫টি ম্যাচে দায়িত্ব পালন করেছি, ছয়টি মাঠ আম্পায়ার হিসেবে, দুটি ভিডিও আম্পায়ার হিসেবে এবং প্রায় সাতটি রিজার্ভ আম্পায়ার হিসেবে। শাহবাজ ভাই ১৩টি ম্যাচ পরিচালনা করেছেন, আটটি মাঠ আম্পায়ার হিসেবে, তিনটি ভিডিও আম্পায়ার হিসেবে এবং দুটি রিজার্ভ আম্পায়ার হিসেবে। মিলিয়ে আমরা টুর্নামেন্টের প্রায় ৭২টি ম্যাচের মধ্যে ২৮টিতেই যুক্ত ছিলাম।
ডেইলি স্টার: আপনি অনেক উচ্চচাপের ম্যাচ পরিচালনা করেছেন। বিষয়টি কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল?
সালিম: চাপ ছিল অসাধারণ রকমের। প্রায় ১০ জন ওয়ার্ল্ড প্যানেল আম্পায়ার উপস্থিত ছিলেন, যা স্বাভাবিকভাবেই মান আরও উঁচুতে নিয়ে গিয়েছিল। আমরা যদিও তাদের চেয়ে এক-দুই ধাপ নিচে, তবু এমন এলিট আম্পায়ারদের সঙ্গে একসঙ্গে ম্যাচ পরিচালনার অভিজ্ঞতা ছিল দারুণ।
ডেইলি স্টার: আপনারা দুজন কীভাবে এই সুযোগটি পেলেন?
সেলিম: ২০১২ সাল থেকে আমরা আন্তর্জাতিক হকির সঙ্গে যুক্ত। বছরের পর বছর আমরা এশিয়া কাপ, এশিয়ান গেমস, ইউরোপিয়ান ট্যুর, আফ্রিকান অলিম্পিক বাছাই পর্ব এমনকি ভারত-পাকিস্তান ম্যাচেও দায়িত্ব পালন করেছি। ধারাবাহিক কঠোর পরিশ্রম ও পারফরম্যান্সের মাধ্যমেই আমরা এমন এক জায়গায় পৌঁছেছি, যেখানে এফআইএইচ আমাদের ওপর বিশ্বকাপে দায়িত্ব দেওয়ার আস্থা রেখেছে।
ডেইলি স্টার: এফআইএইচ ও সহকর্মী আম্পায়ারদের কাছ থেকে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া পেয়েছেন?
সেলিম: তারা স্বীকার করেছেন, এটি আমাদের প্রথম এফআইএইচ ইভেন্ট এবং উচ্চতর স্তরে যেতে হলে আমাদের আত্মবিশ্বাস আরও বাড়াতে হবে, এমন পরামর্শও দিয়েছেন। আমাদের উন্নতি ও প্রচেষ্টায় তারা সন্তুষ্ট ছিলেন, বিশেষ করে দেশের ভেতরের সীমাবদ্ধতাগুলো বিবেচনায় নিয়ে। ঢাকায় নিয়মিত লিগ, ম্যাচ এবং সঠিক আম্পায়ারিং প্রটোকল না থাকায় ভিন্ন পরিবেশে মানিয়ে নেওয়া কঠিন। প্রতিবার ম্যাচের আগে ঘোষক যখন বলতেন, 'বাংলাদেশ থেকে সালিম লাকি,' তখন আমি ভীষণ গর্ব অনুভব করতাম।
ডেইলি স্টার: দেশীয় লিগ না থাকায় আপনি নিজেকে কীভাবে প্রস্তুত রাখেন?
সেলিম: ২০২৪ সালে আমি ওমান লিগে ম্যাচ পরিচালনা করেছি। চলতি বছরের শুরুতে কিছু ক্যান্টনমেন্ট পর্যায়ের ম্যাচও হয়েছিল, যেখানে আমরা আটজন ম্যাচ ফিটনেস ধরে রাখতে দায়িত্ব পালন করেছি। পরে আমরা চীন গিয়েছি, এরপর এশিয়া কাপে অংশ নিয়েছি। আমি ওস্তাদ ফজলুর রহমান হকি একাডেমির সঙ্গেও কাজ করি, তরুণ খেলোয়াড়দের সঙ্গে অনুশীলন করি, মোবাইলে আম্পায়ারিংয়ের ভিডিও দেখি এবং সিনিয়র আম্পায়ার ও সহকর্মীদের পর্যবেক্ষণ করে শেখার চেষ্টা করি।
ডেইলি স্টার: আন্তর্জাতিক আম্পায়ারিংয়ে বর্তমানে আপনার অবস্থান কোথায়?
সেলিম: আমি এখন সেন্ট্রাল প্যানেল আম্পায়ার। এর ওপর রয়েছে হাই পারফরম্যান্স প্ল্যাটফর্ম (এইচপিপি) এবং লিডিং প্যানেল। বর্তমানে লিডিং প্যানেলে ৩২ জন এবং এইচপিপিতে ১০ জন আম্পায়ার রয়েছেন।
ডেইলি স্টার: বাংলাদেশের দলের পারফরম্যান্স নিয়ে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করেছেন?
সেলিম: বাংলাদেশ দল সবাইকে মুগ্ধ করেছে। ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের আম্পায়াররা দলটির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। অনেকেই বিশ্বাস করতে পারেননি, বাংলাদেশের হকি এতটা উন্নতি করেছে।
ডেইলি স্টার: এখন ফেডারেশনের কাছে আপনার প্রত্যাশা কী?
সেলিম: আমাদের অনুরোধ খুবই সাধারণ। আমাদের পর এখন খুব কম মানসম্পন্ন আম্পায়ার উঠে আসছে। আগামী ১০ বছরে বাংলাদেশ আরেকজন আন্তর্জাতিক আম্পায়ার পাবে, এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। ফেডারেশনকে অবশ্যই আম্পায়ারদের মূল্যায়ন ও সহায়তা করতে হবে, আম্পায়ার বোর্ডের সঙ্গে দূরত্ব কমাতে হবে এবং একসঙ্গে কাজ করে ভবিষ্যতের কর্মকর্তাদের তৈরি করতে হবে। তা না হলে এগোনো খুবই কঠিন হবে।


Comments