দেড় বছর পর শুরু নারী ফুটবল লিগ: লক্ষ্য কি শুধুই নিয়ম রক্ষা?

Bangladesh women football
ছবি: ফিরোজ আহমেদ

দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে আজ সোমবার ১১টি ক্লাব নিয়ে শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ নারী ফুটবল লিগ। তবে দল গঠনে অসমতা, আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধার ঘাটতি ও বাণিজ্যিক পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এই লিগ আদতে কতটা প্রতিযোগিতামূলক হবে, তা নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়াম এবারের লিগের একমাত্র ভেন্যু। সেখানে উদ্বোধনী ম্যাচে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ পুলিশ ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। দিনের আরেক ম্যাচে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন নাসরিন একাডেমি লড়বে বিকেএসপির বিপক্ষে।

দেড় বছর পর আয়োজিত এই লিগের হাল দেখে মনে হচ্ছে, তাড়াহুড়ো করে এটি কেবল নিয়ম রক্ষার এক চেষ্টা। দেশের নারী ফুটবলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা আনার চেয়ে বরং এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের (এএফসি) শর্ত পূরণ করতেই যেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) এই তোড়জোড়। এএফসির নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিটি ক্লাবের অন্তত ১০টি ম্যাচ খেলা বাধ্যতামূলক। তাই ১১টি দল নিয়ে সিঙ্গেল লেগের রাউন্ড রবিন ফরম্যাটে লিগ আয়োজন করে বাফুফে সেই শর্তটি কোনোমতে পূরণ করছে।

মাত্র ৩৩ দিনের মধ্যে মোট ৫৫টি ম্যাচ শেষ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। ফলে অধিকাংশ দিনে পাঁচটি করে ম্যাচ মাঠে গড়াবে, একই মাঠে খেলা চলবে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত। ফ্লাডলাইটের সীমাবদ্ধতা, বিকল্প ভেন্যুর অভাব ও এমন ঠাসা সূচির কারণে খেলোয়াড়দের স্বাস্থ্যঝুঁকি ও খেলার মান নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

দলগুলোর শক্তিতে ভারসাম্য আনতে বাফুফে ৩৬ জন খেলোয়াড়কে নিয়ে একটি 'সেন্ট্রাল পুল' তৈরি করেছিল। সেখান থেকে ক্লাবগুলোর জন্য পট-১ থেকে পাঁচজন সিনিয়র, পট-২ থেকে পাঁচজন বয়সভিত্তিক ও পট-৩ থেকে একজন গোলরক্ষক নেওয়ার সুযোগ ছিল। তবে বাস্তবে দলগুলোর শক্তিতে আকাশ-পাতাল পার্থক্য দেখা দিয়েছে।

নাবিল গ্রুপের পৃষ্ঠপোষকতায় আসা নবাগত ক্লাব রাজশাহী স্টার্স ১১ জন নারী জাতীয় ফুটবল দলের খেলোয়াড় নিয়ে একটি শক্তিশালী দল গড়েছে। ফরাশগঞ্জ নিয়েছে ছয়জন। অন্যদিকে, পাঁচটি ক্লাব জাতীয় দলের কোনো খেলোয়াড় ছাড়াই মাঠে নামছে, যাদের মূল ভরসা একাডেমি বা সার্ভিসেস (সেনাবাহিনী, পুলিশ, আনসার ইত্যাদি) দলগুলোর খেলোয়াড়রা।

বর্তমান চ্যাম্পিয়ন নাসরিন একাডেমিও এই অসামঞ্জস্যের শিকার। তারা বয়সভিত্তিক জাতীয় দলের মাত্র একজন খেলোয়াড় নিতে পেরেছে। দলগুলোর আর্থিক সংকটের কথা উল্লেখ করে ক্লাবটির মালিক নাসরিন বেগম বলেন, 'আর্থিক সংস্থান ও স্পন্সরশিপই মূল সমস্যা। কোনো ধরনের আর্থিক সহায়তা না থাকায় অধিকাংশ ক্লাবই এখন একাডেমি খেলোয়াড়দের ওপর নির্ভর করছে।'

এমনকি লিগটির জন্য এখন পর্যন্ত কোনো টাইটেল স্পন্সরও পাওয়া যায়নি। বিদেশি খেলোয়াড় কোটার চিত্রটিও হতাশাজনক। প্রতিটি দল চারজন করে বিদেশি খেলোয়াড় নিবন্ধন করার এবং ম্যাচে দুইজনকে খেলানোর সুযোগ পেলেও কেবল ফরাশগঞ্জ দুইজন নেপালি খেলোয়াড় এনেছে। নাসরিন একাডেমি একজন অস্ট্রেলিয়ান-বাংলাদেশি খেলোয়াড়কে দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করছে।

এবারের লিগের সূচির সঙ্গে আগের পরিকল্পনাগুলোর বিরোধও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। জাতীয় দলের কোচ পিটার বাটলার এর আগে খেলোয়াড়দের ভুটানের লিগে খেলতে দেওয়ার সমালোচনা করেছিলেন। তিনি সতর্ক করেছিলেন যে, পর্যাপ্ত প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচের অভাব খেলোয়াড়দের ফিটনেস ও ধার কমিয়ে দেবে।

থাইল্যান্ডের বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচে হার এবং গত মাসে মালয়েশিয়া ও আজারবাইজানকে নিয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজে হতাশাজনক পারফরম্যান্স বাটলারের দুশ্চিন্তাকেই সত্য প্রমাণ করেছে। পর্যাপ্ত বিশ্রামের সুযোগবিহীন এই ঠাসা সূচির লিগ এখন সেই ঝুঁকিকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।

আয়োজনের সীমাবদ্ধতা স্বীকার করেছেন বাফুফের নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ। তিনি বলেন, 'একদিনে একাধিক ম্যাচ আয়োজন করা অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং। তবে আমাদের এক মাসের মধ্যে লিগ শেষ করতে হবে, তাই আমাদের সামনে কোনো বিকল্প নেই।'

বড় ক্লাবগুলোর অনাগ্রহের কথা জানিয়ে তিনি যোগ করেন, 'আমরা সবাইকে আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছিলাম। আতাউর রহমান ভূঁইয়া একাডেমি এন্ট্রি জমা দেয়নি। আবাহনী জানিয়েছে, তারা আগামী বছর দল গঠন করবে।'

আয়োজনের এই বিশৃঙ্খল অবস্থার চূড়ান্ত রূপ দেখা গেছে লিগ শুরুর ২৪ ঘণ্টারও কম সময় আগে— যখন বাফুফে ক্লাবগুলোর খেলোয়াড় নিবন্ধনের পূর্ণাঙ্গ তালিকাটিও দিতে ব্যর্থ হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

Khaleda Zia’s janaza held

The namaz-e-janaza of BNP Chairperson Khaleda Zia was held at the South Plaza of the Jatiya Sangsad Bhaban today

6h ago