‘দ্বিতীয় কে হয়েছে তা কেউই মনে রাখে না’

এবারের বিপিএল চলাকালীন মাকে হারিয়েছেন খালেদ আহমেদ। সীমাহীন সেই বেদনা বুকের ভেতর জমে থাকলেও প্রকাশ্যে কোনো ছাপ পড়তে দেননি তিনি। ৩২ বছর বয়সী ডানহাতি পেসার নীরবে পারফর্ম করে চলেছেন দারুণভাবে। ১২ ম্যাচে ১৯ উইকেট নিয়ে এখন পর্যন্ত চিটাগং কিংসের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি তিনি।

বুধবার মিরপুরে বিপিএলের দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে চিটাগংয়ের বোলিং আক্রমণকে নেতৃত্ব দেবেন খালেদ। তার আগে দ্য ডেইলি স্টারের ক্রীড়া প্রতিবেদক আবদুল্লাহ আল মেহেদীর সঙ্গে তিনি বিপিএল ও চিটাগং ফ্র্যাঞ্চাইজির হয়ে খেলার অভিজ্ঞতাসহ আরও অনেক ব্যাপারে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো:

দ্য ডেইলি স্টার: এবারের বিপিএলে নিজের পথচলাকে কীভাবে বর্ণনা করবেন?

খালেদ আহমেদ: যাত্রাটা শুরু হয়েছিল মূলত এনসিএল (ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির টুর্নামেন্ট) দিয়ে। যেহেতু বাংলাদেশ জাতীয় দলের সবশেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে আমাকে নেওয়া হয়নি, তাই আমি ঘরোয়া খেলায় ভালো করার লক্ষ্য স্থির করেছিলাম। লক্ষ্য ছিল (এনসিএলে সিলেট বিভাগের হয়ে) চ্যাম্পিয়ন হওয়া, যা আমরা অর্জন করেছি।

এরপর এনসিএল টি-টোয়েন্টি আয়োজনের জন্যও আমি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে (বিসিবি) ধন্যবাদ জানাই। আমি সেখানে এমন কিছু ডেলিভারির অনুশীলন করেছি, যা পরে বিপিএলে ব্যবহার করেছি। যদি আমি শুরুতে ঘরোয়া ক্রিকেটে এগুলো নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা না করতাম, তাহলে সেই ধরনের ডেলিভারিগুলো হয়তো বিপিএলে করতাম না। এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্টটি ভালো কেটেছে আমাদের। তবে আমি চিটাগংকে ফাইনালে নিয়ে যেতে চাই এবং হয়তো তখন আমি সন্তুষ্ট বোধ করব।

স্টার: এই বিপিএলে নামার আগে আপনার লক্ষ্য কী ছিল?

খালেদ: আমার লক্ষ্য ছিল বোলিংয়ে মিতব্যয়ী হওয়া। সবাই সেরা হতে চায়। কারণ, দ্বিতীয় কে হয়েছে তা কেউই মনে রাখে না। (দুর্বার রাজশাহীর) তাসকিন (আহমেদ ২৫ উইকেট নিয়ে এখন বিপিএলের) সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি এবং সবাই তাকেই মনে রাখবে। টুর্নামেন্টজুড়ে সে আমার দেখা সেরা কিছু ডেলিভারি করেছে। যদি ফিল্ডাররা ক্যাচ না ফেলত, তাহলে সে আরও বেশি উইকেট পেত।

একইভাবে, আমিও এক নম্বর হওয়ার দিকে মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করেছি। তবে হয়তো উইকেট শিকারের দিক থেকে আমি তাসকিনের সঙ্গে তাল মেলাতে পারব না। তবে বলা যায় না, সেও তো (ঢাকা ক্যাপিটালসের বিপক্ষে) একটি ম্যাচে ৭ উইকেট নিয়েছিল।

স্টার: অস্ট্রেলিয়ার সাবেক পেসার শন টেইট বর্তমানে চিটাগংয়ের প্রধান কোচ। তার সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন?

খালেদ: আমি টেইট ও (পাকিস্তানের সাবেক পেসার) শোয়েব আখতারকে দেখে বড় হয়েছি। আমি টেইটকে এটাও বলেছি যে, ছোটবেলা থেকেই তিনি আমার প্রিয়। আমি যখন (বাংলাদেশ দলের সঙ্গে) ভারত সফরে ছিলাম, তখন তিনি আমাকে মুঠোফোনে বার্তা পাঠিয়েছিলেন। বলেছিলেন, তিনি আমাকে (প্লেয়ার্স ড্রাফট থেকে) বেছে নিয়েছেন এবং আমার খেলা দেখেছেন।

তিনি আমাকে অনুপ্রাণিত করেন। আমি জানতাম আমি ভালো করছি। তবে কীভাবে সেরা হতে হয় আমি সেটা তাকে জিজ্ঞাসা করেছি। আমি ইয়র্কার নিয়ে কাজ করেছি এবং এখন আরও আত্মবিশ্বাসী। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, কোনো নির্দিষ্ট ব্যাটারকে কী ধরনের বল করতে হবে তা আমি বুঝতে পেরেছি। টেইট সবকিছু সহজ রাখার কথা বলেছেন। যেমন, তিনি একবার এটা বলেছেন যে, যদি বাউন্সারে কাজ হয়, তবে সেটা চালিয়ে যেতে হবে। যদি আপনি অনেক কিছু চেষ্টা করেন, তাহলে আপনার মনোযোগ কমে যাবে।

স্টার: মাকে হারানোর শোক কীভাবে কাটিয়ে উঠছেন?

খালেদ: সেদিন চট্টগ্রামে (খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে) ম্যাচের পর যখন আমি ফোন ধরলাম, তখন জানতে পারলাম যে, মা আর নেই। আমি হোটেলে ফিরে গোটা দলকে জানালাম এবং মালিকসহ সবাই তখন আমার কাছে এসেছিল। তারা আমাকে বাড়িতে যেতে বলেছিল। অনেক রাত হয়ে যাওয়ায় বিমানের ফ্লাইট বা যাতায়াতের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। দল তখন আমার সিলেটে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছিল।

যদি আমি বাড়িতে বসে থাকতাম, তাহলে আমি এখনও শোকগ্রস্ত থাকতাম। আমার বন্ধুবান্ধব ও ভাইয়েরা পরামর্শ দিয়েছিল যে, আমার দলে ফিরে যাওয়া উচিত।

এখন যেখানেই থাকুক না কেন, আমার মা সব সময় আমাকে দেখছে। আমি যেখানেই যাই না কেন, সব সময় প্রার্থনা করি এবং তাকে স্মরণ করি।

স্টার: এবারের বিপিএলে খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক না পাওয়ার ইস্যু কি আপনার ওপর কোনো প্রভাব ফেলেছে?

খালেদ: আসলে, আমি এই বিষয়ে কথা বলতে পছন্দ করি না। টুর্নামেন্টে খেলার সময় আমার মনোযোগ ক্রিকেটের ওপর থাকে। আর সেখানেই আমি আমার মনোযোগ রাখতে পছন্দ করি। অবশ্যই, টিম ম্যানেজমেন্ট যথা সময়ে সবাইকে বেতন দেওয়ার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছে।

Comments

The Daily Star  | English

Fire at building in Mirpur’s Kalshi under control

Seven fire engines brought the fire under control at 12:05am today

2h ago