‘চবি ক্যাম্পাস থেকে চারুকলা বিভাগ শহরে নেওয়ার সিদ্ধান্ত ভুল ছিল’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। ছবি: সংগৃহীত

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, 'চারুকলা বিভাগকে চবি ক্যাম্পাস থেকে শহরে পাঠিয়ে দেওয়া একটা ভুল সিদ্ধান্ত ছিল।'

আজ শুক্রবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সংস্কৃতির চর্চা আরও বাড়ানো প্রয়োজন উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, 'আমি এখানে আসার সময় একটি ছোট্ট মানববন্ধন দেখেছি, চারুকলা ডিপার্টমেন্টকে এখানে ফিরিয়ে আনার জন্য। আমি মনে করি চারুকলা ডিপার্টমেন্টকে একেবারে এই ক্যাম্পাস থেকে সবকিছু গুটিয়ে শহরে পাঠিয়ে দেওয়া একটা ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। এটি আমার ব্যক্তিগত অভিমত।'

তিনি বলেন, 'আমি উপাচার্যের সঙ্গে আলাপ করেছি অন্তত মাস্টার্স ডিপার্টমেন্টটা আপাতত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে চলে আসতে পারে এবং অনার্স ডিপার্টমেন্টটা শহরের ক্যাম্পাসে থাকতে পারে। এখানে অবকাঠামোগত কিছু সমস্যা আছে। সেটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দেখবে।'

মন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, 'যদি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে চারুকলা না থাকে তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় বর্ণময় কীভাবে হবে। শিল্প-সংস্কৃতির অন্যতম প্রধান অঙ্গ চারুকলা। আমি এর পক্ষে সমর্থন জানাচ্ছি।'

'এই বিশ্ববিদ্যালয় আরও বর্ণময় হোক, জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে বিশ্বাঙ্গনেও পরিচিত লাভ করুক। জ্ঞান-বিজ্ঞানের পাশাপাশি সংস্কৃতি চর্চারও একটি পাদপীঠ হবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়,' যোগ করেন তিনি।

অনুষ্ঠানের পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, 'বিএনপির উস্কানিমূলক বক্তব্যের পরও আমাদের দলকে সংযত আচরণ করার জন্য আমরা নির্দেশ দিয়েছি। কিন্তু ঢাকা শহর কিংবা দেশের অন্য কোনো জায়গায় বিশৃঙ্খলা করলে জনগণই বিএনপিকে প্রতিহত করবে।'

তিনি বলেন, '২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা বিএনপি সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় হয়েছে। শেখ হেলালের জনসভায় হামলা করে বেশ কয়েকজন মানুষকে হত্যা করেছিল তারা। আহসান উল্লাহ মাস্টার, ড. এস এম কিবরিয়া এবং সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের জনসভাসহ আমাদের সভা-সমাবেশের ওপর বারবার বিএনপি বোমা ও গ্রেনেড হামলা চালিয়েছে।'

'কিন্তু আমরা যখন ক্ষমতায়, বিএনপির সমাবেশে একটি পটকাও ফোটেনি। তারা যেন সুন্দরভাবে সমাবেশ করতে পারে, সে ব্যবস্থাই সরকার সবসময় নিয়েছে,' যোগ করেন তিনি।

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, 'আমরা বিএনপিকে কখনো দমন করার নীতি অবলম্বন করিনি। বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখন আমাদের কোনো সমাবেশ করতে দেওয়া হতো না। আমাদের দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দুইপাশে কাঁটাতারের বেড়া থাকত। সেই বেড়ার বাইরে আমরা যেতে পারতাম না।'

'হেফাজতের মতো বিএনপিকে দমন করা যাবে না' বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের এমন বক্তব্যের বিষয়ে তার মন্তব্য জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

এর আগে মূল অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার সভাপতিত্ব করেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন। 

বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের অনুষ্ঠানে মন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, 'একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপ্তি এবং সুনাম নির্ভর করে কয়েকটি বিষয়ের ওপর। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ শুধু পাঠদান ও ডিগ্রি প্রদান নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ হচ্ছে জ্ঞানের চর্চা করা এবং সেই জ্ঞানের চর্চার সঙ্গে বিশ্বাঙ্গনের যোগসূত্র ঘটানো।'

তিনি বলেন, 'চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৭ বছরের পথ চলার পর আজকে ভাবতে হবে জ্ঞানচর্চার সঙ্গে বিশ্বাঙ্গনের সংযোগ কতটুকু করতে পেরেছে এবং আর কতটুকু করা প্রয়োজন। বিশ্বময় যদি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ছড়িয়ে দিতে হয়, তাহলে কয়েকটি কার্যক্রম গ্রহণ করা অত্যন্ত প্রয়োজন।'

তিনি আরও বলেন, 'একটি বাৎসরিক ক্যালেন্ডার করে এখানে আন্তর্জাতিক সেমিনার-সিম্পোজিয়ামের আয়োজন করা। সেখানে কোনোটা ন্যাশনাল এবং কোনোটা ইন্টারন্যাশনাল সেমিনার-সিম্পোজিয়াম হবে সেটা ঠিক করা। তাহলে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়বে।'

মন্ত্রী বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি মানসম্পন্ন জার্নাল যদি নিয়মিত প্রকাশ পায় এবং সেই জার্নালে শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নয় আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডল থেকে সেখানে গবেষণালব্ধ আর্টিকেল ছাপানো হয় এবং সে জার্নালটা যদি আন্তর্জাতিক মানের প্রচারণার উদ্যোগ নেওয়া হয়, তাহলে সেটা বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্ব এবং মর্যাদাটাকে বাড়াবে। বিশ্বাঙ্গনের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংযোগ হবে।'

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বলেন, 'দুঃখজনক হলেও সত্য এখন অবকাঠামোগত উন্নয়নের দিকে আমাদের সবার নজর বেশি। অবকাঠামোগত উন্নয়ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন নয়। অবশ্যই অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রয়োজন রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৃত উন্নয়ন হচ্ছে পাঠদান ও জ্ঞানের চর্চার উন্নয়ন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বহুমাত্রিক জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক চর্চার উন্নয়ন। সেটির মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন নির্ভর করে।'

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক বেনু কুমার দে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মূখ্য সচিব আবদুল করিম, সাধারণ সম্পাদক ও চিটাগাং চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম, চট্টগ্রাম মহানগর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোজাফফর আহমদ, চাকসুর সাবেক ভিপি মাজহারুল হক শাহ ও নাজিম উদ্দিন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভুঁইয়া।

Comments

The Daily Star  | English

BNP sticks to demand for polls by December

In a meeting with Chief Adviser Prof Muhammad Yunus last night, the BNP restated its demands that the next general election be held by December and the government immediately announce a roadmap to that end.

3h ago