শিক্ষাঙ্গনে জাতীয় রাজনীতি থাকার প্রশ্নে বৃহত্তর সামাজিক ঐকমত্য দরকার: ঢাবি উপাচার্য

অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান। ছবি: ইব্রাহিম খলিল ইবু/স্টার

শিক্ষাঙ্গনে জাতীয় রাজনীতি থাকবে কি না, এই প্রশ্ন নিয়ে বৃহত্তর সামাজিক ঐকমত্য দরকার বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান।

আজ বুধবার নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এই মন্তব্য করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতির ব্যাপারে পক্ষে-বিপক্ষে দুই ধরনের মতামতই আছে। সেক্ষেত্রে প্রশাসন কী করবে জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ে মত প্রকাশের যে ব্যবস্থাগুলো আছে, আমরা সেটাকে সম্মান করি। এগুলোকে কার্যকর করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা করব। ছাত্র-শিক্ষকদের মত প্রকাশের ব্যবস্থা থাকার সঙ্গে আমি পুরোপুরি একমত। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, শিক্ষায়তনে রাজনীতি করতে হলে সেটা হবে শিক্ষাসংশ্লিষ্ট রাজনীতি। আমি কাগজ-কলমের কথা বলব, পাঠ্যক্রমের কথা বলব, সমাজের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় ও ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক নিয়ে কথা বলব। ছাত্ররাজনীতির মূল এলাকা হবে এটি।'

'শিক্ষাঙ্গনে জাতীয় রাজনীতি থাকবে কি না, এই প্রশ্ন নিয়ে বৃহত্তর সামাজিক ঐকমত্য দরকার, একটি বৃহত্তর সামাজিক চুক্তির দরকার। এই বিষয়গুলো প্রতিষ্ঠানের নিজে থেকে করা কঠিন।'

শিক্ষকদের দলীয় নিয়োগ ও শিক্ষক রাজনীতি প্রসঙ্গে উপাচার্য বলেন, 'এটি একটি বড়দাগের বিষয়। এখন আসলে চেষ্টা করব ইমিডিয়েট ক্রাইসিস মোকাবিলার। বিষয়টি যদিও গুরুত্বপূর্ণ। বৈষম্যবিরোধী কথার মধ্যেই দলীয়করণের বিরুদ্ধ সুর আছে। নিয়োগে দলীয়করণ বড়দাগে বৈষম্যবিরোধী আদর্শের বিরুদ্ধে যায়। অংশীজনরা আমার সঙ্গে যদি একমত না হন বা আমাদের সমর্থন না করেন, তাহলে এ ধরনের এজেন্ডা নিয়ে কাজ করা আমাদের জন্য কঠিন হবে।'

'আমাদের শিক্ষা উপদেষ্টার কিছু মতামত আছে। আবেগের বিষয় আছে, পদ্ধতিগত বিষয়, আইনগত বিষয় এর সঙ্গে জড়িত', যোগ করেন তিনি।

'শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনা কঠিন চ্যালেঞ্জ হবে' উল্লেখ করে অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, 'এর জন্য সবার সহযোগিতা লাগবে। অংশীজনদের অকুণ্ঠ সমর্থন লাগবে এবং নেতৃত্বের লেগে থাকার মানসিকতা লাগবে। রাতারাতি ফল হবে না। সময় দিয়ে চেষ্টা করতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রের একটি মৌলিক প্রতিষ্ঠান। এর শেকড় সমাজের গভীরে প্রোথিত। সবকিছু সামলে নিতে বৃহত্তর সামাজিক ঐক্যমত্য লাগবে।'

তিনি বলেন, 'আমার দরজা খোলা। যেকোনো মানুষ আমার সঙ্গে কথা বলতে পারবেন। সবাই মতামত দেবেন। আমি কারও মতামতে হয়তো একমত হব, কোনো মতামতে হয়তো হবো না। আমি যেহেতু প্রতিষ্ঠানের সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলতে চাই, দায়িত্ব নিয়েছি সবার কথা শোনার, তাই আমি দরজা খোলা রাখতে চাই যেকোনো ধরনের পরামর্শের জন্য। পরামর্শ যদি নাও মানি, তার কারণ বলব। কিন্তু, দলমত নির্বিশেষে এই নাজুক সময়ে সবার সঙ্গে সংলাপ চালিয়ে যাওয়া খুব প্রয়োজন, সংলাপ থামিয়ে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।'

আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম পূর্ণ মাত্রায় চালু করার ব্যাপারেও আশা প্রকাশ করেন নবনিযুক্ত উপাচার্য।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'আমরা এই মুহূর্তে একশভাগ নিখুঁত পরিস্থিতির জন্য অপেক্ষা করছি না। যতটুকু পারি শুরু করব। স্মরণকালে এমন পরিস্থিতি কখনো তৈরি হয়নি।'

নিজের অগ্রাধিকারের ব্যাপারে অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ বলেন, 'আমার টিম এক সপ্তাহের মধ্যে পূর্ণ মাত্রায় কাজ শুরু করতে পারবে বলে আশা করছে। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে আমরা ক্রমাগত অংশীজনদের সঙ্গে কথা বলে যাচ্ছি। সবার সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়কে চালু করার চেষ্টা করছি। অর্থাৎ আবাসিক হল থেকে শুরু করে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম চালু করা আমাদের প্রথম লক্ষ্য।'

উপাচার্য বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক যায়গায় অচলাবস্থা আছে। আমি সব মহলে কথা বলার চেষ্টা করছি। এটি সর্বজনীন বিশ্ববিদ্যালয়। এটি আমি খুব আন্তরিকভাবে মনে করি। আমার টিম এখনো পুরোপুরি কার্যভার নেননি। তাদের সহযোগিতার জন্য আমি অপেক্ষা করছি।'

'শিক্ষার্থীরা দীর্ঘ সময় ধরে শিক্ষার পরিবেশ নিয়ে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন। তাদের যুক্তিসঙ্গত কিছু পরামর্শও আছে। কোনোটা ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের সঙ্গে জড়িত। কোনোটা অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতার সঙ্গে জড়িত। সবাই সাধারণভাবে যেসব সমস্যার কথা বলছেন, আমরা সেগুলোকে অগ্রাধিকার দেবো।'

গবেষণা বিষয়ে অধ্যাপক নিয়াজ বলেন, 'এরপরের অগ্রাধিকার হবে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব অসাধারণ গবেষক আছেন তাদের সহযোগিতা করা। এটা আমার খুব আগ্রহের জায়গা। আমাদের আগের প্রশাসনও র‍্যাংকিংয়ে এগোনোর জন্য কিছু উদ্যোগ নিয়েছিল। তারা যে ভালো কাজগুলো করেছিলেন, এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হবে।'

'আমাদের ছাত্রদের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে খাপ খাওয়াতে বিরাট চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। এর শারীরিক ও মানসিক দুই রকম দিক আছে। তাদেরকে ট্রমা থেকে বের করতে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হবে। আমি সবার পরামর্শ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করতে থাকব, এটা আমার অঙ্গীকার', যোগ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

BNP opposes RPO amendment requiring alliance parties to use own symbols

Salahuddin says the change will discourage smaller parties from joining coalitions

41m ago