ডাকসু নির্বাচন

‘ডাকসুকে রাজনৈতিক দলের হস্তক্ষেপের বাইরে শুধু শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠা করব’

শামীম হোসেন। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদকে (ডাকসু) যেকোনো রাজনৈতিক দলের হস্তক্ষেপের বাইরে শুধু শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতেই সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী শামীম হোসেন।

দ্য ডেইলি স্টারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী শামীম বলেন, 'স্বাধীনতার পর ছাত্ররাজনীতির নামে এখানে হত্যার রাজনীতি হয়েছে। ১৯৯০ সালের পর ডাকসুকে জাদুঘরে পাঠানো হয়েছে। শিক্ষার্থীদের কণ্ঠ বন্ধ করতেই এটা করা হয়েছে। কারণ ডাকসু সবসময় সরকারের সঙ্গে টাসল (দ্বান্দ্বিক অবস্থান) তৈরি করে।'

'রাজনৈতিক দলগুলো চায়, আমাদের ভাগ্য যেন তাদের হাতেই থাকে, বিশ্ববিদ্যালয় যেন তাদের পলিটিক্যাল সেটেলমেন্টের মধ্যেই আটকে থাকে। কিন্তু, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের পর আমাদের হাতে এখন সুযোগ এসেছে এ বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলার। আমার মনে হয়েছে রাষ্ট্রের সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেরামতের প্রয়োজন রয়েছে। একজন নির্বাচিত শিক্ষার্থী প্রতিনিধি হিসেবে আমি এ কাজটা করতে চাই,' বলেন এই ভিপি প্রার্থী।

শামীম মনে করেন, সিনেমা দেখে বা গল্প শুনে যে স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ের কল্পনা করেছিলেন, ভর্তির পর পুরো ভিন্ন অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে গেছেন তিনি।

বলেন, 'ক্লাসে মনোযোগের বদলে প্রায়ই ঘুম আসে, লাইব্রেরি সমৃদ্ধ হলেও প্রত্যাশিত বই খুঁজে পাওয়া খুবই কঠিন। আধুনিক প্রযুক্তির যুগেও শিক্ষার্থীদের এখনো ম্যানুয়ালি ব্যাংকে গিয়ে ফি জমা দিতে হয়, স্লিপ ফটোকপি করে জমা দিতে হয়, এমনকি স্লিপ হারানোর ঘটনাও ঘটে। অর্থাৎ, প্রযুক্তিগত বৈশ্বিক উন্নতির পরও এখানকার প্রশাসনিক ব্যবস্থা সময়ের চেয়ে অনেক পিছিয়ে।'

তার মতে, 'বিশ্ববিদ্যালয় ধীরে ধীরে রাজনৈতিক দলের প্রক্সি সংগঠনের হাতে চলে গেছে। যোগ্যতা নয়, রাজনৈতিক পরিচয়ই শিক্ষক বা প্রশাসনের নিয়োগের প্রধান মানদণ্ড হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মৌলিক সমস্যা নিয়ে কোনো দল কাজ করেনি। আবাসন সংকট, খাবারের মান, ক্যান্টিনের অবস্থা বা শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্নগুলো এড়িয়ে যায় প্রশাসন।'

'দেশের যেকোনো গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সামনের সারিতে থাকা ঢাবি শিক্ষার্থীদের রাতে ঘুমাতে হয় বারান্দায়, গণরুমে বা ছাদে—তাও ছারপোকার কামড় খেয়ে। অথচ নতুন হল নির্মাণের বিষয়ে কোনো কথা নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব জমি উদ্ধারের বিষয়েও কারও কোনো মাথাব্যথা নেই।'

আবাসন, শিক্ষা, খাদ্য, নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন সংকটের পেছনে জবাবদিহির অভাবকে দায়ী করে শামীম বলেন, 'এখানে প্রশাসনের কারও কোনো জবাবদিহির ব্যবস্থা নেই। শিক্ষকদের সিন্ডিকেট রয়েছে, কর্মচারীদেরও রয়েছে। আমার মনে হয়েছে জবাবদিহির পরিবেশ তৈরির জন্য রিফর্মেশনে যেতে হবে। ভিপি নির্বাচিত হলে এক বছরেই সব হয়ত করতে পারব না, কিন্তু উদাহরণ তৈরি করতে পার। আর এর ধারাবাহিকতা রক্ষায় ডাকসু নির্বাচনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যালেন্ডারে নিয়ে আসব। নির্বাচিত শিক্ষার্থী প্রতিনিধি ছাড়া সিনেট বসতে দেবো না।'

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেক শিক্ষার্থীর নেতৃত্ব দেওয়ার সক্ষমতা আছে বলে মনে করেন শামীম। আর এমন চিন্তার জায়গা থেকেই তিনি কোনো প্যানেলে না গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।

তিনি বলেন, 'প্যানেলে যেতে চেয়েছিলাম, কিন্তু দেখেছি যে আমি যেটা করতে চাই বা বলতে চাই, প্যানেলে থাকলে হয়ত সবটা পারতাম না।'

তিনি জানান, নির্বাচিত হলে একটি ওয়েবসাইট ও মিডিয়া সেল গঠন করবেন যেখানে শিক্ষার্থীরা তাদের অভিযোগ জানাতে পারবে। একই সঙ্গে হলে হলে সাব-কমিটি গঠনের মাধ্যমে কার্যকর নেটওয়ার্ক তৈরি করা হবে।

'অক্সফোর্ড-ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদে তো শিক্ষার্থীরা তাদের যোগ্যতা দিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। আমাকেও যদি শিক্ষার্থীরা যোগ্য মনে করেন, আমার ভাবনার সঙ্গে কানেক্ট করতে পারেন, তাহলে আমি মনে করি তারা আমাকে ভোট দেবেন,' বলেন এই স্বতন্ত্র প্রার্থী।

Comments

The Daily Star  | English
Foreign banks profits vs social spending in Bangladesh

Foreign banks top profits, trail in social spending

CSR spending by multinational lenders was just 0.56% last year, compared with 9% by Islamic banks

12h ago