ডাকসু নির্বাচন: জবাবদিহির জায়গা তৈরি করতে চান নবীন প্রার্থীরা

ভোটের আগের দিন প্রচার-প্রচারণায় নিষেধাজ্ঞা থাকায় মধুর ক্যান্টিন ও ডাকসু এলাকায় নেই আগের মতো ভিড়। ছবি: স্টার

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে আগামীকাল মঙ্গলবার। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এ নির্বাচনে ডাকসুর ২৮টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মোট ৪৭১ জন প্রার্থী। 

ডাকসুর সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে লড়ছেন ৪৫ জন প্রার্থী, তাদের মধ্যে ৫ জন নারী। সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১৯ জন, আর সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে আছেন ২৫ জন প্রার্থী। 

সদস্য পদে মোট ২১৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, তাদের মধ্যে নারী প্রার্থী ২৩ জন।

গতকাল রোববার আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়েছে প্রার্থীদের। ভিন্ন ভিন্ন ইশতেহার আর প্রচারণায় আলোচনায় এসেছেন অনেক প্রার্থী। 

এবারের ডাকসুতে অপেক্ষাকৃত নবীন শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ চোখে পড়ার মতো। ব্যতিক্রমধর্মী প্রচারণার পাশাপাশি তারা আলোচনায় এসেছেন অনন্য ও ব্যতিক্রমী ইশতেহারের মাধ্যমে।

এর মধ্যে যেমন আছেন ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের, তেমনি আছে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীও। নবীন শিক্ষার্থীরা সাধারণ সদস্যপদ ছাড়াও স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক, ক্রীড়া সম্পাদক, সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদকসহ বিভিন্ন পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।    

ডাকসু কমিটির জবাবদিহিতা, প্রেসার গ্রুপ হিসেবে কাজ করা, ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণসহ বিভিন্ন ইশতেহার দিয়েছেন নবীন প্রার্থীরা। তাদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেছে দ্য ডেইলি স্টার।

২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মো. সামশুদ্দৌজা নবাব স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করছেন কেন্দ্রীয় সদস্য পদে। 

নির্বাচনী ইশতেহার সম্পর্কে তিনি বলেছেন, 'আমি চাই ডাকসুতে একটি জবাবদিহিতার জায়গা তৈরি করতে। ডাকসুতে ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় রাখতে।'

তিনি আরও বলেন, 'যেহেতু আমি একজন সাংবাদিক ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিদের মধ্যে আমি একা নির্বাচন করছি, আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, শিক্ষার্থীদের ও ডাকসু কমিটির মাঝে একটা সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করতে চাই। ডাকসুর বিষয়ে শিক্ষার্থীদের জানাতে চাই, আবার শিক্ষার্থীদের কথা ডাকসুর কাছে তুলে ধরতে চাই।'

স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেল থেকে সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী অর্ক বড়ুয়া। তিনি গুরুত্ব দিচ্ছেন ক্যাম্পাসের নিরাপত্তায়। 

নারী শিক্ষার্থীদের চলাফেরার নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং অপরাধী শনাক্ত করতে পর্যাপ্ত সিসিটিভি ক্যামেরা ও সড়কবাতি স্থাপনের কাজ করবেন বলে জানান।

অর্ক বলেন, 'চাইলে অনেক অবাস্তব ইশতেহার দেওয়া যেত, কিন্তু ডাকসু সদস্যের ক্ষমতাটা অত বেশি না, তাই আমি তেমন কিছু বলিনি ইশতেহারে।'

ডাকসুতে নির্বাচিত হয়ে প্রেসার গ্রুপ হয়ে কাজ করতে চান ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী মো. হাসীব আল হাসান খান। তিনি কেন্দ্রীয় নির্বাচনে স্বতন্ত্র সদস্য পদে নির্বাচন করছেন। 

হাসীব আল হাসান খানের মতে, শিক্ষার্থীদের মৌলিক অধিকার তথা আবাসন, উন্নত খাদ্য ও ন্যূনতম আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। 

এর কারণ হিসেবে ডাকসু নেতৃত্বের শিক্ষার্থীদের প্রতি দায়িত্ব 'ভুলে গিয়ে দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়ন ও রাজনৈতিক স্ট্যান্ডবাজি'কে দায়ী করেন তিনি। 

হাসীব বলেন, 'বিগত সময়ে ডাকসুর প্রকৃত সুবিধাভোগী হয়েছিল ডাকসু নেতাদের ঘনিষ্টজনরা। অথচ সাধারণ শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হয়েছেন। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আমি নির্বাচিত হয়ে ফোরামে বসলে এই বিশ্বাসঘাতকতার সুযোগ আর কাউকে দেবো না।'

ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০২২-২৩ সেশনের শিক্ষার্থী এস এম তামিম বিন ইউসুফ অপূর্ব লড়ছেন কেন্দ্রীয় স্বতন্ত্র সদস্য পদে। তার নির্বাচনী ইশতেহারগুলোর মধ্যে একটি হলো দূর্গাপূজার ছুটি বাড়ানো। 

অপূর্ব বলেন, 'আমি যদি নির্বাচিত হই তবে আমার প্রথম কাজ হবে আসন্ন দুর্গাপূজায় ৪ দিনের ছুটির ব্যবস্থা করা। ক্যাম্পাস  লাইফের শুরু থেকেই দেখতে পাই অনেক হিন্দু ধর্মাবলম্বী বন্ধুদের তাদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবটিতে ক্যাম্পাসে কাটাতে হয়, কারণ ছুটি মাত্র ২ দিন।'

২০২২-২৩ সেশনের আরেক শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম রনিও স্বতন্ত্রভাবে কেন্দ্রীয় সদস্য প্রার্থী হয়ে লড়ছেন। 

তিনিও ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করতে চান। রনি বলেন, 'ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত যানবাহনের কারণে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয় না। আমি এই সমস্যা নিরসনে কাজ করতে চাই। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের সার্বিক বিষয় নিয়েও কাজ করতে চাই।'

Comments

The Daily Star  | English
Dhaka city urban development problems

Dhaka on a perilous path: Lax rules, weak oversight fuel unplanned expansion

Near-unregulated vertical expansion put immense pressure on utilities and infrastructure, worsened traffic congestion, compromised fire safety

15h ago