‘হাড় নেই, চাপ দেবেন না’ সেই শিক্ষার্থীকে ‘সুস্থ’ দেখিয়ে ফটোসেশনের অভিযোগ

ফটোসেশনের ছবি | সংগৃহীত

স্থানীয়দের সঙ্গে সংঘর্ষে গুরুতর আহত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থী মামুন মিয়াকে 'জোর করে হাঁটানো ও ছবি-ভিডিও ধারণের' অভিযোগ এনেছেন তার সহপাঠী ও স্বজনরা।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শনিবার রাতে ছড়িয়ে যাওয়া ছবি-ভিডিওতে দেখা যায়, কারও কাঁধে ভর দিয়ে মামুনকে হাঁটানো হচ্ছে।

ছবি ও ভিডিওতে দেখা যায়, রাঙ্গামাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আতিয়ার রহমান ও কয়েকজন কর্মকর্তা সেখানে আছেন।

আতিয়ার রহমান তার ফেসবুকে ছবি ও ভিডিও শেয়ার দিয়ে লিখেছেন, 'মামুন হাঁটছেন, ছোট ছোট করে কথা বলছেন।'

ঘটনাটি শনিবার বিকেল ৪টা ১০ মিনিট থেকে ৪টা ৩০ মিনিটের মধ্যে ঘটে।

তবে, এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মামুনের পরিবার ও সহপাঠীরা।

সহপাঠীদের দাবি, তারা মূলত ফটোসেশনের উদ্দেশ্যে হাসপাতালে গিয়েছিলেন।

স্বজনদের অভিযোগ, মামুন এখনো কাউকে চিনতে পারছেন না এবং মাথায় প্রচণ্ড ব্যথা হলে চিৎকার করছেন। এমন অবস্থায় তাকে হাঁটানো ও ছবি তোলা 'অমানবিক' বলে মন্তব্য করেছেন তারা।

জানতে চাইলে আতিয়ার রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি সেখানে ছবি বা ভিডিও করার জন্য যাইনি। আহত ও চিকিৎসাধীন শিক্ষার্থীদের দেখতে গিয়েছিলাম। আমি ডাক্তার নই, তাই রোগীকে হাঁটানোর বিষয়ে কিছু বলার অধিকার নেই আমার।'

ছবি: সংগৃহীত

তিনি বলেন, 'সেখানে আমি ছবি তোলার পরিকল্পনা নিয়ে যাইনি। যাওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই চিকিৎসক এসে মামুনের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং হাঁটাহাঁটি করার পরামর্শ দিয়ে নার্সদের সহযোগিতা করতে বললেন। আমি কোনো নির্দেশনা দেইনি, আমার সে অধিকারও নেই।'

'আমার সঙ্গে থাকা কয়েকজন ছবি তুলতে চাইলে চিকিৎসক সম্মতি দেন। তখন ছবি তোলা হয়। মামুনকে সুস্থ দেখে আমার মনে হয়েছে, এটি ফেসবুকে শেয়ার করলে সবাই খুশি হবেন, কারণ তাকে নিয়ে অনেকেই উদ্বিগ্ন,' যোগ করেন তিনি।

গত ৩১ আগস্ট চবি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষে মামুন গুরুতর আহত হন। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তার মাথায় গুরুতর জখম হয় এবং সেদিন রাতেই অস্ত্রোপচার করা হয়। গত বুধবার পর্যন্ত তিনি আইসিইউতে ছিলেন। পরে তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়, যেখানে দর্শনার্থীদের প্রবেশ সীমিত রাখা হয়েছে।

মামুনের বন্ধু ও সহপাঠী রাসেল রানা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মামুনের মাথার খুলি এখনো সংরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। কিছুটা উন্নতি হলেও তিনি কাউকে চিনতে পারছেন না। ঘটনার আগের রাতে তিনি সারারাত ব্যথায় চিৎকার করেছেন। হাত দিয়ে ব্যান্ডেজ খুলে ফেলতে চাইলে চিকিৎসকের পরামর্শে হাত কাপড় দিয়ে বেঁধে রাখা হয়।'

তিনি আরও বলেন, 'সকালে ডাক্তার বলেছিলেন কাউকে রুমে ঢুকতে দেওয়া হবে না। তাহলে কীভাবে ফটোসেশনের অনুমতি দিলেন, তা আমার বোধগম্য নয়। ১৫-২০ মিনিট ধরে ফটোসেশন চলেছে, দেখে মনে হয়েছে তারা শুধুই ছবি তুলতে এসেছেন। একবার বসিয়ে ছবি তোলা হয়েছে, আবার হাঁটিয়েও ছবি ও ভিডিও করা হয়েছে।'

মামুনের বড় ভাই ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মাসুদ রানা রোববার সকালে পার্কভিউ হাসপাতালে সাংবাদিকদের বলেন, 'আমার ভাইয়ের মাথার খুলি এখনো জোড়া লাগেনি। অথচ বলা হচ্ছে, সে সুস্থ। তাকে হাঁটানো হয়েছে, ভিডিও করা হয়েছে, অথচ সে কাউকে চিনতে পারছে না। এটা দেখে আমার মনটা ভেঙে গেছে।'

যোগাযোগ করা হলে পার্কভিউ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ টি এম রেজাউল করিম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এটি রুটিন কাজ। রোগীর আত্মবিশ্বাস বাড়াতে হাঁটানো হয়। তখনই ভিসি স্যার ছবিটি তুলেছেন। তবে এভাবে ছবি তোলা ঠিক হয়নি। ভিসি স্যার একজন সম্মানিত মানুষ, তাই বাধা দেওয়া হয়নি।'

তার দাবি, 'রোগীর দ্রুত সুস্থতার জন্য এটি জরুরি ছিল।'

উল্লেখ্য, চবি সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মামুন মিয়ার অস্ত্রোপচারের সময় তার খুলির একটি অংশ সরিয়ে ফ্রিজে সংরক্ষণ করা হয়েছিল। তখন তার মাথায় ব্যান্ডেজে লেখা ছিল, 'হাড় নেই, চাপ দেবেন না।'

চট্টগ্রাম শহরের পার্কভিউ হাসপাতালের ব্যবস্থাপক জিয়াউদ্দিন গত বৃহস্পতিবার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চার দিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর মামুনের জ্ঞান ফিরেছে। ডাক্তাররা এক থেকে দুই মাসের মধ্যে তার খুলির হাড় পুনরায় সংযুক্ত করতে পারেন।'

Comments

The Daily Star  | English

Hasina can’t evade responsibility for Khaleda Zia’s death: Nazrul

In 2018, Khaleda walked into jail, but came out seriously ill, he says

1h ago