প্রশাসনের আশ্বাসে ৫২ ঘণ্টা পর অনশন ভাঙলেন চবি শিক্ষার্থীরা

প্রশাসনের আশ্বাসে দীর্ঘ ৫২ ঘণ্টা পর অনশন ভেঙেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থীরা।
প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগসহ সাত দফা দাবিতে 'অধিকার সচেতন শিক্ষার্থীবৃন্দ' ব্যানারে তারা আমরণ অনশন করছিলেন।
আজ শুক্রবার বিকেল ৪টার দিকে উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইয়াহইয়া আখতার শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙান। এসময় উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ড. শামীম উদ্দীনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।
উপাচার্য বলেন, 'শিক্ষার্থীরা আমাদের সন্তান। তাদের দাবিগুলো আমরা গুরুত্ব সহকারে নিয়েছি। রোববারের মধ্যেই বিষয়গুলো সমাধানের চেষ্টা করা হবে। আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি থাকবে না।'
দীর্ঘ অনশনে অন্তত সাত শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাদের মধ্যে তিনজনকে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেলে ভর্তি করে স্যালাইন দেওয়া হয়। তারা হলেন, নারী অঙ্গনের সংগঠক ও মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী সুমাইয়া শিকদার, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সংগঠক ধ্রুব বড়ুয়া ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুদর্শন চাকমা।
আজ দুপুরে প্রশাসন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দেখা করতে আসে এবং তাদের সঙ্গে কথা বলে। পরে মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অসুস্থ শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রক্টর অফিসের সামনে অনশনরত শিক্ষার্থীদের কাছে যায়। এরপর প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয় যে, আগামী রোববারের মধ্যে শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো বাস্তবায়নের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হবে। পরে শিক্ষার্থীরা আশ্বাস মেনে অনশন ভাঙেন।
অনশন ভাঙার পর বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী ওমর সমুদ্র বলেন, 'আমাদের ভিসি স্যার স্বয়ং এখানে উপস্থিত ছিলেন। আমরা যে ৭ দফা দাবি উত্থাপন করেছি, তার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি সব শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করেছেন যে, প্রতিটি দাবি নিয়েই আলোচনা হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিশেষ করে প্রক্টরিয়াল বডির অদক্ষতা ও অযোগ্যতার বিষয়টি রোববারের বৈঠকে গুরুত্ব সহকারে আলোচনায় এনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন।'
বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সদস্য জশদ জাকির বলেন, 'ভিসি স্যার আমাদের দাবিগুলোকে যৌক্তিক হিসেবে স্বীকার করেছেন এবং এগুলো নিয়ে কাজ করার আশ্বাস দিয়েছেন। আগামী রোববার তিনি আমাদের আলোচনায় বসার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। প্রশাসনের দেওয়া আশ্বাস যেন বাস্তবে রূপ নেয়, সেজন্য সব সংগঠনের প্রতি আমার আহ্বান থাকবে, ওই বৈঠকে উপস্থিত থেকে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যেতে। আমাদের টানা ৫২ ঘণ্টার আন্দোলন যেন কোনোভাবেই বৃথা না যায়।'
এর আগে, বৃহস্পতিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আলোচনার প্রস্তাব দিলেও অনশনরত শিক্ষার্থীরা তা প্রত্যাখ্যান করেন। তাদের অভিযোগ ছিল, অতীতেও আলোচনার নামে প্রশাসন শুধু আশ্বাস দিয়েছে, কিন্তু বাস্তবে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তাই প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগ ছাড়া অনশন ভাঙবেন না বলে জানিয়ে আসছিলেন তারা।
গত ৩০ ও ৩১ আগস্ট স্থানীয়দের সঙ্গে সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ প্রশাসনই এ ঘটনার জন্য দায়ী। তাই তারা মনে করেন, এমন প্রশাসন পদে থাকতে পারে না এবং অবিলম্বে তাদের পদত্যাগ করা উচিত। ধারাবাহিক কর্মসূচির পর শিক্ষার্থীরা এ দাবিতে আমরণ অনশনের ঘোষণা দেন।
Comments