শিক্ষার মানোন্নয়ন, দাপ্তরিক আধুনিকায়ন ও পরিকল্পিত অবকাঠামো চান জাকসুর এজিএস প্রার্থীরা

সাজ্জাদ, স্রোত, ফেরদৌস ও জিয়া। ছবি: সংগৃহীত

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচন আগামীকাল বৃহস্পতিবার।

দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে চারজন এজিএস প্রার্থী জানিয়েছেন, নির্বাচনে জয়ী হলে তারা সহপাঠীদের কল্যাণে কে কী করতে চান।

অবকাঠামোগত উন্নয়ন, অটোমেশন, পরিবহন সংকট, চিকিৎসা, নিরাপদ ক্যাম্পাস, শিক্ষার মানোন্নয়ন, দাপ্তরিক কাজের আধুনিকায়ন এবং প্রাণ ও প্রকৃতি রক্ষা করে পরিকল্পিত অবকাঠামো নির্মাণে ভূমিকা রাখার চেষ্টা করবেন।

সবাই একমত পোষণ করেছেন—জাকসু নির্বাচন প্রতি বছর হওয়া উচিত এবং গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন।

পরিকল্পিত উন্নয়ন, পরিবহন সংকট নিরসন ও চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে চান সাজ্জাদ

জাবি ছাত্রদল মনোনীত প্রার্থী মো. সাজ্জাদউল ইসলাম জানিয়েছেন, নির্বাচিত হলে তিনি পরিকল্পিত উন্নয়নে কাজ করবেন।

'একটি গবেষণার কাজে আমি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের হাই রেজুলেশন ড্রোন ম্যাপিং করেছি। প্রশাসন চাইলে এটার ওপর ভিত্তি করে মাস্টার প্ল্যান আরও উন্নয়ন করতে পারবে,' বলেন তিনি।

তার মতে, নারী শিক্ষার্থীদের হলগুলো মহাসড়কের পাশে থাকা উচিত না। এখানে শব্দ দূষণসহ আরও অনেক সমস্যা আছে। নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করেই যানবাহন ও অবকাঠামো সংকট দূর করতে হবে।

কর্ম পরিকল্পনা জানিয়ে তিনি আরও বলেন, 'দাপ্তরিক কার্যক্রম অটোমেশনের আওতায় আনতে হবে। শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণ এবং টাকা জমা দিতে একেক ভবনে দৌড়াদৌড়ি করতে হয়, এতে হয়রানির পাশাপাশি সময় নষ্ট হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে কেবল জরুরি চিকিৎসা হয়। আমরা চাই, বিশ্ববিদ্যালয় কোনো বড় হাসপাতালের সঙ্গে সমঝোতা করবে যেন শিক্ষার্থীরা কম খরচে উন্নত চিকিৎসা পেতে পারে। এছাড়া, আমাদের ক্যাম্পাসে একটা বড় সমস্যা মাদক। এই মাদক যেন সিন্ডিকেট যদি পরবর্তী সময় যেন গড়ে না উঠতে পারে সে বিষয়ে কাজ করব।'

জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করে ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের এই শিক্ষার্থী বলেন, সহপাঠীদের অধিকার নিয়ে আমি বিভিন্ন সময় কাজ করেছি। পরিবেশ রক্ষা বৃক্ষরোপণের মতো কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছি।

দাপ্তরিক 'ধীরগতি' নিয়ে উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে সাজ্জাদ বলেন, 'সম্প্রতি অনেক শিক্ষার্থীর হল পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু কাগজ-পত্র হালনাগাদ হয়নি। অনার্স থেকে মাস্টার্সে গেছে এমন অনেক শিক্ষার্থী পরিচয়পত্র পাননি। আমরা আশঙ্কা করছি, এসব কারণে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে।'

'প্রথম চেষ্টা থাকবে জাকসুর গঠনতন্ত্র সংশোধন'

নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বামপন্থী সংগঠন সমর্থিত 'সম্প্রীতির ঐক্য' প্যানেলের এজিএস প্রার্থী নূর এ তামীম স্রোত বলেন, 'ক্যাম্পাসে আমার পাঁচ বছর হতে চললো, সম্পূর্ণ আবাসিক এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্সের চার বছরে আমি আমার সিট পাইনি। এই সংকট আমার একার না। শিক্ষার্থীদের এ রকম যেকোনো ইস্যুতে আমি সরব থাকার চেষ্টা করেছি। ৩৩ বছর পর জাকসু নির্বাচন হচ্ছে। অসংখ্যবার আমি নিজেই চিকা মেরেছি (দেয়াল লিখন) "জাকসু চাই"। অধিকার আদায়ের এই প্রক্রিয়ায় আমার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত। ক্যাম্পাসে আন্দোলন-সংগ্রামে শিক্ষার্থীরা পাশে ছিল বলেই আসলে নির্বাচন করার সাহস পেয়েছি।'

জয়ী হলে কী কী করতে চান জানিয়ে স্রোত বলেন, আমাদের অন্যতম বড় বিষয় হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতি-নির্ধারণী সিদ্ধান্তগুলো হয় সিন্ডিকেট মিটিংয়ে, যেখানে কোনো শিক্ষার্থী প্রতিনিধি থাকে না। জাকসুর প্রতিনিধি যারা নির্বাচিত হবেন, তাদেরও সিন্ডিকেট মিটিংয়ে যাওয়ার অধিকার নেই। গঠনতন্ত্রের মধ্যেও এমন কোনো কিছু বলা নেই। প্রথম চেষ্টা থাকবে জাকসুর গঠনতন্ত্র সংশোধন। এছাড়া, একাডেমিক মাস্টার প্ল্যান এবং পরিকল্পিত ক্যাম্পাস নির্মাণে কাজ করব।'

'ক্যাম্পাসের বন-জঙ্গল উজাড় করে অপ্রয়োজনীয় ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। যেখানে শিক্ষকরা ক্লাসও নিতে চান না। জনগণের টাকা অপচয় হয়েছে, কিছু শিক্ষকের পকেট ভারী হয়েছে,' অভিযোগ করেন তিনি।

জাহাঙ্গীরনগরকে একাডেমিতে রূপান্তর করতে চান ফেরদৌস

সামাজিক-সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের মধ্যে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সম্পৃক্ততাই আত্মবিশ্বাসের জায়গা বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির প্যানেলের এজিএস প্রার্থী ফেরদৌস আল হাসান।

তিনি বলেন, 'গত ১৭ বছর আমরা কথা বলতে পারি নাই। তখনো আমার উল্লেখযোগ্য কর্মকাণ্ড ছিল। যে কারণে আমি এজিএস পদে নিজেকে যোগ্য মনে করছি।'

বিশ্ববিদ্যালয়ের রোভার স্কাউট, রক্তদান সংগঠন বাঁধন, প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করা একটি সংগঠন ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন, টিআইবির ইয়েস গ্রুপে তার সম্পৃক্ততার কথা জানান ফেরদৌস।

তার কর্মপরিকল্পনা জানতে চাইলে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের এই শিক্ষার্থী বলেন, 'জাকসুর নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে কার কী ভূমিকা হওয়া উচিত, আমার মনে হয় যারা ইলেকশন করছেন তারা কেউ জানেন না। কারণ ৩৩ বছর ধরে ইলেকশন হচ্ছে না। ব্যক্তিগতভাবে আমার কিছু পরিকল্পনা আছে। পাঁচ দশক ইতিহাসে জাহাঙ্গীরনগর কখনোই একাডেমিতে পরিণত হতে পারে নাই। নির্বাচিত হলে জাহাঙ্গীরনগরকে একটি একাডেমিতে রূপান্তর করতে প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করব।'

তিনি বলেন, 'আমাদের একটি পরিকল্পনা রয়েছে ওয়ান অ্যাপের আওতায় আসবে জাহাঙ্গীরনগর। যেকোনো জায়গা থেকে ফরম পূরণ, পেমেন্ট, মার্কসিট, রেজাল্টশিট, সার্টিফিকেট উত্তোলনের মতো দাপ্তরিক সব কাজ করা যাবে। আপনারা জানেন, আমাদের অফিসগুলো সত্তরের দশকে পড়ে আছে।'

'ক্যাম্পাসের নিজস্ব প্রকাশনা সংস্থা স্থাপন, নারী শিক্ষার্থীদের অবাধ চলাচল ও নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং হল সংকট দূর করতে চাই,' যোগ করেন তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকগুলো রক্ষায় বংশী নদীর সঙ্গে সংযুক্ত করার পরিকল্পনার কথাও জানান ফেরদৌস। এর বাইরে প্যানেল ঘোষিত ইশতেহার বাস্তবায়ন করতে চান তিনি।

কাউকে প্রতিদ্বন্দ্বী না, প্রতিযোগী ভাবছেন জানিয়ে এই প্রার্থী আরও বলেন, 'আমি চাইবো, নির্বাচিত হলে প্রতিযোগী বাকি নয়জন আমার সঙ্গে কাজ করবেন। যদি আমি নির্বাচিত না হতে পারি, আমার পরিকল্পনাগুলো নির্বাচিত প্রার্থীকে জানাবো।'

'শিক্ষার মানোন্নয়নে শিক্ষকদের মূল্যায়ন চাইব'

নির্বাচিত হলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গেস্টরুম-গণরুম সংস্কৃতি বিলুপ্ত, লাল ফিতার দৌরাত্ম্য বন্ধ, জাকসুর ধারাবাহিকতা বজায় রাখা এবং শিক্ষার মানোন্নয়নে শিক্ষকদের মূল্যায়নের ব্যবস্থা করার লক্ষ্যে কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) এজিএস প্রার্থী মো. জিয়া উদ্দিন।

'আমি অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে পছন্দ করি। আমি হীনমন্যতায় ভুগি না, সব সময় সম্মুখ সারিতে থাকি—এটাই হচ্ছে আমার শক্তি,' বলেন সরকার ও রাজনীতি বিভাগের এই শিক্ষার্থী।

আমি চাই শিক্ষার মানোন্নয়ন হোক। বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ অনেক পুরোনো। নিয়োগ এবং শিক্ষকদের কোনো জবাবদিহিতা নেই। এই পরিস্থিতির পরিবর্তন দরকার। শিক্ষাকে আন্তর্জাতিক মানের করতে হলে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে মতামত দেওয়ার ব্যবস্থা থাকতে হবে।

'অযোগ্য অনেক ব্যক্তি শিক্ষক হয়ে গেছেন। তাদের স্বেচ্ছাচারের শিকার হন শিক্ষার্থীরা। আমি ডেমো ক্লাস চালু করার চেষ্টা করবো। শিক্ষার্থীদের মতামত দেওয়ার সুযোগ পাবে, সেখানে শিক্ষকের মূল্যায়ন হবে,' বলেন জিয়া।

গবেষণায় বরাদ্দ বৃদ্ধি এবং দাপ্তরিক কার্যক্রম ডিজিটালাইজড করতে চাপ সৃষ্টি করবেন বলেও জানান তিনি।

'বছর চলে যায়, শিক্ষার্থীদের ফলাফল প্রকাশ করা হয় না। এতে সেশনজট তৈরি হয়। এই জায়গাগুলোতে প্রশ্ন করতে হবে। হলে দখলদারিত্ব, গেস্টরুম-গণরুম কালচার অবশ্যই বন্ধ করা হবে—আমরা যারা চব্বিশের চেতনা ধারণ করি, এটা আমাদের অঙ্গীকার।'

নারী শিক্ষার্থীদের নির্বাচন বিমুখ মনোভাবই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন জিয়া। তিনি বলেন, 'অভ্যুত্থানের আগেও পরে নারীরা যেভাবে সাইবার বুলিংয়ের শিকার হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে, এই কারণে জাকসু নির্বাচনে নারী প্রার্থীর সংখ্যাও খুব কম। আমার আশঙ্কা, ১১ সেপ্টেম্বর তারা ভোট দিতে আসবে কি না?'

Comments

The Daily Star  | English

SC Secretariat Ordinance: Judges may hold executive posts

Lower court judges will be able to hold executive positions in the law ministry as well as state entities even after the establishment of a Supreme Court secretariat aimed at keeping the judiciary free from the executive’s influence, says a draft ordinance.

3h ago