ভোটের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন, স্বতন্ত্র অঙ্গীকার-সম্প্রীতির ঐক্যসহ ৪ প্যানেলের ‘বয়কট’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বয়কটের ঘোষণা দিয়েছে স্বতন্ত্র অঙ্গীকার পর্ষদ, সম্প্রীতির ঐক্য প্যানেল।
আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রান্সপোর্ট এলাকায় এ ঘোষণার সময়ে এই দুই প্যানেল ছাড়াও ছিলেন সংশপ্তক পর্ষদ ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের প্রার্থীরা।
সেখানে এক সংবাদ সম্মেলনে সম্প্রীতির ঐক্য প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী শরণ এহসান বলেন, 'এই নির্বাচনের পুরো প্রক্রিয়াতেই গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। একটি সুষ্ঠু প্রক্রিয়ায় জাকসু নির্বাচন আমাদের আজীবনের দাবি। শিক্ষার্থী হিসেবে প্রতিটি জাহাঙ্গীরনগরের আপামর শিক্ষার্থী অপেক্ষা করেছে আজকের ভোটের দিনের জন্য। কিন্তু চূড়ান্তভাবে আমরা ক্ষুব্ধ ও হতাশ।'
'আমরা এই অনিয়মের নির্বাচনকে বয়কট করছি এবং একইসঙ্গে নতুন করে তফসিল দিয়ে নতুনভাবে আমরা দ্রুত সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য প্রক্রিয়ায় পুনর্নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছি,' বলেন তিনি।
সংশপ্তক পর্ষদ ও ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল অবশ্যই আগেই অনিয়মের অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে।
শরণ এহসান তার বক্তব্যে বলেন, 'সম্প্রীতির ঐক্য, স্বতন্ত্র অঙ্গীকার পর্ষদ, সংশপ্তক পর্ষদ ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের স্বতন্ত্র প্রার্থী উপস্থিতিতিতে বলতে চাই এই উৎসবমুখর আয়োজন আমাদের জন্য দুঃস্বপ্নের বার্তা বয়ে আনছে। হলে হলে ভোটগ্রহণ সংক্রান্ত নানা অসঙ্গতির কথা আপনারা ইতোমধ্যেই জানতে পেরেছেন। নির্বাচন কমিশনের নিষ্ক্রিয়তা, অব্যবস্থাপনা ও অথর্বতা এই সমগ্র নির্বাচনের ন্যায্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।'
তিনি আরও বলেন, 'আমরা কিছুদিন ধরে লক্ষ্য করেছি এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ও নির্বাচন কমিশনের সর্বোচ্চ অসহযোগিতা পক্ষপাতদুষ্টতা ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার চূড়ান্ত অনিচ্ছার প্রমাণ আমরা পাই যখন জহির রায়হান মিলনায়তনে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে প্রার্থীদের প্রথম ও একমাত্র মতবিনিময় সভায় চূড়ান্ত অগণতান্ত্রিক পক্ষপাতদুষ্টতার মধ্য দিয়ে জাকসুর আয়োজন শুরু হয়।'
'আমরা দেখেছি চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশিত হওয়ার পরও একজন ভিপি পদপ্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল। হাইকোর্টে প্রার্থিতা বহাল রাখার নোটিশ আসার পরও চেম্বার কোর্টে পুনরায় কেস উত্থাপন করে তারা ব্যালট পেপার ছাপা হয়ে গেছে অজুহাতে তার প্রার্থিতা পুনরায় বাতিল করে। এখানে স্পষ্ট প্রশাসনের জাকসু বানচালের দূরভিসন্ধি প্রকাশ পায়,' বলেন তিনি।
ডোপ টেস্ট, ব্যালট পেপার, পোলিং এজেন্ট নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ উপস্থাপন করে শরণ বলেন, 'ভোট শুরুর প্রথম দুই ঘণ্টা কোনো পোলিং এজেন্টকে বুথে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ভোটারদের আঙুলে দেওয়ার কালিও অনেক জায়গায় পাওয়া যায়নি, কোথাও আবার তা সহজে মুছে গেছে। বিশেষ একটি প্যানেলের লিফলেট প্রকাশ্যে নারী হলগুলোর ভেতরে বিতরণ করা হয়েছে, এমনকি পুরুষ প্রার্থীদেরও এসব হলে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়েছে।'
তিনি আরও অভিযোগ করেন, নিবন্ধিত ভোটারের সংখ্যার চেয়ে বেশি ব্যালট পেপার ছাপানো হয়েছে এবং কিছু অতিরিক্ত ব্যালট পরে এদিক-সেদিক পড়ে থাকতে দেখা গেছে। কাজী নজরুল ইসলাম হলে সব প্রার্থীর নাম ছাড়াই ব্যালট ছাপানো হয়, পরে হাতে লিখে নাম যুক্ত করতে হয়েছে।'
এই ছাত্রনেতা বলেন, 'অনেক অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা আর গাফিলতির কারণে এই নির্বাচনকে ঘিরে অনেক সন্দেহ আর প্রশ্ন উঠেছে। জাকসুতে অসংগতির দায় শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রশাসনের। নির্বাচন কমিশন এবং প্রশাসনের চূড়ান্ত অব্যবস্থাপনা, গাফিলতি, ব্যর্থতার কারণে এই ইলেকশনের ক্রেডিবিলিটি নিয়ে যে কারও মনে প্রশ্ন উঠতে বাধ্য।'
'নির্বাচনে সম্প্রীতির ঐক্য প্যানেল থেকে আমি সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী ছিলাম। কিন্তু এই মুহূর্ত থেকে যেহেতু নির্বাচনটি আমরা বয়কট করছি, তাই আমি আমার প্রার্থিতা ত্যাগ করলাম,' যোগ করেন তিনি।
Comments