চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই দশকে ভর্তি হননি কোনো বিদেশি শিক্ষার্থী
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক শ্রেণিতে গত ২৩ বছরে কোনো বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হয়নি। প্রতিটি বিভাগে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য আসন সংরক্ষিত থাকলেও তা ফাঁকাই থাকছে। অথচ ঢাকা, রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগরসহ দেশের অন্যান্য সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি বছরই বিদেশি শিক্ষার্থী আসছেন।
বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য চবিতে কোনো ভর্তি পরীক্ষা দিতে হয় না। তবুও বিদেশি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ দেখা যায় না। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৩ বছরে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ থাকা ২,৬০০টির বেশি আসন ফাঁকা পড়ে ছিল।
চবিতে প্রথম বিদেশি শিক্ষার্থী ভতি হয় ১৯৮৭-৮৮ শিক্ষাবর্ষে। সে বছর চারজন নেপালি শিক্ষার্থী বন ও পরিবেশবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন। এরপর ১৯৯০-৯১ থেকে ১৯৯৮-৯৯ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত একই ইনস্টিটিউটে আরও ১৫ জন নেপালি শিক্ষার্থী স্নাতক পর্যায়ে পড়াশোনা করেন। স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ১৯৯৯-২০০০ থেকে ২০০২-০৩ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত আরও চারজন ভর্তি হয়েছিলেন।
এরপর থেকে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর কোনো পর্যায়েই আর কোনো বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হননি। কেবল ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে এক বছর মেয়াদি ভাষা কোর্সে চারজন চীনা শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছিলেন। এছাড়া বর্তমানে আইন অনুষদের অধীনে একজন বিদেশি শিক্ষার্থী অনলাইনে পড়াশোনা করছেন।
অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্র
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের ২১টি সরকারি ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬৩৩ জন বিদেশি শিক্ষার্থী আছেন। এর মধ্যে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বোচ্চ ১১২ জন, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯১, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮৭ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬৬ জন বিদেশি শিক্ষার্থী রয়েছেন।
অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় কোনো পক্ষ বা মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিদেশি শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করে।
নিয়ম অনুযায়ী, বাংলাদেশে কোনো সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য বিদেশি শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ দেশের বাংলাদেশ দূতাবাস ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আবেদন করতে হয়। মন্ত্রণালয় আবেদনগুলো সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠায় এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সংরক্ষিত কোটার ভিত্তিতে ভর্তির সিদ্ধান্ত নেয়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগে দুটি এবং বন ও পরিবেশবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে পাঁচটিসহ মোট ১১৩টি আসন বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত। কিন্তু চলমান ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষসহ গত ২৩ বছরে এই কোটায় কোনো আবেদন জমা পড়েনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ১৯৯৭ সালে নেপালে পোখারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর সেখানে বন ও পরিবেশবিদ্যা বিষয়ে পড়াশোনার সুযোগ তৈরি হলে চবিতে বিদেশি শিক্ষার্থী আসা কমতে শুরু করে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শামীম উদ্দিন খান এ বিষয়ে দীর্ঘদিনের নিষ্ক্রিয়তার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, 'দীর্ঘদিন ধরে কোনো ধারাবাহিক উদ্যোগ না থাকাই বিদেশি শিক্ষার্থী না আসার অন্যতম কারণ। আমরা এখন আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের অধীনে নতুন কিছু কোর্স চালুর পরিকল্পনা করছি। এছাড়া বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসন ও খাবারের সুবিধা বাড়ানোর জন্যও কাজ করা হচ্ছে।'
তিনি আরও বলেন, 'আগে নেপালের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বন ও পরিবেশবিদ্যা বিষয়ে পড়ার সুযোগ ছিল না বলে শিক্ষার্থীরা এখানে আসত। এখন তাদের দেশেই সেই সুযোগ তৈরি হওয়ায় বাংলাদেশে আসার প্রয়োজনীয়তা কমেছে। তারপরও আমরা আমাদের সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে ক্যাম্পাসকে আরও আকর্ষণীয় করার চেষ্টা করছি।'
বন ও পরিবেশবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক আকতার হোসেনও একই ধরনের মত দেন। তিনি বলেন, 'একসময় আমাদের অধিকাংশ বিদেশি শিক্ষার্থী ছিল নেপালের। পরে তাদের দেশে এ বিষয়ে পড়ার সুযোগ তৈরি হলে চবিতে নেপালি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ধীরে ধীরে কমে যায়।' আবাসন ও খাবারের সমস্যাকেও তিনি একটি বড় কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন।


Comments