শিক্ষার্থীবান্ধব ও নিরাপদ ক্যাম্পাস নির্মাণে শিক্ষক-প্রশাসনকে জবাবদিহির আওতায় আনব: সাজ্জাদ

সাজ্জাদ হোসেন হৃদয়। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে (চবি) শিক্ষার্থীবান্ধব ও নিরাপদ ক্যাম্পাস হিসেবে গড়ে তুলতে শিক্ষক ও প্রশাসনকে জবাবদিহির আওতায় আনার অঙ্গীকার করেছেন চবি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনে ছাত্রদল মনোনীত প্যানেলের সহ-সভাপতি (ভিপি) পদপ্রার্থী সাজ্জাদ হোসেন হৃদয়।

দ্য ডেইলি স্টারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, 'দীর্ঘ ৩৫ বছর পর চাকসু নির্বাচন হতে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আমাদের চাওয়া যেন এটা একাডেমিক ক্যালেন্ডারের মধ্যে থাকে, প্রতি বছর যেন নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচন আয়োজন করা হয়। এটা হলেই শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের জায়গা নিশ্চিত হবে।'

'শিক্ষার্থীদের কাছেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে দায়বদ্ধ থাকতে হবে' উল্লেখ করে সাজ্জাদ বলেন, 'শিক্ষকদের ইচ্ছামতো ক্লাস-পরীক্ষা নেওয়ার কারণে অনেক বিভাগে সেশনজট তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া, আমরা অনেক সময় দেখি শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পক্ষপাতমূলক আচরণ করেন। এর প্রভাব পড়ে পরীক্ষার খাতায়—অনুগত শিক্ষার্থীদের নম্বর বাড়িয়ে দেওয়া বা যাদের প্রতি বিদ্বেষ আছে তাদের নম্বর কমিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। জয়ী হই বা না হই, অবশ্যই নিশ্চিত করব যেন শিক্ষক ও প্রশাসন জবাদিহির আওতায় আসে এবং শিক্ষার্থীরা তাদের ন্যায্য অধিকার বুঝে পান।'

চাকসুতে প্রার্থিতার উদ্দেশ্য জানতে চাইলে এই ভিপি প্রার্থী বলেন, 'ছাত্র সংসদ শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের প্ল্যাটফর্ম। আর অধিকার আদায়ের প্রশ্নে আমি সবসময় আপসহীন ছিলাম। চারুকলাকে মূল ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে আনার আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছি। অতীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের রোষানলের শিকার হয়ে মামলার প্রধান আসামিও হয়েছি। এবার চাকসুতে সুযোগ এসেছে নির্বাচিত প্রতিনিধি হয়ে শিক্ষার্থীদের পাশে আরও শক্তভাবে থাকার।'

ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা ইস্যুকে সবচেয়ে গুরুত্ব দিচ্ছেন ছাত্রদলের এই নেতা। তিনি বলেন, 'শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের বড় উদ্বেগের জায়গা ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা। এখানে বারবার স্থানীয়দের হামলা হয়েছে। শাটলে ঢিল ছোড়া হয়। আমরা দেখেছি ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন গুপ্ত হামলা হয়েছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একজন হামলাকারীকেও শনাক্ত করতে পারেনি।'

'জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আমাদের নারী শিক্ষার্থীদের অগ্রণী ভূমিকা থাকলেও এখন তাদের নানাভাবে হেনস্থা করা হয়। এসব রোধে এন্টি হ্যারাসমেন্ট সেল কার্যকরের উদ্যোগ নেবো। সর্বোপরি আমাদের অগ্রাধিকার থাকবে যেন সব শিক্ষার্থীদের জন্য একটা নিরাপদ ক্যাম্পাস তৈরি করতে পারি,' বলেন সাজ্জাদ।

আবাসন, চিকিৎসা, যাতায়াতের সমস্যা নিয়েও কাজ করার অঙ্গীকার করেছেন এই ভিপি প্রার্থী। এর মধ্যে, দীর্ঘমেয়াদে শতভাগ আবাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে রোডম্যাপ তৈরি, স্বল্পমেয়াদে হলে এক্সটেনশন তৈরি, হোস্টেলে বিনামূল্যে থাকার ব্যবস্থা করে শিক্ষার্থীদের বড় একটা অংশের আবাসন সংকট নিরসনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।

চট্টগ্রাম শহর ও আশপাশের উপজেলা থেকে আসা শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বাসের ব্যবস্থা এবং শাটল ট্রেনের বগি সংকট নিরসনেও উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা খাতের উন্নয়নের দিকেও নজর দেবেন ছাত্রদল মনোনীত এই ভিপি প্রার্থী। 'আমরা চাই আন্তর্জাতিক গবেষণার মানদণ্ডে যেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বের শীর্ষ সারিতে থাকে। বিভিন্ন রিসার্চের ক্ষেত্রে যেন শিক্ষার্থীদের অ্যাসিস্টেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যায় এবং এর জন্য ব্যুরোক্র্যাটিক জট কমিয়ে বাজেট প্রক্রিয়া সহজ করা হবে,' বলেন তিনি।

প্যানেল সম্পর্কে ছাত্রদলের এই প্রার্থী বলেন, 'আমরা পূর্ণাঙ্গ প্যানেল দিয়েছি। কর্মী-সমর্থকদের মতামতের ভিত্তিতে যোগ্যতা অনুযায়ী প্রার্থী সিলেক্ট করা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক পদে যিনি দাঁড়িয়েছেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে এই খাতে কাজ করছেন। অন্যরাও বিভিন্ন ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত থেকে কাজ করেছেন। প্যানেলে একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী আছেন। সবমিলিয়ে গ্রহণযোগ্য ও ইনক্লুসিভ একটি প্যানেল দেওয়া হয়েছে।'

জয় নিয়ে কতটা আশাবাদী? এমন প্রশ্নের জবাবে দর্শন বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সাজ্জাদ বলেন, 'জুলাই পরবর্তী সময়ে একটা সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দলীয়করণ করার চেষ্টা করছে। এর ফল আমরা দেখেছি ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনে। সেখানে ছাত্রশিবির বিপুল জয় পেলেও দুটোতেই বিভিন্ন অনিয়ম-কারচুপির অভিযোগ উঠেছে।'

'তবে আমি ডাকসু-জাকসু নিয়ে চিন্তিত নই। আমাদের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যথেষ্ট সচেতন। তারা জানে অতীতে শিক্ষার্থীদের অধিকারের প্রশ্নে কারা সর্বদা সোচ্চার ছিল। আমরা প্রকাশ্যে রাজনীতি করেছি এবং শিক্ষার্থীদের পক্ষে কথা বলতে গিয়ে হামলা-মামলার শিকার হয়েছি। আশা করি যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, চাকসুতে অবশ্যই ছাত্রদল পূর্ণাঙ্গ প্যানেলে জয়ী হয়ে আসবে,' বলেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Shibli Rubayat, Reaz Islam banned for life in market over scam

In 2022, asset management firm LR Global invested Tk 23.6 crore to acquire a 51 percent stake in Padma Printers, a delisted company, from six mutual funds it manages

1h ago