চবিতে গণতান্ত্রিক, দখলমুক্ত ও নিরাপদ পরিবেশ গড়তে ‘ক্যাম্পাস চার্টার’ করব: ধ্রুব বড়ুয়া

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে দখলদারত্বমুক্ত, গণতান্ত্রিক ও নিরাপদ ক্যাম্পাস গড়ার অঙ্গীকার করেছেন আসন্ন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনে 'বৈচিত্র্যের ঐক্য' প্যানেলের সহ-সভাপতি (ভিপি) প্রার্থী ধ্রুব বড়ুয়া।
দ্য ডেইলি স্টারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাংলা বিভাগের (২০১৮–১৯ শিক্ষাবর্ষ) এই শিক্ষার্থী বলেন, 'আমার লক্ষ্য দখলদারত্বের বিপরীতে দাঁড়িয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটা প্রতিরোধের ঐক্য তৈরি করা। আমি চাই প্রশাসনের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে প্রশাসনের ভেতরে বিভিন্ন সংগঠনের প্রভাব নস্যাৎ করে একটা গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাস নির্মাণ করতে।'
'বৈচিত্র্যের ঐক্য' প্যানেলের উদ্দেশ্য ও ভাবনা ব্যাখ্যা করে ধ্রুব বলেন, 'আমাদের প্যানেল বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের কর্মীদের সমন্বয়ে গঠিত। নারীদের উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহণ আছে। আমাদের মূলমন্ত্র "বৈচিত্র্যের ঐক্যে"র মধ্য দিয়ে প্রতিরোধের শক্তি গড়ে তোলা।'
'প্রতিরোধের আলাপ আসার কারণ হলো, আমাদের ক্যাম্পাসের হত্যা ও দখলদারত্বের ইতিহাস। আমরা দেখেছি ছাত্রশিবির ও ছাত্রলীগের মতো ছাত্রসংগঠনগুলোকে ক্ষমতাকেন্দ্রীক রাজনীতি করে বিভিন্ন সময় দ্বন্দ্ব-সংঘাতে লিপ্ত হতে। এতে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক ক্যারিয়ার ও অনেক ক্ষেত্রে জীবন বিপন্ন হতো এবং ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা বিঘ্ন ঘটত। এ জায়গা থেকে আমাদের আশঙ্কা সামনের দিনগুলোতেও এমন হতে পারে,' বলেন তিনি।
এই ভিপি প্রার্থী বলেন, 'নিরাপদ ক্যাম্পাস তৈরির জন্য শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মচারীসহ সব অংশীদারদের নিয়ে একটা "ক্যাম্পাস চার্টার" তৈরি করতে চাই। প্রশাসন যখন ব্যর্থতার পরিচয় দেবে, থেকেও না থাকার মতো আচরণ করবে তখন এই চার্টার সবার জন্য আইনের মতো কাজ করবে।'
জয়ী হলে আর কী করবেন, জানতে চাইলে গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল নেতা ধ্রুব বলেন, 'আমাদের পরিকল্পনা স্পষ্ট ও বহুমুখী। চাকসু নির্বাচনকে একাডেমিক ক্যালেন্ডারে অন্তর্ভুক্ত করা, সিনেটে নির্বাচিত চাকসু প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, খাদ্য-আবাসন-যাতায়াত সমস্যার নিরসনে রোডম্যাপ তৈরি করব।'
নিজের সক্ষমতা তুলে ধরে জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সহ-সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করা ধ্রুব বলেন, 'আমি ২০১৯ সাল থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয়ভাবে আন্দোলন-সংগ্রাম করে যাচ্ছি। আমি ক্যাম্পাসের সমস্যাগুলো ও প্রশাসনিক জটিলতাগুলো ভালোভাবে বুঝি। গত ১২ মাসে প্রশাসনের অনেক ভুল আমরা তুলে ধরেছি। আমি আপসহীন নীতি ও দায়বদ্ধতায় বিশ্বাসী, জুলাই আন্দোলনে সহ-সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করেছি। ৫ আগস্টের পর লোভ-প্রলোভনে না পড়ে জনগণের কাতারে থেকে আন্দোলন করেছি। সর্বোপরি মনে করি, আমার সংগঠিতভাবে কাজের প্রচেষ্টা এবং মাঠপর্যায়ে সমন্বয়-তদারকির মাধ্যমে কাজ করার সক্ষমতা আমার রয়েছে।'
নির্বাচন আয়োজন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ধ্রুব বড়ুয়া বলেন, 'আমরা বারবার ইলেকশন কমিশনারের কাছে যাচ্ছি যেন ব্যালট বাক্স স্বচ্ছ হয়, ব্যালটে রিসিট সিস্টেম থাকে। প্রতিটি কেন্দ্রে প্যানেলের অন্তত একজন পোলিং এজেন্ট রাখার দাবিও জানিয়েছি। কিন্তু এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে এখনো কোনো স্বচ্ছ উত্তর পাওয়া যায়নি।'
দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের ভোট দেওয়ার সুবিধার্থে ব্রেইল পদ্ধতিতে ব্যালট ছাপানোর দাবি জানানো হলেও, সেটি নিয়ে সুনির্দিষ্ট আশ্বাস মেলেনি বলে তিনি অভিযোগ করেন।
'তবে আমরা আশাবাদী এবং আমরা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। আমি মনে করি চাকসু নিয়মিত কার্যকর হলে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের জায়গা সুনিশ্চিত হবে এবং প্রশাসনকে জবাবদিহি করতে বাধ্য করা সম্ভব হবে,' বলেন তিনি।
Comments