এক সপ্তাহ ধরে লোডশেডিংয়ে নাকাল চট্টগ্রামবাসী

লোডশেডিংয়ে অন্ধকারে ডুবে আছে চট্টগ্রামের একটি এলাকা। ছবি: রাজীব রায়হান

চট্টগ্রামের আসকার দীঘির পাড় এলাকার বাসিন্দা শুভেচ্ছা ঘোষের দিনকাল এখন কঠিন হয়ে পড়েছে, কারণ তার আড়াই বছরের শিশুটি ঘনঘন লোডশেডিংয়ের কারণে রাতে কিংবা দিনে একটানা পরিপূর্ণভাবে ঘুমাতে পারছে না।

তিনি বলেন, 'ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ছয় থেকে সাতবার লোডশেডিং হচ্ছে এই এলাকায়, তার ওপর শরতের প্রচণ্ড গরমে প্রাণ অতিষ্ঠ। আমার ছোট ছেলেটি লোডশেডিংয়ের কারণে সারা রাত ছটফট করে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাত পাখা দিয়ে বাতাস করেও তাকে ঘুম পাড়াতে পারি না, নিজেও জেগে থাকি।'

একদিনের লোডশেডিংয়ের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, 'রোববার ভোর ৬টায় বিদ্যুৎ চলে যায় এবং প্রায় এক ঘণ্টা পর আসে, এরপর আবার সকাল সাড়ে ৯টায় চলে যায় এবং সকাল ১০টা ২০ মিনিটে আসে এবং এভাবে মধ্যরাত পর্যন্ত সাতবার বিদ্যুৎ যাওয়া-আসা করেছে। একবার গেলে এক দেড় ঘণ্টার আগে আসে না। বাচ্চাটার কষ্ট আর সহ্য করতে পারছি না, কিন্তু আমি কি-ই বা করতে পারি?'

শুভেচ্ছের মতোই বন্দরনগরীর চকবাজার, পাঁচলাইশ, কাতালগঞ্জ, শোলকবহর, বাকলিয়া, কাজির দেউড়ি, লাভ লেন, জুবিলি রোড, টেরি বাজার, হাজারী গলি, আন্দর কিল্লা, দেওয়ান বাজার, রুম ঘাটা, দেওয়ানজি পুকুর পাড়, সাব এরিয়া, নবাব সিরাজউদ্দোল্লাহ রোড, তেলিপট্টি রোড, লালচাঁদ রোড, জয় নগর, মুন্সি পুকুর পাড়, হামজারবাগ, বিবিরহাট, অক্সিজেন, চট্টেশ্বরী রোড ও লালখান বাজার সহ আরও অনেক এলাকার বাসিন্দারা এক সপ্তাহ ধরে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।

পাঁচলাইশ এলাকার বাসিন্দা আব্দুল আজিজ বলেন, 'চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রবল বৃষ্টিপাতের সময়টায় চট্টগ্রামে আবহাওয়া কিছুটা শীতল ছিল কিন্তু তারপরে আবার তাপমাত্রা বেড়ে যায়। তাপমাত্রার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লোডশেডিংও বাড়ছে।'

চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, সোমবার চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রোববার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

চট্টগ্রাম বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কর্মকর্তাদের মতে, চট্টগ্রামে বিদ্যুতের চাহিদা এবং জাতীয় গ্রিড থেকে সরবরাহ—এই দুইয়ের মধ্যে ব্যবধান অনেক বেড়েছে, যা চট্টগ্রামে বর্তমান লোডশেডিংয়ের কারণ।

যোগাযোগ করা হলে চট্টগ্রাম পিডিবির সহকারী প্রধান প্রকৌশলী শম্পা নন্দী জানান, তারা দৈনিক চাহিদার তুলনায় প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ মেগাওয়াট কম বিদ্যুৎ পাচ্ছেন, তাই তারা লোডশেডিংয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।

জানা গেছে, চট্টগ্রামে বিদ্যুতের দৈনিক চাহিদা পিক আওয়ারে প্রায় ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট এবং অফ পিক আওয়ারে প্রায় ১ হাজার ১০০ মেগাওয়াট থাকে।

রোববার সকাল ১১টায় চাহিদা ছিল ১ হাজার ১০৯ মেগাওয়াট এবং সন্ধ্যা ৭টায় ১ হাজার ২৩৫ মেগাওয়াট বলে জানান চট্টগ্রাম পিডিবির সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) আকবর হোসেন।

চট্টগ্রাম অঞ্চলে ১৬টি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে মোট ১ হাজার ৫১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। এর পরও লোডশেডিং হচ্ছে কেন জানতে চাইলে চট্টগ্রাম পিডিবির প্রধান প্রকৌশলী (বণ্টন) রেজাউল করিম বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ সরাসরি জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ হয়।

তিনি বলেন, 'আমরা জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ পাই, স্থানীয় বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সরাসরি নয়। জ্বালানির অভাবে দেশের অনেক এলাকায় তেলচালিত কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র পূর্ণ সক্ষমতায় উৎপাদনে নেই। দেশে সামগ্রিকভাবে বিদ্যুতের ঘাটতি থাকায় চাহিদার তুলনায় চট্টগ্রাম প্রায় ২০০ মেগাওয়াট কম বিদ্যুৎ পাচ্ছে।'

রেজাউল বলেন, দু-তিন দিনের মধ্যে এই সংকট কেটে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

যোগাযোগ করা হলে, কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় সহসভাপতি এসএম নাজের হোসেন বলেন, সরকারের অগ্রাধিকার অনুযায়ী বিদ্যুৎ বণ্টনের একটি মাপকাঠি থাকা উচিত।

তিনি বলেন, 'এখানে বিভিন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিবেশগত, স্বাস্থ্যগত এবং অন্যান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার খেসারত স্থানীয় জনগণকে বহন করতে হচ্ছে। তাই এখানে অবস্থিত প্ল্যান্ট থেকে বিদ্যুৎ বিতরণের ক্ষেত্রে চট্টগ্রামকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। আগে চট্টগ্রামের চাহিদা পূরণ করে তারপর দেশের অন্যান্য অঞ্চলে সরবরাহ করা উচিত।'

Comments

The Daily Star  | English
Yunus, Charter, and Our Future

Yunus, Charter, and Our Future

Can the vision for 'New Bangladesh' ignore the poor, farmers, workers, youth, women, or employment and climate crises?

11h ago