সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর চাপ

স্টার ফাইল ছবি

মিরপুর-১ এলাকার বাসিন্দা সোনিয়া আখতার। ২৫ বছর বয়সী এই তরুণী গত বুধবার রাতে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে ভর্তি হন।

টানা এক সপ্তাহ ধরে জ্বরে ভুগলেও তিনি ছয় দিন পর ডেঙ্গু পরীক্ষা করান, যা তার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি ঘটায়।

'প্রথমে সাধারণ ভাইরাল জ্বর ভেবে ওষুধের দোকান থেকে ওষুধ খাইয়ে চিকিৎসা করাচ্ছিলাম। কিন্তু অবস্থার অবনতি হলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়,' বলেন সোনিয়ার বোন ফারিয়া ইসলাম।

ফারিয়া জানান, ভর্তি হওয়ার সময় সোনিয়ার জ্বর, বমি ও পেটব্যথা ছিল।

একই অভিজ্ঞতার কথা জানান ফার্মগেটের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ইসরাত জাহান সুরভী। তিনিও জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার তিন দিন পর ডেঙ্গু পরীক্ষা করান।

শেওড়াপাড়ার ২২ বছর বয়সী মোহাম্মদ হারিস মোল্লা বলেন, 'আমার প্লাটিলেট ১১ হাজারে নেমে গিয়েছিল, সেজন্য এক ব্যাগ রক্ত নিতে হয়েছে।' তিনিও জ্বর শুরু হওয়ার তিন দিন পর এনএস১ ডেঙ্গু পরীক্ষা করান।

তাদের মতো আরও অনেক ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন, ফলে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে চাপ বেড়েছে। ভর্তি রোগীদের মধ্যে অনেকের অবস্থাই আশঙ্কাজনক।

হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স শাহনাজ পারভীন জানান, ১ অক্টোবর থেকে চালু হওয়া ৬০ শয্যার ডেঙ্গু ওয়ার্ডে বর্তমানে ৫৮ জন রোগী চিকিৎসাধীন।

তিনি বলেন, 'আরও রোগী ভর্তি হতে পারেন। কিছু রোগী ছাড়পত্র পেলে হাসপাতাল সর্বোচ্চ পাঁচ-ছয়জন নতুন রোগীকে জায়গা দিতে পারবে।'

'বেশি রোগী এলে তাদের প্রথমে মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি রাখা হবে এবং শয্যা খালি হলে ডেঙ্গু ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হবে,' তিনি যোগ করেন।

তার মতে, বেশিরভাগ রোগী ঢাকা মহানগরীর হলেও রাজধানীর বাইরে থেকেও কেউ কেউ চিকিৎসা নিতে আসছেন।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষ সাধারণত প্রাথমিক উপসর্গ উপেক্ষা করে এবং পরীক্ষা করাতে দেরি করে, যা জটিলতা বাড়ায়।

হাসপাতালে ভাইকে নিয়ে আসা মো. নাঈম বলেন, 'আমার ভাই ফাহিমকে ৫ অক্টোবর নোয়াখালীর মা ও শিশু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল, কিন্তু প্লাটিলেট চার হাজারে নেমে যাওয়ায় ডাক্তাররা তাকে এখানে পাঠান।'

'তাকে তিন ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়েছে এবং এখন তার অবস্থার উন্নতি হয়েছে— প্লাটিলেট বেড়ে ৩০ হাজারে পৌঁছেছে,' তিনি যোগ করেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৫৩ হাজার ১৯৩ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আর ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ২২৪ জনের।

গত কয়েক সপ্তাহে ঢাকায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা হঠাৎ বেড়ে গেছে। ডিজিএইচএসের তথ্য বলছে, ঢাকা বিভাগে আক্রান্তের হার দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় অনেক বেশি।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক এইচ এম নাজমুল আহসান বলেন, 'গত এক সপ্তাহ ধরে রোগীর চাপ অত্যন্ত বেশি। প্রায় সব শয্যাই পূর্ণ।'

তিনি বলেন, 'গুরুতর রোগীর সংখ্যা বেড়েছে—তাদের মধ্যে অনেকে শকে আছেন বা এক্সপ্যান্ডেড ডেঙ্গু সিনড্রোমে ভুগছেন।'

তিনি আরও বলেন, 'এক্সপ্যান্ডেড ডেঙ্গু সিনড্রোমে আক্রান্ত রোগীদের লিভারে জটিলতা, হেপাটাইটিস দেখা দেওয়ার পাশাপাশি একাধিক অঙ্গ বিকল হয়ে পড়তে পারে।'

বয়স্ক, সন্তানসম্ভবা নারী ও দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্তদের ডেঙ্গু হলে তাদের দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন এই চিকিৎসক। 

আর যারা বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন, তাদের ওরস্যালাইন, ডাবের পানি, ভাতের মাড়, স্যুপ এবং তাজা ফলের রসের মতো তরল পানীয় পানের পরামর্শও দেন তিনি। 
 

Comments