খামেনির প্রাণ বাঁচালাম, ধন্যবাদটুকুও দিলো না: ট্রাম্প

ডোনাল্ড ট্রাম্প ও আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। ছবি: সংগৃহীত

ইরানের পরমাণু অস্ত্র অর্জন ঠেকানোর কথা বলে গত ১৩ জুন দেশটিতে অতর্কিতে হামলা চালায় ইসরায়েল। পরবর্তীতে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হলে এই সংঘাত নতুন মোড় নেয়।

হামলা-পাল্টা হামলার মধ্য দিয়ে ১২ দিনের মাথায় যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় ইসরায়েল ও ইরান। তবে দুই দেশের মধ্যেকার এই সংঘাতের শুরু থেকেই মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতির অন্যতম প্রধান ব্যক্তি আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে হত্যার পরিকল্পনা বারবার শিরোনাম হয়েছিল।

সংঘাতের শুরু থেকেই খামেনিকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিল ইসরায়েল। তবে এখন পর্যন্ত তা করেনি ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের কেউই।

এর মধ্যেই ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে লজ্জাজনক মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করলেও, খামেনি তাকে ধন্যবাদও জানাননি বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

গতকাল শুক্রবার নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লিখেছেন, 'আমি খামেনিকে অত্যন্ত জঘন্য ও অপমানজনক মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়েছিলাম, তবে তিনি ধন্যবাদটুকুও দিলেন না।'

ইসরায়েলের সঙ্গে ১২ দিনের যুদ্ধে ইরান জয়লাভ করেছে, খামেনির এমন মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প এ কথা বলেন।

ট্রাম্প দাবি করেন, ইরানে হামলা চালানোর সময় খামেনি কোথায় আশ্রয় নিয়েছিলেন তা তিনি জানতেন। ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর খামেনিকে হত্যার পরিকল্পনাও রুখে দেন তিনি।

খামেনির যুদ্ধ জয়ের ঘোষণাকে মিথ্যা ও বোকামিপূর্ণ আখ্যা দিয়ে তীব্র সমালোচনাও করেন ট্রাম্প।

তবে খামেনিকে নিয়ে করা ট্রাম্পের মন্তব্যকে 'অসম্মানজনক ও অগ্রহণযোগ্য' আখ্যা দিয়ে নিন্দা জানিয়েছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে তিনি বলেন, 'প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যদি মনেপ্রাণে চুক্তি করতে চান, তাহলে তাকে আয়াতুল্লাহ খামেনির প্রতি অসম্মানজনক ভাষা ব্যবহার বন্ধ করতে হবে এবং তার কোটি ভক্তের অনুভূতিতে আঘাত দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।'

এর আগে, ইরানে হামলা চালিয়ে দেশটির পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের ক্ষমতাকে ধ্বংস করে দিয়েছেন বলে দাবি করেছিলেন ট্রাম্প।

সেসময় সংঘাতের অংশ হিসেবে খামেনিকে হত্যার পরিকল্পনা এঁটেছিল ইসরায়েল। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু খামেনিকে হত্যা করলে দুই চিরশত্রুর মধ্যে 'সংঘাতের অবসান ঘটবে' এবং 'পরমাণু যুদ্ধ বন্ধ' হবে বলেও মন্তব্য করেন।

ট্রাম্পও খামেনিকে সহজ লক্ষ্যবস্তু উল্লেখ করে বলেছিলেন, 'আমরা ইরানের সর্বোচ্চ নেতাকে হত্যা করব না, অন্তত এখনই নয়।'

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ জানান, সংঘাত চলাকালে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা খামেনিকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন তারা।

ইসরায়েলের সংবাদমাধ্যম চ্যানেল থার্টিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কাৎজ বলেন, 'আমরা খামেনিকে সরিয়ে দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু সেটা করার যথাযথ সুযোগ পাওয়া যায়নি।'

কাৎজের দাবি, খামেনি তার ওপর হামলা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছিলেন। আর সে কারণে তিনি ভূগর্ভের অনেক গভীরে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গিয়েছিলেন।

তবে চলতি সপ্তাহের শুরুতে যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন খামেনি।

তিনি বলেন, 'ফোরদো, ইস্ফাহান ও নাতাঞ্জে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন হামলার পর কাতারের একটি প্রধান মার্কিন ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে ইরান যুক্তরাষ্ট্রের মুখে চড় মেরেছে।'

যদিও মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতির অন্যতম প্রধান ব্যক্তি আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে হত্যা করা হলে তা ইরান ও মধ্যপ্রাচ্যকে এক অনিশ্চিত এবং অজানা সংকটের দিকে ঠেলে দিতে পারত।

Comments

The Daily Star  | English
foreign travel rules for government officials Bangladesh

Advisers, secretaries flouting foreign travel rules

CA upset over repeated violations; officials urged to follow directives ahead of election

2h ago