নেপালে সামাজিক মাধ্যমের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, কারফিউ ভেঙে বিক্ষোভ অব্যাহত

৯ সেপ্টেম্বর কারফিউ উপেক্ষা করে বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছে নেপালের জেন-জি প্রজন্ম। ছবি: রয়টার্স
৯ সেপ্টেম্বর কারফিউ উপেক্ষা করে বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছে নেপালের জেন-জি প্রজন্ম। ছবি: রয়টার্স

নেপালে একাধিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ ও সরকারের দুর্নীতির প্রতিবাদে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। 

বিক্ষোভ দমনে পুলিশের বল প্রয়োগের জেরে ১৯ বিক্ষোভকারী নিহত হলে এই ঘটনার দায় স্বীকার করে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদত্যাগ করেন।

নেপালে সামাজিক মাধ্যমের নিষেধাজ্ঞাও তুলে দিয়ে রাজধানী কাঠমান্ডুতে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করা হয়েছে। তবে কারফিউ উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।

আজ মঙ্গলবার রয়টার্স ও কাঠমান্ডু পোস্টের প্রতিবেদনে এ বিষয়গুলো জানা গেছে।

কারফিউ সত্ত্বেও বিক্ষোভ অব্যাহত

নেপালের পার্লামেন্ট ভবনের কাছে নিউ বানেশ্বর এলাকা ও কাঠমান্ডু উপত্যকার বিভিন্ন অংশে আজ সকালেও বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে।

কলঙ্কী, চাপাগাঁও ও উপত্যকার অন্যান্য অংশে বিক্ষোভ ও সমাবেশ হয়েছে।

বিক্ষোভের এক পর্যায়ে গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। ছবি: রয়টার্স
বিক্ষোভের এক পর্যায়ে গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। ছবি: রয়টার্স

আজ সকালে পার্লামেন্ট ভবনের সামনে থেকে কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

কাঠমান্ডু, ললিতপুর ও ভক্তপুর জেলায় কারফিউ জারি করা হয়েছে।

আজ সকাল থেকে কারফিউ উপেক্ষা করে নিউ বানেশ্বরে অবস্থিত পার্লামেন্ট ভবনের সামনে জমায়েত হতে শুরু করে বিক্ষোভকারীরা। তাদের হাতে কোনো ব্যানার ছিল না। এক বিক্ষোভকারী কাঠমান্ডু পোস্টকে বলেন, 'গতকালের ঘটনায় সরকারের ব্যর্থতা প্রকাশ পেয়েছে। আমি তরুণদের পাশে দাঁড়াতে এখানে এসেছি।'

কাঠমান্ডু জেলা প্রশাসক ছবিলাল রিজাল জানান, অনির্দিষ্টকালের জন্য কাঠমান্ডু শহরের ভেতর কারফিউ জারি করা হয়েছে।

নেপালে পার্লামেন্ট ভবনকে সুরক্ষা দিচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। ছবি: রয়টার্স
নেপালে পার্লামেন্ট ভবনকে সুরক্ষা দিচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। ছবি: রয়টার্স

এক সরকারি বার্তায় তিনি জানান, 'কারফিউ চলাকালীন সময়ে কোনো বিক্ষোভ, গণজমায়েত, বৈঠক বা জনসমাবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না।'

এর আগে বিক্ষোভকারীরা সোমবারের নিহতদের স্মরণে শোকসভায় যোগ দেওয়ার আহ্বান জানালে এই ঘোষণা আসে।

সামাজিক মাধ্যমের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার

আজ মঙ্গলবার মন্ত্রিসভার মুখপাত্র এবং যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রী পৃথিবী সুব্বা গুরুং জানান, সরকার সামাজিক মাধ্যমের নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে।

রয়টার্সকে গুরুং বলেন, 'আমরা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছি। এখন সামাজিক মাধ্যমগুলো ঠিকমতো কাজ করছে'।

রয়টার্স মঙ্গলবার সকালে যাচাই করে নিশ্চিত হয়েছে, নেপালে সবগুলো অ্যাপ কোনো ঝামেলা ছাড়াই কাজ করছে।

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য

প্রধানমন্ত্রী কে.পি. শর্মা অলি জানান, তিনি 'কিছু স্বার্থান্বেষী মহলের যোগসূত্রে সংঘটিত' সহিংসতার ঘটনায় মর্মাহত হয়েছেন।

নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ও আহতদের বিনা খরচে চিকিৎসা দেওয়ার অঙ্গীকারের কথা উল্লেখ করেন তিনি।

নেপালের প্রধানমন্ত্রী ওলি শর্মা। ছবি: কাঠমান্ডু টাইমস।
নেপালের প্রধানমন্ত্রী ওলি শর্মা। ছবি: কাঠমান্ডু টাইমস।

সোমবার গভীর রাতের বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী অলি শর্মা বলেন, 'এসব ঘটনার তদন্তে একটি প্যানেল গঠন করা হবে। তার ১৫ দিনের মধ্যে এর নেপথ্যের কারণ খুঁজে বের করবেন এবং ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত জানাবেন। তারা নিশ্চিত করবেন, এ ধরনের ঘটনা যাতে ভবিষ্যতে আর না ঘটে।'

যেভাবে বিক্ষোভের শুরু

হিমালয় পর্বতমালার পাদদেশে অবস্থিত দেশটিতে বিক্ষোভকারীরা নিজেদেরকে 'জেন-জি প্রজন্মের বিক্ষোভকারী' হিসেবে পরিচয় দিয়েছে।

তাদের দাবি, এই বিক্ষোভে সরকারের দুর্নীতি দমন ও অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর উদ্যোগে ঘাটতি নিয়ে তরুণ প্রজন্মের হতাশার প্রতিফলন ঘটেছে।

গত সপ্তাহে সরকার ফেসবুক, ইউটিউব ও হোয়াটসঅ্যাপের মতো বেশ কয়েকটি তুমুল জনপ্রিয় অ্যাপ বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

জেন-জি'র বিক্ষোভ। ছবি: রয়টার্স
জেন-জি'র বিক্ষোভ। ছবি: রয়টার্স

কর্মকর্তাদের দাবি, ভুয়া পরিচয়ে আইডি খোলা, ভুল তথ্য প্রচার ও ঘৃণার বশবর্তী হয়ে দেওয়া বক্তব্যে রাশ টেনে ধরতে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। পাশাপাশি, ওই সামাজিক মাধ্যমগুলো সরকারি নিবন্ধনও নেয়নি বলে তারা দাবি করেন।

বিক্ষোভ যেভাবে সহিংসতায় রূপ নিলো

সোমবার কাঠমান্ডুতে ১৭ জন ও ইতাহারিতে দুইজন নিহত হন। পাশাপাশি ৪০০ জন বিক্ষোভকারী গুরুতর আঘাত পেয়েছেন।

কারফিউ ভেঙে বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার অপরাধে এক বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করছে পুলিশ। ছবি: রয়টার্স
কারফিউ ভেঙে বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার অপরাধে এক বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করছে পুলিশ। ছবি: রয়টার্স

ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইউটিউবসহ বেশ কিছু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত ও সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোমবার সকাল থেকে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুসহ অন্যান্য শহরে আন্দোলনে নামে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা।

বিক্ষোভে হতাহতের দায় মাথায় নিয়ে পদত্যাগ করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রমেশ লেখক।

Comments

The Daily Star  | English

Hasina can’t evade responsibility for Khaleda Zia’s death: Nazrul

In 2018, Khaleda walked into jail, but came out seriously ill, he says

3h ago