এক্সপ্লেনার

ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতির জন্য কেন এই সময়টাকে বেছে নিলো যুক্তরাজ্য?

ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি
ব্রিটিশ পার্লামেন্টের বাইরে বিক্ষোভে ফিলিস্তিনি পতাকা। ছবি: রয়টার্স ফাইল ফটো

১৯৪৮ সালে যুক্তরাজ্যের সহায়তায় ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইসরায়েল রাষ্ট্রের জন্ম হওয়ার সময় বলা হয়েছিল সেখানে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র শান্তিপূর্ণ ও মৈত্রীর সম্পর্ক নিয়ে পাশাপাশি থাকবে। কিন্তু, গত প্রায় ৭৭ বছর ধরে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার বিষয়ে বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলোর গড়িমসি দেখেছে বিশ্ববাসী। পরাশক্তিধর যুক্তরাজ্যও সেই কাতারে শামিল।

হাজারো নিরপরাধ মানুষের মৃত্যু ও লাখো মানুষের অবৈধ বাস্তুচ্যুতির পর লন্ডন যেন তাদের প্রায় আট দশকের অনীহা কাটিয়ে উঠতে যাচ্ছে। কিন্তু, কেন এত বছর পর যুক্তরাজ্য এই সময়টাকে বেছে নিলো ফিলিস্তিনকে স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য?

আজ রোববার বিবিসির এক প্রতিবেদনের শিরোনাম করা হয়েছে—'কেন স্টারমার সিদ্ধান্ত নিলেন যে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার এটাই জুতসই সময়?

প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাজ্যের আগের সরকারগুলো মনে করতো শান্তি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিলে তা সর্বোচ্চ পর্যায়ে কার্যকর হতে পারে।

এতে আরও বলা হয়, গত জুলাইয়ে গাজায় মানবিক বিপর্যয় ও নিজ দলের এমপিদের ক্রমাগত চাপে পড়ে প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার সিদ্ধান্ত নেন যে এটিই ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রকৃত সময়।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এক ঘোষণায় বলেন যে তিনি সেপ্টেম্বরে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবেন। ঘটনাচক্রে সেই মাসেই জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন বসে। তবে প্রধানমন্ত্রী স্টারমার এই স্বীকৃতির পেছনে কিছু শর্ত জুড়ে দিয়েছিলেন। সেই শর্তগুলো ছিল ইসরায়েলের জন্য।

তেল আবিব যদি সেসব শর্ত না মানে তাহলে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতির বিষয়ে লন্ডন উদ্যোগ নেবে। এসব শর্তের মধ্যে ছিল যুদ্ধবিরতি ও দীর্ঘ-স্থিতিশীল শান্তি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে দুটি পৃথক রাষ্ট্র গঠন করে সমস্যার সমাধান করা।

ইসরায়েলের বর্তমান সরকার দুই রাষ্ট্র ব্যবস্থার বিরোধিতা করায় লন্ডন জেনে গেল যে তার দেওয়া শর্তগুলো পূরণ হবে না।

ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, সিদ্ধান্তটি নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রত্যাশা—এটি সময় উপযোগী হবে; জনমানুষের মনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

ব্রিটেনের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির ইশতেহারে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতির কথা বলা আছে। ২০১৪ সালে তৎকালীন লেবার নেতা এড মিলিব্যান্ড দেশটির কমনস সভায় এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবে সমর্থন দিয়েছিলেন। সরকারে এসে লেবার পার্টি ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি এগিয়ে নেয়। এটি ব্রিটেনের পররাষ্ট্রনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন।

বিবিসির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, লেবার পার্টির এমপিরা ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে ক্রমাগত আহ্বান জানিয়ে আসছিলেন। পার্লামেন্টের অর্ধেকের বেশি সদস্য তাদের সই করা চিঠিতে এমন দাবি জানিয়ে তা সরকারের কাছে পাঠান। তারা দ্রুত ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতির দাবি জানান।

ব্রিটিশ মন্ত্রীদের অনেকে এই স্বীকৃতির জন্য চাপ দিয়েছেন। গাজা যুদ্ধ নিয়ে ব্রিটিশ ভোটারদের মধ্যে যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে তা অনেককে মন্ত্রিত্ব হারানোর পর্যায়ে নিয়ে এসেছে।

লেবার পার্টির এক এমপি নাম প্রকাশ না করে বিবিসিকে বলেন, 'এমপিরা যে জনগণের চাপে আছেন তা আমি অবজ্ঞা করছি না। যে শহরে বিশ্ববিদ্যালয় আছে বা মুসলিম ভোটার বেশি অথবা দুটিই আছে সেখানে জনমতের চাপ অনেক।'

এ ছাড়াও আছে আন্তর্জাতিক চাপ। প্রতিবেশী ও পরাশক্তি ফ্রান্স সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সম্মেলনে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পরপরই যুক্তরাজ্যকে স্বীকৃতির বিষয়টি ঘোষণা দিতে হয়।

এরপর, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডা একই ধরনের ঘোষণা দেয়।

Comments

The Daily Star  | English

Khaleda Zia laid to eternal rest

Buried with state honours beside her husband Ziaur Rahman

8h ago