ডেঙ্গু হলে কি ডাবের পানি খেতেই হবে

ছবি: সংগৃহীত

সারাদেশেই বেড়েছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। জ্বর হলেই সাধারণত চিকিৎসকরা পর্যাপ্ত তরল খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

এই পরামর্শ শুনে ডেঙ্গু আক্রান্তদের আত্মীয়-স্বজনরা ছুটছেন বাজার বা ফুটপাতের ডাবের দোকানগুলোতে। ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় ডাবের চাহিদাও বেড়েছে দ্বিগুণ। সুযোগ বুঝে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ডাবের দামও বাড়িয়ে দিয়েছে।

ডেঙ্গু রোগে ডাবের পানি আসলে কতটা উপকারী বা ডাবের পানি ছাড়া তরলের ঘাটতি পূরণ করতে আর কী কী তরল খাবার রাখতে পারেন খাদ্যতালিকায়, সেটিই জানব আজকের এই লেখায়। এ বিষয়ে আমাদের জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. তানজীর ইসলাম অদ্বিত।

ডা. তানজীর ইসলাম অদ্বিত বলেন, ডাবের পানি যে শুধু পানীয় হিসেবেই উপকারী তা কিন্তু নয়, এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে খনিজ লবণ ও নানা রকম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। যা অনেক জটিল রোগ নিরাময়ে সাহায্য করে।

ডেঙ্গু চিকিৎসায় ২০২২ সালে তৈরি গাইডলাইনে রোগীদের পর্যাপ্ত তরল খাবার খেতে বলা হয়েছে। এই তরলের পরিমাণ দৈনিক ৮-১০ গ্লাস। তবে তরল খাবার মানে যে শুধু ডাবের পানিই খেতে হবে তা কিন্তু না। তরলের ঘাটতি পূরণে দুধ, ফলের রস, পানি, ভাতের মাড়, ওরস্যালাইন বা বার্লিও খাওয়া যেতে পারে।

ডাবের পানি শরীরের জন্য উপকারী হলেও অতিরিক্ত পান করা উচিত নয়। অতিরিক্ত পান করলে উল্টো ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। শুধু ডাব নয়, শরীরে তরলের ঘাটতি পূরণে যেকোনো স্বাভাবিক তরল খাবারই রোগীকে খাওয়ানো যেতে পারে।

একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ প্রতিদিন অন্তত ২ থেকে আড়াই লিটার পানি পান করতে পারেন। শরীর থেকে ঘামের মাধ্যমে প্রচুর সোডিয়াম বের হয়ে যায়। তাই এই পরিমাণ পানি এবং ঘামের মাধ্যমে বের হয়ে যাওয়া সোডিয়ামের মধ্যে একটা সামঞ্জস্য থাকে। কিন্তু জ্বর হলে এই ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। তাই রোগীকে স্যালাইন দেওয়া হয়, যাতে ০.৯ শতাংশ সোডিয়াম থাকে। কিন্তু পটাশিয়াম শরীর থেকে ঘামের মাধ্যমে বের হয় না, এটি সাধারণত মলের মাধ্যমে বের হয়।

সোডিয়াম, পটাশিয়াম বা ক্লোরাইড শরীরের সাধারণ কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে। তাই শরীরে এইসব উপাদানের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি। এসব উপাদান বেশি নেওয়াও ভালো না, আবার কম হলেও সমস্যা তৈরি হয়। ডাবের পানিতে সোডিয়াম কম কিন্তু পটাশিয়াম বেশি থাকে। পটাশিয়াম যতটুকু প্রয়োজন তারচেয়ে বেশি মাত্রায় নিয়ে ফেললে সেটি কিডনির ওপর চাপ ফেলে। তাই মাত্রাতিরিক্ত ডাবের পানি খাওয়াও উচিত নয়।

ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর খাদ্য তালিকায় স্যুপ, রঙ চা, সুজি, সেমাই, ফলের রস, বার্লি, ভাতের মাড় বা যদি ভাতসহ স্বাভাবিক খাবার খেতে পারেন, সেটাই খাবেন। রোগীর খাবার উপযোগী করে খাবার তৈরি করে দিতে হবে।

রোগী যেন কোনোভাবেই পানিশূন্যতায় না ভোগেন সেই বিষয়টি মাথায় রেখেই খাদ্যতালিকা সাজাতে হবে। ঘরের খাবারকেই রোগীর পথ্য হিসেবে খাওয়ানো উচিত। যেকোনো ফলের শরবত বা লেবুর শরবতও হতে পারে উপাদেয় পানীয়। শুধু ডাবের পানির দিকেই মনোযোগ না দিয়ে অন্যান্য পুষ্টিকর খাবার ও তরল রাখতে হবে খাদ্যতালিকায়।

Comments

The Daily Star  | English

‘This fire wasn’t an accident’: Small business owner’s big dreams destroyed

Once a garment worker, now an entrepreneur, Beauty had an export order ready

5h ago