পূজায় ‘প্যারা’ মিষ্টি খেয়েছেন?

ময়মনসিংহ অঞ্চলে দুর্গাপূজার ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি 'প্যারা'। হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজাকে ঘিরে এই মিষ্টির চাহিদা থাকে ভিন্ন মাত্রায়।
প্রস্তুতকারকরা জানিয়েছেন, গরুর দুধ জ্বাল দিয়ে ঘন করে তৈরি করা হয় এই মিষ্টি। বাজারে থাকা দুর্লভ মিষ্টিগুলো একটি এটি। বছরের অন্যান্য সময় এই মিষ্টি 'ভোগ' হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
৮০ বছর বয়সী পরিমল সরকারের পরিবার শত বছর ধরে মিষ্টি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তিনিও শৈশব থেকেই এর সঙ্গেই আছেন।
পরিমল বলেন, ঐতিহ্যবাহী মিষ্টির মধ্যে প্যারা অন্যতম। এই মিষ্টি পুরোনো দিনের ইতিহাস আঁকড়ে আছে। ময়মনসিংহ অঞ্চলের ঐতিহ্য এই মিষ্টি।
তিনি জানান, কেবল দুধ আর চিনি দিয়ে 'প্যারা' মিষ্টি তৈরি করা হয়। এক সময় প্যারা মিষ্টির ব্যবসা জমজমাট ছিল। সর্বস্তরের মানুষের কাছে এটি জনপ্রিয় ছিল। পূজার পাশাপাশি পহেলা বৈশাখসহ বিভিন্ন উৎসবে এই মিষ্টির আলাদা চাহিদা থাকে।
বিক্রেতারা জানান, সাম্প্রতিক সময়ে উপকরণের দাম বাড়ায় প্যারা মিষ্টির দামও বেড়েছে। এখন এক কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০০-৬০০ টাকায়। বিশেষ অর্ডারে এর দাম হয় ৬৫০ টাকা কেজি।
বর্তমানে দুই ধরনের নকশায় এই মিষ্টি তৈরি করা হয় বলে জানিয়েছেন প্রস্তুতকারকরা।
ময়মনসিংহ নগরীর বড় কালীবাড়ি এলাকার লোকনাথ মিষ্টান্ন ভান্ডারের মালিক প্রীতম সরকার বলেন, পূজা ঘিরে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেই মানুষ এখানে আসেন। তাদের অনেকেই ঐতিহ্যবাহী এই মিষ্টি খেতে আসেন।
প্রস্তুতকারকরা জানান, একসময় জমিদার বাড়ি থেকে এই মিষ্টির জন্য অর্ডার আসত। আবার অনেকে এই মিষ্টি ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিয়ে যেত।
কিন্তু গত চার দশকে ক্রমান্বয়ে প্যারা মিষ্টির চাহিদা কমেছে বলেও উল্লেখ করেছেন তারা।
স্থানীয় শিক্ষক সবিতা রানী কর্মকার (৫৫) বলেন, নতুন প্রজন্মকে এই মিষ্টির সঙ্গে পরিচয় করানো উচিত, যাতে ইতিহাস ও ঐতিহ্য রক্ষা পায়।
অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডা. রঞ্জন মজুমদার বলেন, এই মিষ্টি আমাদের ইতিহাস ও আবেগের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। ময়মনসিংহ অঞ্চল একসময় নানা ধরনের মিষ্টির জন্য বিখ্যাত ছিল। তবে অনেক নামই আজ বিস্মৃতির পথে চলে যাচ্ছে, যার মধ্যে 'প্যারা' অন্যতম।
Comments