সম্পর্কে প্রতারণাকে জেন জি’রা কীভাবে দেখেন

ছবি: সংগৃহীত

কিছুদিন আগেই কোল্ডপ্লে কনসার্টে এক ধুন্ধুমার অবস্থা হয়ে গেল। এক বিলিয়নিয়ার কোম্পানির সিইও'র সঙ্গে তারই প্রতিষ্ঠানের এইচআর হেডকে 'অন্তরঙ্গ' অবস্থায় একসঙ্গে দেখা গেল, দেখলেন বিশ্বের সবাই। এরপর থেকে কারো নজরই সরলো না এই বিষয়টি থেকে। যদিও ব্যক্তিগত, কিন্তু সামাজিক মাধ্যমের যুগে ছড়িয়ে পড়ল ঘটনাটি।

বিষয়টা নিয়ে হাসিঠাট্টা হলেও একটি গুরুগম্ভীর প্রশ্ন এড়ানোর সুযোগ নেই। আর তা হচ্ছে, এখন এই ২০২৫ সালে বসে আমাদের কাছে সম্পর্কে প্রতারণার সংজ্ঞাটা আসলে কেমন? যেহেতু সম্পর্কের ব্যাকরণ মোটেও আর আগের মতো নেই, আগের মতো সহজ, ছকে বাঁধাও নেই নিয়ম নীতি। যতই দিন এগোচ্ছে, বর্তমান প্রজন্মের কাছ থেকে জানা যাচ্ছে নতুন নতুন শব্দ আর মানে। সিচুয়েশনশিপ, গোস্টিং, ব্রেডক্রাম্বিংয়ের মতো নিত্যনতুন টার্মের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছি আমরা। আমরা যারা আশি বা নব্বইয়ের দশকে জন্মেছি, যাদের প্রেমের প্রথম পাঠ হয়তো ল্যান্ডফোনের দিনগুলোতে—তাদের জন্য এই বিষয়গুলো একটু বেশিই অদ্ভুত ঠেকতে পারে। কেননা আদ্যিকালের প্রেমের চিঠি বা ক্রিং ক্রিং টেলিফোন থেকে বেরিয়ে প্রেম এখনো ফেসবুক-ইনস্টার ছোট ছোট বার্তার মতোই ভোল পালটায়।

সম্পর্কে পিছুটান, দায়বোধের জায়গাটুকু বাদ দিয়েও যে শুধু 'সঙ্গে থাকা' যায়, এমন একটি সময়ে দাঁড়িয়ে বোধহয় প্রেম, সম্পর্ক ও এ বিষয়ক বাকি সবকিছুরই নতুন নতুন অর্থ দাঁড়াচ্ছে আমাদের সামনে। এবং এই অর্থের রূপও ব্যক্তিভেদে আলাদা।

২১ বছর বয়সী নায়লার (ছদ্মনাম) মনে হয়, সবারই নিজের জীবনে 'চষে বেড়ানো ও অভিজ্ঞতা নেওয়ার' স্বাধীনতা রয়েছে। তার কাছে মোটেও বিয়ের মতো প্রাতিষ্ঠানিক পরিণতিগুলোই শেষকথা নয়।

নায়লা মজা করে বলেন, 'আমার বয়ফ্রেন্ড যদি সোশ্যাল মিডিয়ায় অন্য মেয়ের স্টোরি বা ছবিতে লাইক দেয়, আমার মনে হয় না এটা "চিটিং"। যদি আমরা দুজন শুধু একে অপরের সঙ্গেই থাকি আর সে অন্য কাউকে ডেটে নিয়ে যায়, তবে আমিও আমার সুবিধামতো চলব!'

নায়লার মতো কারও জন্য সম্পর্কের পরিণতি মানেই বিয়ে নয়। এরচেয়ে বরং নিজেকে আরও শানিয়ে তোলা এবং সফল হওয়াটাই বেশি জরুরি। এবং এসবের পরও যদি মনে হয় সঙ্গীটি জীবনে নতুন কিছু যোগ করবে, তাহলে সে বিয়ে করতে পারে।

২৫ বছর বয়সী ফারহান (ছদ্মনাম) একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে এক্সিকিউটিভ হিসেবে চাকরি করেন। তিনি বিষয়টি একটু অন্যভাবে দেখেন। তার জীবনের বেশিরভাগ সময় অফিসের সহকর্মীদের সঙ্গেই কাটে এবং তাদের বেশিরভাগই বিবাহিত। তাদের দেখে তিনি বুঝেছেন, তাদের জীবনের রোমান্টিক সম্পর্কগুলো খুবই গতিময় এবং তাদের স্বামী বা স্ত্রীর প্রতি বিশ্বস্ততার অভাব রয়েছে।

'সহকর্মীদের সঙ্গে দিনের ১৪ ঘণ্টা সময় কাটানোর পর কাজের জগতের বাইরে গিয়ে রোমান্টিক সম্পর্কে মন দেওয়ার সময় থাকে না। বিশেষ করে বিয়েতে।'

ফারহানও বিভিন্নজনের সঙ্গে একই সময়ে ক্যাজুয়াল ডেটে যান এবং তিনি কোনো দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্কে যেতে আগ্রহও বোধ করছেন না। তাকে যখন সত্যিকারের প্রেমের কথা জিজ্ঞেস করা হলো, তখন তিনি হাসিতে ফেটে পড়লেন!

অবাক হয়ে ফারহান বললেন, '২০২৫ সালেও ওটা আছে নাকি?'

কয়েকবার সিরিয়াস সম্পর্কে থাকার পর তার মনে হয়েছে, একজনের প্রতি বিশ্বস্ত থাকাটা বেশ ঝামেলার কাজ এবং যদি অন্যদের সঙ্গে মেলামেশার সুযোগ থাকে এবং একটি সম্পর্কে এতটা মনোযোগ বা সময় দিতে ইচ্ছা না করে, তবে সেটিই করা উচিত। এবং করপোরেট জগতের চাপের ফলে এগুলো খুব সহজও হয় না।

সাধারণত সম্পর্কে প্রতারণাকে খুবই নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা হয়। যদিও যুগলদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের সমস্যাই থাকতে পারে, তা হোক আর্থিক, পারিবারিক বা এমন কিছু—যা তাদেরকে অন্য কারো দিকে ঠেলে দেয়। কারো কারো জন্য এই জায়গাটাতেই সীমারেখা এঁকে দেওয়া হয়।

একটি সম্পর্কের মৃত্যু বা তাদের মধ্যকার ভালোবাসা বোধহয় তখনই শেষ হয়ে যায়, যখন তৃতীয় ব্যক্তির আগমন ঘটে। এবং জাতিগতভাবে আমরা যতই এগিয়ে যাই না কেন, সম্পর্কের ক্ষেত্রে কিছু সীমারেখা হয়তো লঙ্ঘন করাটা ক্ষতিকর হতে পারে।

তবে সময়ের সঙ্গে সবকিছুর ধারণাই এত বেশি পালটে যায় যে আগের প্রজন্ম এখন অবাক হয়ে দেখেন, বর্তমান প্রজন্মের সদস্যদের প্রেম-ভালোবাসা কিংবা প্রতারণার সংজ্ঞায়ন।

অনুবাদ করেছেন অনিন্দিতা চৌধুরী

Comments

The Daily Star  | English

‘This fire wasn’t an accident’: Small business owner’s big dreams destroyed

Once a garment worker, now an entrepreneur, Beauty had an export order ready

5h ago