লেক্সিংটনে শরতের দিনগুলো

লেক্সিংটন শরৎ, কেন্টাকি শরতের সৌন্দর্য, লেক্সিংটন ভ্রমণ, শরতের দিনগুলো, যুক্তরাষ্ট্রে শরৎ, শরতের প্রকৃতি, লেক্সিংটন অভিজ্ঞতা, শরতের কুমড়ার মেলা, পাম্পকিন প্যাচ কেন্টাকি, লেক্সিংটন ক্যাম্পাস জীবন, শরতের রাত লেক্সিংটন, শরতের স্মৃতি, শরতের আকাশ, শরতে ভ্রমণ,
ছবি: নাদিয়া রহমান

শরতের প্রথম দিনে আমি হাঁটছিলাম কেন্টাকির এক ছোট্ট শহরের নির্জন রাস্তায়। চারপাশে পাতাঝরা গাছ, মাটিতে রঙিন পাতা ছড়িয়ে আছে—যেন কেউ আগেই চিত্র আঁকিয়ে রেখেছে। কানে হেডফোন, হালকা ঠান্ডা বাতাস মুখে লাগছে, আর আমি ভাবছিলাম—এই অনুভবটা ঠিক কেমন? নতুন একটা দেশে, নতুন ঋতু, আর একাকী হাঁটার এই মুহূর্তটা আমার কাছে বইয়ের পাতার কোনো এক চরিত্রের মতোনই ঠেকেছে।

আমি তখন কেবল নতুন এসেছি কেন্টাকিতে। শহরতলীতে একটা ছোট্ট অ্যাপার্টমেন্টে থাকতাম, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পায়ে হাঁটা দূরত্বে। সারাদিনই থাকতো ব্যস্ততা, এসবের মাঝেই শরতের বিকেলগুলো ছিল আমার নিজের জন্য একান্ত সময়। একদিন বিকেলে বইটা বন্ধ করে হাঁটতে বের হলাম। মনে কোনো লক্ষ্য নেই, শুধু হালকা পায়ে রাস্তা মেপে ফেরা। রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে দেখি এক বৃদ্ধা বাগানে কুমড়ো সাজাচ্ছেন, কেউ আবার বারান্দায় বসে হট চকলেট খাচ্ছেন। তখনই মনে পড়তো, দেশের শরতের বিকেলগুলোর কথা।

কেন্টাকির শরৎ এক ধরনের শান্তি নিয়ে আসে। গাছের পাতা যেন একে একে বিদায় নিচ্ছে। কিন্তু সেই বিদায়ে কষ্ট নেই, বরং এক ধরনের সম্মান, এক ধরনের স্বস্তি। সেই প্রথম বুঝেছিলাম, প্রকৃতি আমাদের না বলেই অনেক কিছু শিখিয়ে দেয়। একবার বন্ধুদের সঙ্গে গিয়েছিলাম একটা ছোট শহরের 'পাম্পকিন প্যাচ'-এ। সহজ ভাষায় এর মানে হলো কুমড়োর মেলা! চারপাশে বিশাল আকারের হাজারো কুমড়ো, ছোটরা দৌড়ে বেড়াচ্ছে, কারো হাতে 'ক্যারামেল অ্যাপল', আর সবার চেহারায় এক ধরনের আনন্দ। সন্ধ্যায় ছিল 'বনফায়ার' আর সেই আগুনের চারপাশে গোল হয়ে বসে গরম গরম 'অ্যাপল সাইডার' খাওয়া।

লেক্সিংটন শহরে শরতের রাতগুলোরও ভিন্ন একটি আমেজ আছে। সেখানকার আকাশ আসলে এতটা পরিষ্কার যে পুরো চাঁদটাই দেখা যেত আমার ডর্মের রুমের জানলা দিয়ে। হয়তো পড়ার সেই টেবিলখানায় বসে আমি পড়ছি, আর আমার বইখাতার ওপর চাঁদের আলো এসে ঠিকরে পড়ছে। কখনো কখনো শরতের রাতে হালকা ঠান্ডা বাতাসে বন্ধুরা বেরিয়েছি ঘাসে চাদর বিছিয়ে চাঁদের আলো দেখবার জন্য।

লেক্সিংটন শরৎ, কেন্টাকি শরতের সৌন্দর্য, লেক্সিংটন ভ্রমণ, শরতের দিনগুলো, যুক্তরাষ্ট্রে শরৎ, শরতের প্রকৃতি, লেক্সিংটন অভিজ্ঞতা, শরতের কুমড়ার মেলা, পাম্পকিন প্যাচ কেন্টাকি, লেক্সিংটন ক্যাম্পাস জীবন, শরতের রাত লেক্সিংটন, শরতের স্মৃতি, শরতের আকাশ, শরতে ভ্রমণ,

সবথেকে বেশি মনে পরে, ক্যাম্পাস থেকে পড়ন্ত বিকেলে ফেরার পথে পুরো পথটুকু বিছিয়ে থাকতো লাল-হলুদ-কমলা রঙের পাতায়। সে সময়টা বারবারই মনে হতো, এই বিদেশ-বিভূঁইয়ে যদি নিজের পরিবার-পরিজনেরা থাকতো, তাহলে দেশের জন্য মনটা পড়ে থাকতো না।

বাংলাদেশে শরৎ মানে হয়তো কাশফুল আর নীল স্বচ্ছ আকাশ। কিন্তু লেক্সিংটন শহরের শরৎ মানে একরাশ নীরবতা, পড়ন্ত বিকেলে ধোঁয়া ওঠা কফি কিংবা হট চকোলেটের ঘ্রাণ, আর ডর্মে বন্ধুদের সঙ্গে স্মৃতি, যারা আমার মতোই হাজার হাজার মেইল পাড়ি দিয়ে এখানে এসেছে। সেখানে শরৎ মানে শুধু প্রকৃতির রূপবদল নয়, নিজের জন্যও কিছুটা সময় খুঁজে নেওয়া।

Comments

The Daily Star  | English

Hasina can’t evade responsibility for Khaleda Zia’s death: Nazrul

In 2018, Khaleda walked into jail, but came out seriously ill, he says

31m ago