শাপলার রাজ্য চেচুয়া বিলে গিয়েছেন কখনো

শাপলার রাজ্য চেচুয়া বিল। ছবি: সাদিক খান

বাংলাদেশের প্রতিটি ঋতুরই রয়েছে নিজস্ব অনন্য সৌন্দর্য। বর্ষা শেষে শরতের শুরুতেই প্রকৃতি যেন নতুন সাজে ধরা দেয়। 

এ সময়েই ময়মনসিংহের ত্রিশালের রামপুর ইউনিয়নের চেচুয়া বিল রূপ নেয় শাপলার রাজ্যে। যত দূর চোখ যায় শুধু লাল-সাদা শাপলার মেলা। 

ভোরের আলোয় যখন বিলের পানিতে ফুটে থাকা শতশত শাপলা দাঁড়িয়ে থাকে, মনে হয় যেন প্রকৃতির নিজ হাতে আঁকা এক বিশাল ক্যানভাস।

চেচুয়া বিল যে শুধু শাপলার জন্যই বিখ্যাত তা নয়, গ্রামীণ জীবনের এক অনন্য সমন্বয়। ধানখেত, কাকের ডাক, আর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ছোট ছোট গ্রাম মিলিয়ে পুরো এলাকা যেন এক নিসর্গের ছবি। 

শাপলার রাজ্য চেচুয়া বিল। ছবি: সাদিক খান

বিলের পাড়েই ছোট ছোট নৌকা। মাঝির গুণগুণ সুর আর দুলতে থাকা নৌকার ছন্দে আপনি ভেসে যাবেন শাপলার সমুদ্রে। গাজীপুর থেকে আগত দর্শনার্থী সায়কা আলম বিপাশা বলছিলেন, 'এমন দৃশ্য ছবিতেই দেখেছি। নৌকায় বসে যখন ফুলগুলো আমাকে ঘিরে ফেলল, মনে হলো আমি যেন কোনো স্বপ্নে আছি।'

চেচুয়া বিলে ছবি তুলতে আসা ফটোগ্রাফার সাদিক খান জানান, এই বিলে শাপলার পাশাপাশি নানা প্রজাতির পাখির দেখা পাওয়া যায়। মন খারাপ হলেই তিনি ক্যামেরা নিয়ে ছবি তুলতে চলে যান চেচুয়া বিলে।

কথা হয় স্থানীয় মাঝি জসীমের সঙ্গে। তিনি বলেন, প্রতিদিন অনেক দর্শনার্থী এই বিলে ঘুরতে আসে। কেউ ঘণ্টা চুক্তিতে ঘোরে। আবার কেউ ভাড়া নেয় সারা দিনের জন্য।  

ঢাকা থেকে যেভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে চেচুয়া বিলে যেতে চাইলে মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে ময়মনসিংহগামী বাস ধরতে হবে। সময় লাগবে প্রায় ৪ ঘণ্টা। 
ময়মনসিংহ শহর থেকে লোকাল বাস বা সিএনজি করে ত্রিশাল, আর সেখান থেকে মাত্র ১০-১৫ মিনিটের মধ্যেই পৌঁছে যাবেন শাপলার রাজ্যে। 

বিল ঘুরতে চাইলে সকালে বের হওয়াই সবচেয়ে ভালো, কারণ দুপুরের পর শাপলা ফুলগুলো নুইয়ে পড়ে। 

নৌকা ভাড়া ঘণ্টাপ্রতি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে, দর কষাকষি করলে কমও পাওয়া যায়। 

আর ঘাটে নৌকার সংখ্যা কম। তাই আগে থেকে বুক করে রাখতে চাইলে মাঝিদের নম্বরে যোগাযোগ করতে পারবেন।

যা খাবেন

ঘোরাঘুরির পাশাপাশি এখানকার স্থানীয় খাবারের স্বাদও মন্দ নয়। ত্রিশালের স্থানীয় বাজারের হোটেলগুলোতে গরম ভাতের সঙ্গে দেশি মাছ ভাজা, শাক আর আলু ভর্তা পাওয়া যায়। বিকেলের নাস্তা হিসেবে পাবেন দুধ-চা আর ভাপা পিঠা। 

আর শহরে ফিরলে ময়মনসিংহের বিখ্যাত সব খাবার তো রয়েছে। মণ্ডা, চ্যাঁপার পুলি, মিডুড়ী, খুদের ভাত, চাল কুমড়ার মোরব্বা, লাউয়ের টক খাটাই, কাবাকও, ডালপুরি, সিংগারা এবং চমচম মিষ্টি। বিশেষ করে, কচি কুমড়ো পাতায় চ্যাঁপা শুঁটকির পুর দিয়ে তৈরি চ্যাপার পুলি স্থানীয় ঐতিহ্যের একটি অংশ। তাই হাতে সময় থাকলে উপভোগ করতে পারেন এসব মুখরোচক খাবার।

সতর্কতা

চেচুয়া বিলে গেলে কিছু বিষয় মাথায় রাখা জরুরি। সাধারণত সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত চেচুয়া বিলে প্রচুর শাপলা ফুল ফোটে। তাই এ সময়েই বিলে যাওয়া উত্তম। 

একদম ভোরে গিয়ে ফুল দেখা সবচেয়ে ভালো, তাই দেরি না করাই উত্তম। হালকা আরামদায়ক পোশাক আর স্যান্ডেল পরলে নৌকায় ওঠানামা সহজ হয়। 

এছাড়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ফুল ছেঁড়া একেবারেই উচিত নয়—কারণ এই বিলের সৌন্দর্য টিকে আছে পানিতে ভেসে থাকা ফুলগুলোর মাঝেই।

Comments

The Daily Star  | English

Shibli Rubayat, Reaz Islam banned for life in market over scam

In 2022, asset management firm LR Global invested Tk 23.6 crore to acquire a 51 percent stake in Padma Printers, a delisted company, from six mutual funds it manages

1h ago