‘যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলে না তারা লেখক না’

রাজধানীর বাংলামোটর এলাকায় বিক্ষুব্ধ কবি-লেখক সমাজ ব্যানারে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন, ছবি: স্টার

কোটা আন্দোলন ঘিরে হত্যা, দেশব্যাপী গ্রেফতার ও নিপীড়নের প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ কবি-লেখক সমাজের ব্যানারে বৃষ্টিতে ভিজে পালন করা হয়েছে মানববন্ধন কর্মসূচি। শুক্রবার (২ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর বাংলামোটর এলাকায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সামনে এ মানববন্ধন আয়োজন করা হয়। 

এসময় আন্দোলকারীরা বলেন, 'দেশের পরিস্থিতি দেখে আমরা হতবাক। কোনোভাবেই এটিকে স্বাধীন রাষ্ট্র মনে হচ্ছে না। ঘর থেকে বের হওয়ার উপায় নেই। পুলিশ যাকে-তাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে।'

কথা বলেন গীতিকার শহীদুল্লাহ ফরায়েজী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গবেষক মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান, কবি টোকন ঠাকুর, কথাসাহিত্যিক মোহাম্মদ নাজিমুদ্দিন,  কবি বকুল আশরাফ, আহমেদ স্বপন মাহমুদ, কাজল শাহনেওয়াজ, কথাসাহিত্যিক আশরাফ জুয়েল, কথাসাহিত্যিক সাদাত হোসাইন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গবেষক সরোজ মেহেদী, কথাসাহিত্যিক কিঙ্কর আহসান, লেখক সুদীপ্ত সালাম, কবি জব্বার আল নাঈম, রকিবুল ইসলাম, সাংবাদিক এহসান মাহমুদ, কবি পলিয়ার ওয়াহিদ, রাফসান গালিব, তানিয়া সুলতানা, তানজিম তানিম, শাহ্‌ কামাল, মাসউদ আহমাদ, সোহরাব শান্ত, মোস্তফা মাহাথির, মঈন মুনতাসির, ফরিদুল ইসলাম নির্জন, ইমরান মাহফুজ, সালমান হাবিব, নিমুগ্ন দুপুর, পথিক রানা,ফারুক খান, নাহিদ যাযাবর, হালিমা মুক্তা, নকিব মুকশি, মানজুলুল হক, আবদুল্লাহ আল মামুন, রাব্বি আহমেদ, রাসেল আহমেদ, জুবায়ের ইবনে কামাল ও রিয়াজ ইনসান।

শহীদুল্লাহ ফরায়েজী বলেন, যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে তাদেরকে ভিন্ন ভিন্ন নামে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। ১৯৭১ সাল আর আজকের কি পার্থক্য? মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে সাম্যের জন্য, মানবিক মর্যাদা রক্ষার জন্য, প্রতিটা মানুষের ন্যায় বিচার রক্ষার জন্য। বাংলাদেশ থেকে সাম্য,মানবিক মর্যাদা, ন্যায় বিচার উচ্ছেদ করে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা কেনো বলেন?

টোকন ঠাকুর বলেন, একাত্তরের পরে এমন ঘটনা মানুষ দেখেনি। কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে যা ঘটলো তাতে আমরা স্তব্ধ। এর মাঝে আমরা কোনো হত্যার বিচার চাই না, কার কাছে চাইব? শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমাদের একাত্মতা পোষণ করি। এখন আমাদের কথা বলতে হবে। হত্যার নিন্দা করি কবি লেখক সমাজ। 

ড. মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, স্বাধীন দেশে এমন নির্মমতা মেনে নেওয়া যায় না। নানানভাবে আমরা দেখেছি  স্বজনহারা মানুষ নিস্তব্ধ। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন আবু সাঈদদের পিতা-মাতারা। নিজের সামনে প্রাণ যাওয়া সন্তানের পরিবার বাকরুদ্ধ। হাসপাতালের বিছানায় কাতর অনেকে। মৃত্যুর যন্ত্রণায় ছটফট করা মানুষ ভুলে যাচ্ছে জীবনের স্বাদ। এইভাবে একটা দেশ চলতে পারে না। এর একটা সমাধান চাই আমরা।

কথাসাহিত্যিক সাদাত হোসাইন বলেন, যে চেতনায় স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছিলাম, যে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় নাগরিক অধিকার নিয়ে থাকতে চেয়েছিলাম, তা ক্রমশই হারিয়ে যাচ্ছে, গেছে। এখন আমরা এমন এক স্বাধীন, গণতান্ত্রিক দেশে বাস করি যেখানে বলতে ভয়, লিখতে ভয়, দাবি জানাতে ভয় পাই। তাদের সমালোচনা করা যাবে না। এ কেমন স্বাধীনতা? এমনতো চলতে পারে না। ছাত্ররা তাদের ন্যয়সঙ্গত দাবী করতে পারবে না? এইজন্য গুলি করবে? এ কেমন দেশ? মানবিক মানুষ হিসেবে হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।

কথাসাহিত্যিক কিঙ্কর আহসান, গণগ্রেফতারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতেই হবে। যেখানে লড়াইটা ন্যায়ের, বেঁচে থাকার সেখানে অধিকারের জন্য পথে নামতে হবে। আমরা কারও প্রতিপক্ষ নই। আমরা শুধু চাই ন্যায়বিচার, শান্তি আর স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকতে। এইটুকুন আমাদের একজন নাগরিক হিসেবে অবশ্যই প্রাপ্য।

ইমরান মাহফুজ বলেন, সাধারণ একটি বিষয়কে অহেতুক দীর্ঘ করে হত্যার দিকে নিয়ে গেছে সরকার। আজও যা করছে তা অপ্রত্যাশিত। আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মা পোষণ করি। কিন্তু হত্যার বিচার চাই না, বিচার কার কাছে চাইব? আমরা বিক্ষুব্ধ কবি লেখক সমাজ। অন্যদিকে যারা এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলে না তারা লেখক না। 

কর্মসূচির অন্যতম সমন্বয়ক লেখক ও সাংবাদিক আবিদ আজম বলেন, জাতির পতাকা আজ খামছে সেই পুরনো শুকুন। তাই শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে রাজপথে দাঁড়িয়েছি আমরা। প্রকাশক মোরশেদ আলম হৃদয়, লেখক ইবরাহীম নীরবসহ আটক সবার মুক্তি চাই।

Comments

The Daily Star  | English
gold price rises in Bangladesh

Gold shines through 2025 amid price volatility

If there were a “metal of the year” award, gold would be a strong contender, maintaining an exceptional run even on the final trading day of 2025..Businesspeople said the retail gold market in Bangladesh has remained unstable over the past few months, driven by fluctuating global prices, s

16m ago