ব্রাহ্মন্দীতে একমাসে ২ জনকে পিটিয়ে হত্যা, এবার প্রাণ হারালেন ইউপি সদস্য

নিহত মো. সোহেল। ছবি: সংগৃহীত

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের ব্রাহ্মন্দীতে এক ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যকে হাত-পা বেঁধে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। চলতি মাসে এই ইউনিয়নে এটি পিটিয়ে হত্যার দ্বিতীয় ঘটনা।

আড়াইহাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার নাসির উদ্দিন জানান, আজ সোমবার সকালে উপজেলার ব্রাহ্মন্দী ইউনিয়নের বালিয়াপাড়া এলাকায় স্থানীয়রা তাকে পিটিয়ে হত্যা করে।

নিহত মো. সোহেল (৩৮) ওই গ্রামের প্রয়াত মকবুল হোসেনের ছেলে এবং ব্রাহ্মন্দী ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

ঘটনার প্রাথমিক তদন্তের বরাতে ওসি নাসির উদ্দিন বলেন, 'বালিয়াপাড়ায় একটি মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছে। আজ সকালে মার্কেটের মালিক শরীফ হোসেনের কাছে চাঁদা দাবি করেন সোহেল। পরে শরীফের পরিবারের লোকজন ঘটনাস্থলে এলে সোহেলের বাকবিতণ্ডা হয় এবং তারা গ্রামের আরও মানুষকে ডেকে আনেন।'

ওসি বলেন, 'সোহেল মেম্বারের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য গ্রামবাসী খুবই ক্ষুব্ধ ছিল। সেই ক্ষোভ থেকেই গ্রামের মানুষ তাকে বেঁধে পিটিয়ে হত্যা করেছে।'

এ বিষয়ে জানতে মার্কেটের মালিক শরীফের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

নিহত সোহেল রানার ছোট ভাইয়ের স্ত্রী জান্নাত আক্তার চৈতি বলেন, 'সকাল ৭টার দিকে একজনের ফোন পেয়ে সোহেল ভাই বেরিয়ে যান। ঘণ্টা দেড়েক পরেই তার মৃত্যুর খবর পাই।'

তিনি বলেন, 'তার বিরুদ্ধে যে চাঁদাবাজির অভিযোগ করা হচ্ছে, এগুলো সব মিথ্যা। এলাকার কিছু মাদক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে কথা বলতে শুরু করছিলেন সোহেল ভাই। এই কারণেই তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।'

সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পুলিশ খবর পেয়ে বালিয়াপাড়া বটতলা বাসস্ট্যান্ড থেকে সোহেলের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে পাঠায়।

ওসি জানান, তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে এবং মুখ থেঁতলে দেওয়া হয়েছে।

সোহেলের বিরুদ্ধে মাদক, ডাকাতি, চাঁদাবাজিসহ অন্তত ১৫টি মামলা রয়েছে বলে জানায় পুলিশ।

গত ১৩ জুন কুমিল্লার দাউদকান্দি এলাকায় র‌্যাব-১১-এর এক অভিযানে গ্রেপ্তারও হন তিনি। পরে জামিনে বেরিয়ে আসেন।

স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ সূত্র জানায়, এক সময় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন সোহেল। ব্রাহ্মন্দী ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্য পদও ছিল তার। নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবুর ঘনিষ্ঠ অনুসারী ছিলেন তিনি। পরে বাবুর সঙ্গে দ্বন্দ্ব হলে ২০২৩ সালের অক্টোবরে সোহেলের বাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনাও ঘটে। ওই সময় সোহেল এই ঘটনার জন্য স্থানীয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের অভিযুক্ত করেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বালিয়াপাড়া গ্রামের অন্তত দুইজন বাসিন্দা দাবি করেন, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর কিছুদিন আত্মগোপনে থাকলেও পরে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলেন সোহেল। তারপর থেকেই এলাকায় ছিল তার অবাধ বিচরণ। তবে তার সন্ত্রাসী কার্যক্রমের কারণে গ্রামবাসী ক্ষুব্ধ ছিল। জুনে গ্রেপ্তার হওয়ার পর গত ৮ সেপ্টেম্বর তার বাড়িতে আগুনও দেওয়া হয়।

সোহেলের বাড়িতে আগুনের ঘটনার কথা স্বীকার করলেও থানায় কোনো মামলা হয়নি বলে জানান আড়াইহাজার থানার ওসি খন্দকার নাসির উদ্দিন।

সোহেলকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।

এর আগে গত ৮ সেপ্টেম্বর রাতে ব্রাহ্মন্দী ইউনিয়নের প্রভারকরদী গ্রামে মো. আয়নাল হোসেন নামে ডাকাতি মামলার এক আসামিকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। আয়নালকে তার বাড়ির ১০০ গজের মধ্যেই হত্যা করা হয়।

Comments

The Daily Star  | English

Hasina can’t evade responsibility for Khaleda Zia’s death: Nazrul

In 2018, Khaleda walked into jail, but came out seriously ill, he says

6h ago