ডেইলি স্টার-প্রথম আলোয় হামলাকারীদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা খুঁজছি না, এরা দুষ্কৃতিকারী: ডিএমপি

ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

রাজধানীর কারওয়ানবাজারে প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার কার্যালয়ে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনায় জড়িত দুষ্কৃতিকারীদের বিচারের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ।

'রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা আমি খুঁজতে চাচ্ছি না। এরা দুষ্কৃতিকারী, তারা আইন ভঙ্গ করছে, আইন নিজের হাতে তুলে নিয়েছে। বাংলাদেশের প্রচলিত যে আইন, যে বিচার ব্যবস্থা, সে বিচার ব্যবস্থায় তাদের বিচার নিশ্চিত করা হবে। সে যে দলেরই হোক, যে মতেরই হোক,' গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের রাজনৈতিক পরিচয় আছে কি না জানতে চাইলে এ কথা বলেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্স) এস এন মো. নজরুল ইসলাম।

গণমাধ্যমের ওপর আরও হামলার আশঙ্কার বিষয়ে তিনি বলেন, 'আমাদের কাছে এ রকম আপাতত তথ্য নেই। যদি এ রকম তথ্য পাই, অবশ্যই আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।'

মব-ভায়োলেন্স প্রতিরোধে পুলিশের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হলে এই কর্মকর্তা গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, 'আমরা সক্ষম। সব সময় সব ঘটনা আমরা প্রতিহত করতে পারব, বিষয়টা এ রকম না। যদি বিগত দিনের কথা বলি, তাহলে দেখেন যখন পাবলিক সেন্টিমেন্ট একটা গ্রো করে, এটাকে রেজিস্ট করার জন্য রাষ্ট্রীয় যে সক্ষমতা, সেটা রাষ্ট্র তো সর্বোচ্চ পর্যায়ে সেটার ব্যবহার করে। কারওয়ান বাজারের যে ঘটনাটা, ওখানে যে অবস্থা ছিল, এটার অন্তরালে আরও কিছু বিষয় আছে।'

'আমরা যদি ওখানে অ্যাকশনে যেতাম, তাহলে গুলি হতো, দুই-চারজন মারা যেত। পাল্টা তারা পুলিশকে...আমার ওখানে যে পুলিশ ফোর্স ছিল, পুলিশ ফোর্সের ওপর আক্রমণ করতো এবং আমরা জানি না যে তাদের মনের ভেতরে কী ছিল। যদি পুলিশ দুই-চারজন সদস্য সেদিন নিহত হতো, তাহলে আপনারা জানেন যে, মাত্র এক বছর আগে বিরাট একটা ট্রমা থেকে আমরা তাদের এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছি। সামনে ইলেকশন, এই পুলিশের যদি আবার নতুন করে ক্যাজুয়ালটি হয়, এই পুলিশ দিয়ে আমি সামনে এগোতে পারবো না। যে কারণে ওখানে আমরা অ্যাকশনে যেতে পারিনি,' যোগ করেন নজরুল।

তিনি আরও বলেন, 'হিউম্যান লাইফের কোনো অ্যাক্সিডেন্ট হয় নাই। এটা আমি বলব যে, এই এত বড় একটা ইনসিডেন্টের আমাদের এটা অ্যাচিভমেন্ট যে, কোনো ধরনের ক্যাজুয়ালটি ছাড়া জিনিসটাকে সামলানো গেছে। সম্পদ কিছু গেছে, ক্ষতি হয়েছে, সেটা হয়তো পূরণ করা সম্ভব। কিন্তু একটা হিউম্যান লাইফ যখন লস্ট হয়, এটা কোনো কিছুর বিনিময়ে আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব না। যে কারণে আমরা ওখানে অ্যাকশনে যাইনি।'

তার মানে জিনিসটা দাঁড়াচ্ছে যে, আপনারা আসলে সেদিন অ্যাকশনেই যাননি—গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে নজরুল বলেন, 'অ্যাকশন গেছি, যতটুকু আমরা প্রয়োজন মনে করেছি। যতটুকু আমাদের অবস্থা ছিল। সর্বোচ্চ অ্যাকশন যেটা, গুলি করা পর্যন্ত যেতে পারতাম। আমরা কিন্তু আমরা ওটা অ্যাভয়েড করার চেষ্টা করেছি, কারণ যে পরিমাণ ওখানে জনবল ছিল, পাবলিক ছিল, চার-পাঁচ হাজারের মতো, ওখানে আমার ৫০-১০০ জন ফোর্স নিয়ে অ্যাকশনে গেলে পুলিশের এবং পাবলিকের বোথ সাইড ক্যাজুয়ালটি হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। পরিস্থিতি বিবেচনা অনেক সময় স্থান-কাল-পাত্র ভেদে আমাকে অ্যাকশনটা নিতে হবে। আমি ইচ্ছা করলেই সব জায়গায় ফায়ার ওপেন করতে পারবো না। এটা করা উচিতও না।'

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'পুলিশ তো ঘটনার আগেই পৌঁছেছে। পুলিশ এটা প্রটেক্ট করার চেষ্টা করেছে। প্রথম পুলিশ বাধা দিয়েছে, পুলিশ পারে নাই। পুলিশ এক পর্যায়ে মাফ চেয়েছে  করজোড়ে যে, আপনারা এই কাজটা করবেন না। কিন্তু আমাদের অ্যাকশন নেওয়ার মতো সেখানে অবস্থা ছিল না।'

'গুলির আগে যে স্টেপ, টিয়ার শেল মারা, গ্যাস মারা, সাউন্ড গ্রেনেড মারা, ওইখানে সেই অবস্থা ছিল না। আমার পুলিশের ক্যাজুয়ালটি হতো,' যোগ করেন তিনি।

এই ঘটনাগুলো ঘটার ১০ মিনিট বা আধা ঘণ্টা আগে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়া হচ্ছে এবং খুবই সুপরিচিত ব্যক্তিরা এই স্ট্যাটাসগুলো দিচ্ছেন এবং বলছেন, যাও এটা ভেঙে আসো, ওটা ভেঙে আসো, পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেবে কি না, জানতে চাইলে এই পুলিশ কর্মকর্তা পরামর্শ দিয়ে বলেন, 'প্রযুক্তির অসুবিধা হচ্ছে মুহূর্তের মধ্যে মিসইনফরমেশন-ডিসইনফরমেশনগুলো ছড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে, ভাইরাল করে দেওয়া যাচ্ছে এবং একটা গোষ্ঠী ওই উসকানিটাকে নিয়ে দেশে একটা ভ্যান্ডালিজম করার সুযোগটা গ্রহণ করছে। আমাদের চেয়ে আপনাদের আরও বেশি সচেতন ভূমিকা পালন করা উচিত। কারণ আপনারা হচ্ছেন মিডিয়াম্যান। আপনাদের সবাই চেনে। আমাদেরকে কিন্তু বেশি চেনে না। আপনারা যদি এই ভুল তথ্যগুলো, অপপ্রচারগুলো যদি বন্ধ করতে পারেন বা একটা ভুল তথ্য যখনই প্রচার হচ্ছে, ওটার কাউন্টার দেন যে, না ঘটনাটা এটা না, প্রকৃত ঘটনাটা এটা ছিল। যদি মিডিয়াগুলোতে প্রচার করেন, তাহলে এটা কিন্তু অনেকাংশে প্রতিরোধ করা সম্ভব।'

পুলিশের ভূমিকা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'একটি মামলায় চারটি আইন যুক্ত করা হয়েছে। এত বড় মামলা এর আগে হয়েছে কি না, আমি জানি না। পেনাল কোড, স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্ট, সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট; যারা ফেসবুক-অনলাইনে উসকানি দিয়ে এটাকে এক্সিলারেট করেছে এবং দেশের নিরাপত্তা-সার্বভৌমত্ব বিঘ্নিত করার জন্য যারা চক্রান্ত করছে, তাদের জন্য অ্যান্টি টেররিজম অ্যাক্ট অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আমরা এটা অ্যাকশন নেব।'

ব্রিফিংয়ে তিনি জানান, হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে এখন পর্যন্ত মোট ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে থানা পুলিশ ১৩ জন, সিটিটিসি তিনজন ও ডিবি একজনকে গ্রেপ্তার করেছে। এ ছাড়া, ভিডিও ফুটেজ থেকে এখন পর্যন্ত ৩১ জন চিহ্নিত করা হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

Khaleda Zia’s body being taken to Manik Mia Avenue for janaza

Janaza will be held at Manik Mia Avenue at 2pm

1h ago

Farewell

10h ago