ময়মনসিংহে দিপু দাস হত্যা: ৪ আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি
ময়মনসিংহের ভালুকায় দিপু চন্দ্র দাসকে পিটিয়ে হত্যার পর মরদেহে আগুন দেওয়ার ঘটনায় এ পর্যন্ত ১৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে ৪ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
ময়মনসিংহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আব্দুল্লাহ আল মামুন দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এ ঘটনায় গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে আরও ৬ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এর আগে গত শনি ও রোববার পুলিশ ও র্যাবের পৃথক অভিযানে মোট ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। আদালত তাদের প্রত্যেকের ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মামুন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, '১২ জনের মধ্যে রিমান্ড শেষে গতকাল ৬ জনকে আদালতে উপস্থিত করা হলে ৪ জন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তারা এ ঘটনায় নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর হওয়ায় আমরা জবানবন্দিগুলো গভীরভাবে পর্যালোচনা করছি।'
তিনি আরও বলেন, 'বিভিন্ন মহল থেকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ উঠলেও এর সত্যতা এখনো যাচাই করা যায়নি। এ সংক্রান্ত কোনো অডিও বা ভিডিও প্রমাণ পাওয়া যায়নি।'
আগামী রোববার রিমান্ড শুনানির দিন নির্ধারণ করে গতকাল বৃহস্পতিবার আদালত গ্রেপ্তারকৃত ৬ জনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বলেও জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মামুন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গত ১৮ ডিসেম্বর রাত ৮টার দিকে ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগে কারখানার ভেতরে একদল শ্রমিক দিপুকে মারধর শুরু করেন।
ময়মনসিংহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, মারধরের একপর্যায়ে হামলাকারীরা দিপুকে কারখানার বাইরে নিয়ে যায়। সেখানে স্থানীয় লোকজনও তাদের সঙ্গে যোগ দেয় এবং পিটুনিতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পরে হামলাকারীরা তার মরদেহে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে মরদেহ আংশিক পুড়ে যায়। পুলিশ পরে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়।
দিপু হত্যাকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে গত শুক্রবার নিহতের ভাই ১৪০-১৫০ জন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিকে আসামি করে ভালুকা থানায় মামলা করেন।
মামলাটি বর্তমানে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তদন্ত করছে এবং পুলিশ সুপারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তত্ত্বাবধান করছেন। এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।
তদন্তে নেমে এ ঘটনায় 'ধর্ম অবমাননা'র কোনো প্রত্যক্ষ প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছিল র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
ময়মনসিংহ র্যাব-১৪ কোম্পানি কমান্ডার মো. সামসুজ্জামান গত ২০ ডিসেম্বর জানান, নিহত ব্যক্তি ধর্ম অবমাননা করে ফেসবুকে কিছু লিখেছেন, এমন তথ্য পাওয়া যায়নি। স্থানীয় লোকজন ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেও এমন কিছু পাওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, 'সবাই এখন বলছেন, তারা তাকে (দিপু) এমন কিছু বলতে নিজেরা শোনেননি। (ধর্ম অবমাননার বিষয়ে) নিজে শুনেছেন বা দেখেছেন এমন কাউকে পাওয়া যায়নি।'

Comments