দেশের ‘সবচেয়ে বড়’ ঘোড়ার হাট

তুলসিপুরের ঘোড়ার হাট। ছবি: শহিদুল ইসলাম নিরব/স্টার

ঐতিহ্য ধরে রেখে গত ৫০ বছর ধরে দেশের 'সবচেয়ে বড়' ঘোড়ার হাট বসে জামালপুরে।

প্রতি বৃহস্পতিবার দুপুরে শুরু হয়ে হাটটি চলতে থাকে রাত ১০টা পর্যন্ত।

সদর উপজেলার রশিদপুর ইউনিয়নের তুলসিপুর গ্রামটি জেলা শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণে। এখানেই হাটে ঘোড়া কেনাবেচা করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসেন ক্রেতা-বিক্রেতারা।

দেশের ঘোড়ার হাটগুলোর মধ্যে তুলসিপুরের এই হাটটি সবচেয়ে জনপ্রিয়, সবচেয়ে পুরনো এবং সবচেয়ে বড় বলে দাবি করে হাট কর্তৃপক্ষ।

এখানে স্থানীয়দের পাশাপাশি মধুপুর, ধনবাড়ী, রংপুর, দিনাজপুর, রাজীবপুর, রউমারি, কাজীপুর, বগুড়া, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, শেরপুর, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকাররা আসেন ঘোড়া কেনাবেচা করার জন্য।

৮ হাজার টাকা থেকে শুরু করে লক্ষাধিক টাকা দামের ঘোড়া পাওয়া যায় এই হাটে। তবে বেশি পাওয়া যায় মাদিঘোড়া, টাট্টু, খাসি, বাহাদুর, রাজা, তাজিয়া, পারলে ঠেকাও, বিজলি, রানি, রাজ ও কিরণমালা।

হাটে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় গাড়ির ঘোড়া। এই গাড়ির ঘোড়ার শক্তি পরীক্ষা করার জন্য রয়েছে রিমান্ডের ব্যবস্থা। রিমান্ডে যে ঘোড়া সবচেয়ে বেশি শক্তি দেখাবে, সেটি সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হয়।

ঘোড়ার রিমান্ডের জন্য হাটের ভেতর তৈরি করা আছে কর্দমাক্ত পানির রাস্তা, বালুর রাস্তা, উঁচু নিচু খাদ। সেই রাস্তায় ১৭/১৮ জন মানুষ উঠিয়ে ঘোড়ার গাড়ি টানা হয়। যে ঘোড়া বালু ও পানির মধ্যে গাড়ি টেনে নিতে সক্ষম হয়, সেটির শক্তি বেশি বলে বিবেচিত হয়। এ ছাড়া, শক্তি পরীক্ষার জন্য ঘোড়াকে উঁচু পাড় বেয়ে ওঠানামা করানো হয়।

সম্প্রতি হাটে আসা বকশীগঞ্জ উপজেলার মেরুরচর গ্রামের আল আমিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ছোট থেকেই ঘোড়া পালন করি। ঘোড়া দৌড়ানো আমার শখ। গতমাসে আমার ঘোড়াটি মরে গেছে, তাই আরেকটি কিনতে এলাম।'

তিনি আরও বলেন, 'এখানে বহু জাতের ঘোড়া পাওয়া যায়। তাই দেখে-শুনে নিজের সাধ্যের মধ্যে ভালো ঘোড়া বেছে নেওয়ার সুযোগ থাকে।'

সরিষাবাড়ির মানিকপটলের বাসিন্দা নান্নু শেখ বলেন, 'আমি ঘোড়া দিয়ে গাড়ি টানি। এটাই আমার জীবিকা। আমার আগের ঘোড়াটা আর ভালোভাবে গাড়ি টানতে পারছে না। তাই এটা বিক্রি করে আরও শক্তিশালী ঘোড়া কিনতে এসেছি।'

হাট কমিটির সভাপতি সারোয়ার হোসেন বলেন, 'তুলসিপুরের এই হাটটি ঐতিহ্যবাহী হাট। এটা দেশের সবচেয়ে পুরনো ও বড় ঘোড়ার হাট। প্রতি হাটে প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ ঘোড়া বিক্রি হয় এখানে।'

এ বছর হাটটি ১৪ লাখ টাকায় ইজারা নেওয়া হয়েছে বলে জানান রওনা (হাসিল) লেখক ফরিদুল ইসলাম।

তিনি আরও জানান, তারা প্রতি হাজারে ৫০ টাকা করে রওনা নিয়ে থাকেন। তবে সর্বনিম্ন রওনা ২০০ টাকা নেন।

ঘোড়ার পাশাপাশি এই হাটে বেচাকেনা হয় ঘোড়ার গাড়ি, লাগামসহ নানান সরঞ্জাম।

জামালপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লিটুস লরেন্স চিরান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এটি জেলার ঐতিহ্যবাহী হাট। এই হাটে সারা দেশ থেকে মানুষ আসেন ঘোড়া বিক্রি করতে, কিনতে। হাটটির উন্নয়নে আমরা বেশ কিছু কাজ করব শিগগির।'

Comments

The Daily Star  | English

Hasina can’t evade responsibility for Khaleda Zia’s death: Nazrul

In 2018, Khaleda walked into jail, but came out seriously ill, he says

7h ago