বিদ্যুৎকেন্দ্রের পুরো লাইফসাইকেলে রাশিয়া বাংলাদেশের পাশে থাকবে: পুতিন

রাশিয়ার সোচি শহর থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি

পারমাণকিব বিদ্যুৎ প্রকল্পে দুই দেশের স্বার্থ রয়েছে উল্লেখ করে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, 'এটি পরস্পরের জন্য সহযোগিতাকে আরও গভীর করেছে এবং বাংলাদেশের অর্থনীতির নিরাপত্তায় বড় অবদান রাখছে।'

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের 'ফ্রেশ নিউক্লিয়ার ফুয়েল' বা ইউরেনিয়াম হস্তান্তর অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

পুতিন বলেন, 'আমি জোর দিয়ে বলব যে, বাংলাদেশ আমাদের পরীক্ষিত বন্ধু ও পুরোনো অংশীদার। যার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক সমতা, পরস্পরের জন্য শ্রদ্ধা ও স্বার্থ মেনে নেওয়ার ভিত্তিতে নির্মিত। রাশিয়া-বাংলাদেশের সম্পর্কের ভিত্তি ৫০ বছর আগে স্থাপন করা হয়েছে। ১৯৭০-এর দশকের শুরুতে। যখন সোভিয়েত ইউনিয়ন পূর্ব বাংলার মানুষকে তাদের স্বাধীনতা, সংগ্রামে এবং তার পরে নতুন রাষ্ট্রের গোড়াপত্তনে সমর্থন প্রদান করেছে।' 

'যে দেশগুলো নবজাত রাষ্ট্রেকে সর্বপ্রথম স্বীকার করল, আমাদের দেশটি তাদের অন্যতম ছিল। এর পরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে যোগদান করেছে। বড় শিল্প আর বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো নির্মাণ করতে সাহায্য করেছে। যা বাংলাদেশের জনগণের জন্য আজকে উপকারী।' 

তিনি বলেন, 'গত বছরে আমাদের দুদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তি ছিল। বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের মস্কোতে ঐতিহাসিক সফরেরও সুবর্ণজয়ন্তী ছিল। তিনি আমাদের দুই দেশের মধ্যে সার্বিক সহযোগিতার জন্য অনেক কিছু করেছেন।'  

শেখ হাসিনার উদ্দেশে তিনি বলেন, 'আপনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদে থেকে আপনার পিতার কাজ সফলভাবে ও সম্মানের সাথে অব্যাহত রাখছেন।' 

তিনি বলেন, 'রাশিয়া-বাংলাদেশের সম্পর্কের একটি উজ্জ্বল উদাহরণ হলো, সবচেয়ে প্রধান যৌথ প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন। পাবনা জেলায় রাশিয়ার পরিকল্পিত পারমাণকিব বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ।' 

'আমি মনে করিয়ে দিতে চাই যে, ২০১৩ সালে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ শুরু হয়। ২০১৭ সালে পূর্ণ মাত্রার গবেষণামূলক ও প্রস্তুতির কাজ শেষ হলে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের ভিত্তির ঢালাই কাজ শুরু হয়।' 

'আমি জোর দিচ্ছি যে, বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণের পুরো মেয়াদে আমরা মহামান্য শেখ হাসিনার সাথে রূপপুর প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যক্তিগত নিয়ন্ত্রণ রাখছি। একই সময়ে দুটি ইউনিট নির্মিত হচ্ছে।' 

'প্রথম ইউনিটের ফিজিক্যাল স্ট্যার্টআপ আগামী ২০২৪ সালে এবং দ্বিতীয় ইউনিটের স্ট্যার্টআপ ২০২৬ সালে করা হবে বলে জানান তিনি। প্রকল্পটি পূর্ণ মাত্রায় পরিচালনার পরে এই কেন্দ্রটি বাংলাদেশের বিদ্যুৎ চাহিদার ১০ শতাংশ মেটাবে। এটা একটা বড় সংখ্যা।' 

এটি বাংলাদেশের দ্রুত বৃদ্ধিমূলক অর্থনীতির চাহিদা পূরণ করবে এবং কয়লানির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্রর ওপর নির্ভরতা কমাবে বলেও জানান তিনি।

নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র অবশ্যই কার্বন নির্গমন করবে না। যেটা পরিবেশের জন্য খুব ভালো হবে। মানুষের স্বার্থের জন্য ভালো হবে, জনগণের ভালো হবে বলে জানান পুতিন। 

রাশিয়া ও বাংলাদেশের পারমাণবিক প্রকৌশলীরা, নির্মাণকারীরা, শ্রমিকরা যৌথভাবে পুরোদমে কাজ করছে এবং শিডিউল অনুযায়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ কাজ করা হচ্ছে। প্রতিদিন নির্মাণস্থলে শ্রমিকের সংখ্যা ২০ হাজারের বেশি। তাদের বেশিরভাগ হলো বাংলাদেশের নাগরিক। এই প্রকল্প বাংলাদেশের অনেক কারখানায় অর্ডার দিচ্ছে, যার ফলে সারা দেশের অনেক মানুষ কাজ পেয়েছে বলেন পুতিন। 

'নির্মাণ কাজ, মালামাল সরবরাহ, পরিবহন ও অন্যান্য সেবা দেওয়ার জন্য স্থানীয় কোম্পানিগুলো প্রকল্পের জন্য কাজ করছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে আমোদের ভারতীয় বন্ধুগণও সাহায্য করছে।' 

পুতিন বলেন, 'পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের সময় অত্যাধুনিক প্রকৌশলীর সিদ্ধান্ত ও প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। নিরাপত্তা ও পরিবেশগত বিষয়ে উচ্চতর নিয়ম পালন করে কেন্দ্রটি নির্মাণ ও পরিচালনার জন্য প্রস্তুতি আন্তর্জাতিক পরমাণু সংস্থার নিয়ম ও সুপারিশ মেনে করা হচ্ছে।'

রাশিয়া শুধু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণই করে না, এই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পুরো লাইফসাইকেলই আমরা বাংলাদেশ অংশীদারদের সমর্পণ করব। পাশে থাকব বলেন, পুতিন।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন আরও বলেন, 'পারমাণবিক জ্বালানির টেকসই সরবরাহ, কারিগরি সেবা এবং ব্যবহৃত পারমাণবিক জ্বালানি ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব রাশিয়া গ্রহণ করেছে।'

  

Comments

The Daily Star  | English

US officials preparing for possible strike on Iran in coming days, Bloomberg reports

Iran and Israel continue to attack each other on Wednesday night, as Donald Trump weighs US involvement

8h ago