অবরোধে ভিক্ষা করতে হুইলচেয়ার নিয়ে মহাসড়কে

অবরোধের মধ্যেই রংপুর-বগুড়া মহাসড়কে হুইলচেয়ার নিয়ে বের হয়েছেন বৃদ্ধ লতিফ ও তার স্ত্রী। বৃদ্ধ হাত দিয়ে প্যাডেল ঠেলছেন আর স্ত্রী গাড়ি সোজা রাখতে ধরে রেখেছেন হাতল। ছবি: মোস্তফা সবুজ/স্টার

রংপুর থেকে গত শুক্রবার বগুড়ার উদ্দেশে হুইলচেয়ারের মতো দুই চাকার একটি যানে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন আব্দুল লতিফ (৬৮) ও তার স্ত্রী নাজমা আক্তার (৪৫)। 

আজ বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টার দিকে বগুড়া সদর উপজেলার দীঘলকান্দি এলাকায় রংপুর-বগুড়া মহাসড়কে দেখা হয় এই দম্পতির সঙ্গে।

আব্দুল লতিফের দুই হাত ও পা কিছুটা অসাড়। হাতের সামনের আঙুলগুলো অনেকটা কোঁকড়ানো। সেই হাতেই গাড়ির বিশেষ প্যাডেল ঠেলছেন লতিফ। গাড়ি সঠিকভাবে পরিচালনা করতে হাতল ধরে রেখে স্বামীকে সাহায্য করছেন নাজমা আক্তার।

লতিফ দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, চলমান অবরোধের মধ্যে ভিক্ষাবৃত্তির উদ্দেশে রংপুরের মেয়ের বাড়ি থেকে এই বিশেষ ভ্যানে মহাসড়ক ধরে রওনা দিয়েছিলেন। এই গাড়িই তাদের ঘর-সংসার।

পথে যেখানে রাত হয়েছে সেখানেই রাত পার করতে হয়েছে এক দম্পতিকে। ছবি: মোস্তফা সবুজ/স্টার

গত কয়েকদিন মহাসড়কের আশপাশে সাহায্য চেয়েছেন পথচলতি মানুষের কাছে। পথে যেখানে রাত হয়েছে সেখানেই থেকেছেন তারা।

লতিফ বলেন, 'সারাদিন ভিক্ষা করে ৩০০-৪০০ টাকা রোজগার হয়। তবে কোনোদিন ১০০ টাকাও হয় না। তখন দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়ায় খেয়ে-পরে আর কিছুই থাকে না।' 

জানালেন, দিনে ৩০০ টাকা রোজগার হলে খাবার খরচেই লেগে যায় ২০০ টাকার বেশি। তবুও হাতে কিছু টাকা থেকে যায়। কিন্তু কম রোজগার হলে হাতে কিছুই থাকে না। 

ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'ভিক্ষা করে দুই বছর আগেও দিনে ১০০-১৫০ টাকা থেকে যেত। বাড়তি টাকা মেয়েকে দিতে পারতাম।'

নাজমা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এখন এক কেজি চাল বিক্রি করে এক কেজি আলুই হয় না। সব কিছুর দাম বেড়ে গেছে। রাস্তায় বের হলে রান্না না করে হোটেলেই খেতে হয় আমাদের।'

মোবাইল ফোন আছে কি না, জানতে চাইলে নাজমা ছোট একটি বাটন ফোন বের করে দেখান। জানালেন, ফোনে টাকা নেই। নম্বরও মুখস্থ নেই তার।

বৃদ্ধি লতিফ জানান, তাদের বাড়ি রংপুরের মডার্ন এলাকায়। গত প্রায় ৪০ বছর ধরে তিনি প্রতিবন্ধী অবস্থায় দিনযাপন করছেন। হাঁটতে পারেন না একেবারেই। 

কুষ্ঠ রোগ থেকে ধীরে ধীরে তার হাত-পা অসাড় হয়ে গেছে বলে জানালেন তিনি। হুইলচেয়ারের প্যাডেল ঘোরালে হাতে ব্যথা হয়। ওষুধ খেয়ে সেই ব্যথা কমান বৃদ্ধ লতিফ।

তিনি জানান, প্রায় ১৮ বছর আগে প্রথম স্ত্রী মারা যান। সেই সংসারের দুই সন্তানের মধ্যে ছোট সন্তান মারা গেছে। বড়মেয়ে শারমিনকে বিয়ে দিয়েছেন রংপুরেই। 

কিন্তু মেয়ের সংসারে থাকলে পারিবারিক দ্বন্দ্ব তৈরি হতে পারে। তাই ভিক্ষাবৃত্তি বেছে নিয়েছেন এই বৃদ্ধ। প্রথমে ঢাকায় গিয়ে ভিক্ষা করতেন। একা চলতে সমস্যা হয় বলে ১০ বছর আগে নাজমা আক্তারকে বিয়ে করে রংপুরে চলে গেছেন।

গত কয়েক বছর ধরে প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছেন। তিন মাস পরপর ২৫০০ টাকা পান। এই টাকায় তেমন কিছু না হলেও, সরকার যে তাকে কিছু দিচ্ছে এতেই কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।

লতিফ বলেন, 'দেশ স্বাধীনের পর তারা রংপুরের একটি গুচ্ছগ্রামে থাকতাম। সেই ঘর এখন আর নেই। তবে একটি ঘর তুলেছেন সরকারি খাস জমিতে। সেটাই তার স্থায়ী ঠিকানা।'

তবে বেশিরভাগ সময় রংপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দেওয়া এই গাড়িতে চড়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন লতিফ-নাজমা দম্পতি।
 

Comments

The Daily Star  | English

Hasina can’t evade responsibility for Khaleda Zia’s death: Nazrul

In 2018, Khaleda walked into jail, but came out seriously ill, he says

6h ago