একটা লড়াই হয়েছে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে, আরেকটা হবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে: জামায়াতের আমির

সমাবেশে বক্তব্য দিচ্ছেন জামায়াত আমির। ছবি: জামায়াতে ইসলামীর ফেসবুক পেইজ থেকে

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর 'জাতীয় সমাবেশে' দেওয়া বক্তব্যে সংগঠনটির আমির শফিকুর রহমান বলেছেন, 'একটা লড়াই হয়েছে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে। আরেকটা লড়াই হবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে।'

জামায়াত আমির আরও বলেছেন, 'চাঁদা আমরা নিতে দেব না, দুর্নীতি আমরা সহ্য করব না। এই বাংলাদেশটাই আমরা দেখতে চাই।'

আজ শনিবার বিকেলে সমাবেশে সভাপতির সমাপনী বক্তব্য দিচ্ছিলেন শফিকুর রহমান। বক্তব্য শুরুর কয়েক মিনিটের মাথায় তিনি হঠাৎ পড়ে যান। পরে আশপাশে থাকা নেতাকর্মীদের সহযোগিতায় আবার উঠে দাঁড়িয়ে বক্তব্য শুরু করেন তিনি। এ দফায় আরও একবার পড়ে গেলে বসেই বক্তব্য শেষ করেন তিনি।

জামায়াত আমির বলেন, 'আবু সাঈদরা যদি বুক পেতে না দাঁড়াত, এ জাতির মুক্তির জন্য যদি বুকে গুলি লুফে না নিত, হয়তোবা আজকের এই বাংলাদেশটা আমরা দেখতাম না। ইতোমধ্যে হয়তো আরও অনেক মানুষের জীবন ফ্যাসিবাদীদের হাতে চলে যেত। চব্বিশে জীবন বাজি রাখা এই যুদ্ধটা যদি না হতো তাহলে আজকে যারা বিভিন্ন ধরনের কথা এবং দাবি দাওয়া পেশ করছেন, তারা তখন কোথায় থাকতেন?

'অতএব আসুন, যাদের ত্যাগের বিনিময়ে আল্লাহ তায়ালার এই নিয়ামত পাওয়া তাদের যেন অবজ্ঞা ও অবহেলা না করি। শিশু বলে তাদের যেন ‍তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য না করি। অহংকারভরে অন্য দলকে যেন তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য না করি। অরাজনৈতিক ভাষায় আমরা যেন কথা না বলি। এগুলো পরিহার করতে যারা পারবেন না, তাহলে বুঝতে হবে, ফ্যাসিবাদের রূপ তাদের মধ্যে নতুন করে বাসা বেঁধেছে।'

এ পর্যায়ে সবাই মিলে 'রাজনৈতিক শিষ্ঠাচার রক্ষা করে জাতীয় ঐক্যের বীজতলা' তৈরির তাগিদ দেন জামায়াত আমির। বাংলাদেশের মানুষে মুক্তি অর্জন করা পর্যন্ত লড়াই অব্যাগত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, 'জামায়াতে ইসলামী যদি আল্লাহর ইচ্ছায় এবং জনগণের ভালোবাসায় মানুষের সেবা করার সুযোগ পায়, তাহলে (আমরা)  মালিক হব না, সেবক হব।'

শফিকুর রহমান আরও বলেন, 'যদি আল্লাহর ইচ্ছায়, জনগণের ভালোবাসায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী থেকে সংসদ সদস্যরা নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করেন, তাহলে কোনো এমপি, কোনো মন্ত্রী আগামীতে সরকারি কোনো প্লট গ্রহণ করবে না। ট্যাক্সবিহীন কোনো গাড়ি চড়বে না। কোনো মন্ত্রী, কোনো এমপি নিজের হাতে কোনো টাকা চালাচালি করবে না।

'কোনো এমপি কোনো মন্ত্রী যদি কাজের জন্য নির্দিষ্ট কোনো বরাদ্দ পেয়ে থাকেন তাহলে কাজ শেষ হওয়ার সাথে সাথে বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের কাছে প্রতিবেদন তুলে ধরতে বাধ্য হবেন।'

দ্বিতীয় দফায় পড়ে যাওয়ার পর তাকে নিয়ে নেতাকর্মীদের উদ্বেগের ভেতর নিচে বসেই কথা বলতে থাকেন শফিকুর রহমান। বলেন, 'বাংলাদেশের নির্দিষ্ট কোনো শ্রেণির মুক্তির জন্য আমাদের এই লড়াই নয়। রাস্তার একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী, চা বাগানের একজন শ্রমিই, রক্ত পানি করা ঘাম ঝরানো আমার একজন রিকশাচালক ভাই, মাঠে ময়দানে বাংলাদেশের মানুষের মুখে যারা একমুঠো ভাত তুলে দিতে চায় আমার সেই কৃষক বন্ধুটি—আমি তাদের হয়ে আজকে এখানে কথা বলতে এসেছি।আমি কোনো অভিজাত শ্রেণির হয়ে এখানে কথা বলতে আসিনি।'

'যদি বস্তাপচা পুরনো সবকিছুই টিকে থাকবে', তাহলে চব্বিশের শহীদরা কেন জীবন দিয়েছিলেন—এমন প্রশ্ন রেখে তিনি আরও বলেন, 'নতুন ব্যবস্থায় নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলা হবে। শিশু-কিশোর-যুবক-মা-বোন-শ্রমিক-ছাত্র-জনতা-ব্যবসায়ী সবাইকে যে দেশ, যে সংবিধান, যে রাষ্ট্র নিরাপত্তা দিতে পারবে­—সেই নতুন বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলতে চাই।'

এতদিন জামায়াতে ইসলামী জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সামনের সড়ক, পুরানা পল্টনের মোড়ে সভা-সমাবেশ করলেও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এবারই ছিল প্রথম সমাবেশ।

সব গণহত্যার বিচার, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনসহ সাত দাবিতে এই 'জাতীয় সমাবেশ' করল দলটি।

শনিবার দুপুর ২টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হয় সমাবেশের মূল পর্ব।

এর আগে শুক্রবার রাত থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাস, পিকআপ, ট্রেনে করে সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রশিবির এবং জামায়াতের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।

নেতাকর্মীদের যাতায়াতের জন্য ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, সিরাজগঞ্জ এবং রাজশাহী থেকে ৪টি ট্রেন ভাড়া করে জামায়াতে ইসলামী।

দূর থেকে আসা নেতাকর্মীদের অনেকেই রাতে সমাবেশস্থলের আশপাশে অবস্থান নেন। এরপর শনিবার সকাল ১০টার মধ্যেই সমাবেশস্থলের আশপাশের এলাকা রূপ নেয় জনসমুদ্রে।

বেলা ১০টা থেকে সঙ্গীত পরিবেশন করে সাইমুম শিল্পী গোষ্ঠী। উদ্যানের বাইরে কয়েকটি জায়গায় বড় পর্দায় শীর্ষ নেতাদের বক্তব্য প্রদর্শনের ব্যবস্থাও ছিল।

দলের আমির শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন—নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান, সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের, সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম মাছুম, কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ, ঢাকা মহনগরী দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল।

জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়ে আলোচনায় আসা শিবিরের প্রকাশনা সম্পাদক সাদিক কায়েম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এস এম ফরহাদকেও মঞ্চে দেখা যায়। অংশ নেন জুলাই আন্দোলনে আহতদের কয়েকজন এবং অভ্যুত্থানে প্রাণ হারানোদের অভিভাবকরাও।

যে সাত দফা দাবিতে এই জাতীয় সমাবেশ, সেই দাবিগুলো হলো—সব গণহত্যার বিচার, প্রয়োজনীয় মৌলিক সংস্কার, জুলাই সনদ ও জুলাই ঘোষণাপত্র বাস্তবায়ন, জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ ও আহতদের পরিবারে পূনর্বাসন, সংখ্যানুপাতিক(পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচন, প্রবাসীদের ভোট প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ এবং জাতীয় নির্বাচনের আগে সমতাভিত্তিক রাজনৈতিক পরিবেশ (লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড) নিশ্চিত করা।

Comments

The Daily Star  | English

Sabalenka beats Anisimova to win second straight US Open title

The Belarusian has not missed a hardcourt major final since 2022 and her latest trophy brings her Grand Slam haul to four, as she became the first woman to win back-to-back US Opens since Serena Williams claimed three straight from 2012 to 2014

3h ago