ভুল পদক্ষেপের কারণে আবার ফ্যাসিস্টদের নির্যাতনের কবলে পড়া যাবে না: ফখরুল

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর | ছবি: টেলিভিশন থেকে নেওয়া

কোনো ভুল পদক্ষেপের কারণে আবার ফ্যাসিস্টদের নির্যাতনের কবলে পড়া যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে ঠাকুরগাঁও জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজিত সদর উপজেলা বিএনপি ও রুহিয়া থানা বিএনপির বর্ধিত সভায় তিনি এ কথা বলেন।

সংসদীয় আসনে গণসংযোগে অংশ নিতে এদিন সকালে চার দিনের সফরে ঠাকুরগাঁও যান বিএনপি মহাসচিব।

মির্জা ফখরুল বলেন, 'এই যে একটা উত্তরণের সুযোগ আমরা পেয়েছি, এই সময়টা আমাদেরকে অত্যন্ত সাবধানে-সতর্কতার সঙ্গে পা ফেলতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, আমাদের ভুলের কারণে, রাজনৈতিক কোনো ভুল পদক্ষেপের কারণে আমরা যেন আবার সেই ফ্যাসিস্টদের নির্যাতনের কবলে না পড়ি। অর্থাৎ ফ্যাসিস্টদেরকে আমরা আর ফেরত দেখতে চাই না।'

তিনি বলেন, 'ঠাকুরগাঁওয়ে বিশেষ করে আমার খুব স্পষ্ট মনে আছে, বারবার আপনারা নির্যাতিত হয়েছেন। এমনও হয়েছে যে, আপনারা কেউ ঘরে থাকতে পারেননি। প্রচণ্ড শীতের মধ্যে আপনার ধানখেতে লুকিয়ে থেকেছেন, গাছের ওপরে উঠে লুকিয়ে থেকেছেন নিজেকে রক্ষা করার জন্য। আল্লাহর কাছে অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাই যে, তিনি আমাদেরকে অন্তত সেই অবস্থা থেকে মুক্তি দিয়েছেন।'

আগামী নির্বাচনে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'আপনারা জানেন সামগ্রিকভাবে আমরা সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হয়েছি। আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে দীর্ঘ ছয় বছর কারাগারে আটক থাকতে হয়েছে, আমাদের প্রায় ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছিল, আমাদের ২০ হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। ইলিয়াস আলী, পারভেজ সাহেব ও তিনজন এমপিসহ আমাদের প্রায় এক হাজার ৭০০ নেতাকর্মীকে গুম করে দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত তাদের কোনো চিহ্ন আমরা খুঁজে পাইনি। আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেব, তাকেও মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে দেশে থেকে নির্বাসিত করা হয়েছিল। তিনি এখনো দেশে ফিরে আসতে পারেননি।'

'আগামী নির্বাচন সে জন্যই আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে, আমরা আবার গণতান্ত্রিক একটা ব্যবস্থায় ফিরে যেতে চাই, আমাদের মানুষ নির্বাচন চায়। যারা এই ১৫-১৬ বছর ভোট দিতে পারেনি, আবার তারা ভোট দিয়ে তাদের নিজস্ব প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে চায়। নিজস্ব সরকার তৈরি করতে চায়। সেই পার্লামেন্ট-সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আবার সচল করে একটা সমৃদ্ধশালী গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নির্মাণ করতে চায়,' যোগ করেন তিনি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'দুর্ভাগ্যক্রমে আমাদের যারা সংগ্রাম করেছেন, লড়াই করেছেন, তাদের মধ্যে অনেকেই বিভিন্ন রকম মত পোষণ করছেন। এটা হতেই পারে গণতন্ত্রে।'

সেটাকে কেন্দ্র করে রাস্তায় আন্দোলন করা কোনোমতেই গ্রহণযোগ্য নয় বলেও এ সময় মন্তব্য করেন তিনি।

গণমাধ্যমকর্মীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের মধ্য দিয়ে এবং বস্তুনিষ্ঠ সমালোচনার মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র টিকে থাকে। এটাই হচ্ছে গণতন্ত্রের নিয়ম, সেখানেই গণতন্ত্রের সাফল্য। আমরা প্রত্যাশা করি আমাদের সংবাদ মাধ্যমের কাছে যে, শুধুমাত্র চটকদার বা বেশি বিক্রি হবে এই ধরনের সংবাদ ছাপিয়ে আমরা যেন মূল জায়গা থেকে সরে না যাই।'

তিনি বলেন, 'আরেকটি বড় মাধ্যম আজকাল কাজ করে, সেটা হচ্ছে সামাজিক মাধ্যম, অর্থাৎ সোশ্যাল মিডিয়া। এই মিডিয়াতে অনেক অপপ্রচার হয়। এই মিডিয়াতে জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য অনেক কিছু প্রচার করা হয় যা সত্যের অপলাপ।'

প্রকৃত সত্য তুলে ধরতে রাজনৈতিক কর্মীদের ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল।

তিনি আরও বলেন, 'আগামী নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল যে মূল লক্ষ্য নিয়ে অংশ নিচ্ছে তা হলো, গণতন্ত্রকে সত্যিকার অর্থেই প্রতিষ্ঠা করা, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া এবং গণতন্ত্রের সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা।'

'গণতন্ত্র উত্তরণের সামনের যে কঠিন পরীক্ষা, সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। আমাদের সমস্ত বাংলাদেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে গণতন্ত্রের পথে এগিয়ে যেতে হবে,' যোগ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Ocean of mourners gather to pay tribute to Khaleda Zia

Crowds spilled over into surrounding areas, with large gatherings seen in Farmgate, Karwan Bazar and nearby localities

2h ago