নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠান থেকে নির্বাচনী কর্মকর্তা নিয়োগে বিএনপির আপত্তি

নির্বাচন কমিশনের কাছে বেশ কয়েকটি প্রস্তাব জমা দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। এর মধ্যে একটি হলো—ডানপন্থী একটি দলের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত কিছু প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে ভোটগ্রহণের দায়িত্বে নিয়োগ না দেওয়া।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিনের কাছে বিএনপি প্রায় তিন ডজন প্রস্তাব জমা দিয়েছে।
জাতীয় নির্বাচনের আগে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে প্রস্তাবনাগুলো নিয়ে তিন পৃষ্ঠার একটি নথি উপস্থাপন করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিহুল্লাহ ও সাবেক নির্বাচন কমিশন সচিব মোহাম্মদ জাকারিয়া।
গত সোমবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এসব প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে বৈঠকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্রে দ্য ডেইলি স্টার জানিয়েছে।
বিএনপির এসব প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে, যে প্রতিষ্ঠানগুলো দলীয় সংস্থা হিসেবে পরিচিত, তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কোনোভাবেই ভোটগ্রহণের দায়িত্বে—যেমন: প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং বা পোলিং কর্মকর্তা—নিয়োগ দেওয়া যাবে না।
নথিতে জুলাই গণঅভ্যুত্থান, গণতান্ত্রিক আন্দোলন বা 'ফ্যাসিবাদী সরকার'র সময় দায়ের করা রাজনৈতিক নেতাদের সব মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের নিজ নিজ জেলায় দায়িত্ব দেওয়া যাবে না এবং কোনো রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রচারকারী বা কোনো দলের পক্ষে কাজ করা সংস্থাকে নির্বাচনী পর্যবেক্ষণের অনুমতি দেওয়া যাবে না।
বিএনপি চায়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, প্রশাসন ও কমিশন যেন নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো দৃঢ়তা ও পক্ষপাতহীনতা নিয়ে কাজ করে।
দলটির প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে যেসব কর্মকর্তা বিতর্কিত বা প্রশ্নবিদ্ধ ছিলেন, তাদের চিহ্নিত করে আসন্ন নির্বাচনের কোনো দায়িত্বে না রাখার ব্যবস্থা নিতে হবে।
বিএনপি আরও বলেছে, কোনো অবস্থাতেই কমিউনিটি পুলিশকে ভোটকেন্দ্রে দায়িত্বে রাখা যাবে না। এ ছাড়া, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের নিজ নিজ জেলায় দায়িত্ব দেওয়া যাবে না।
নথি অনুযায়ী, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর দেশের বিভিন্ন স্কুল-কলেজে নতুন পরিচালনা কমিটি গঠিত হয়। কিন্তু নির্বাচনের চার মাস আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ১ নভেম্বরের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে নতুন নির্বাচন আয়োজনের নির্দেশ দেয়, যা বিএনপির মতে 'রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত'।
বিএনপি সতর্ক করে বলেছে, এ ধরনের উদ্যোগে বার্ষিক পরীক্ষা ও নির্বাচনী প্রশিক্ষণ-সংক্রান্ত শিক্ষকদের দায়িত্বে বিঘ্ন ঘটাতে পারে। তাই নির্দেশটি অবিলম্বে স্থগিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন ৩০ অক্টোবরের মধ্যে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের তালিকা চূড়ান্ত করার পরিকল্পনা করেছে।
২ সেপ্টেম্বর জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সরকারি-বেসরকারি অফিস, স্কুল, কলেজ, ব্যাংক ও বিমা প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের মধ্য থেকে প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তাদের তালিকা প্রস্তুত করতে।
বিএনপি প্রবাসীদের পোস্টাল ভোটের মাধ্যমে ভোটাধিকার প্রয়োগে পূর্ণ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এবং বিভিন্ন দেশে নিবন্ধিত প্রবাসী ভোটারদের তালিকা রাজনৈতিক দলগুলোকে আগেভাগে সরবরাহ করার প্রস্তাব দিয়েছে।
দলটি প্রস্তাব করছে, দূতাবাস ও নির্বাচন-সম্পর্কিত সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে সব চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হোক।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, দেশজুড়ে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অস্ত্র, জাল মুদ্রা ও কালো টাকা প্রবেশ ঠেকাতে দ্রুত ও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
এতে আরও বলা হয়েছে, পূর্ববর্তী সরকারের সময়ে রাজনৈতিক বিবেচনায় যেসব আগ্নেয়াস্ত্র বিতরণ করা হয়েছিল, সেগুলো নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে জমা দিতে হবে।
দলটি প্রস্তাব করবে, ভোটের অন্তত এক সপ্তাহ আগে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব, পুলিশসহ সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর উপস্থিতি নিশ্চিত করা হোক।
বিএনপি প্রস্তাব করছে, প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব ইলেকশন সার্ভিস ক্যাডারের যোগ্য, সৎ ও অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হোক—অন্তত যেখানে সম্ভব।
এ ছাড়া, নির্বাচন ব্যবস্থাপনা ও জবাবদিহিতা বাড়াতে কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দেওয়ার প্রস্তাবও করেছে দলটি।
নথিতে প্রস্তাব করা হয়েছে, তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি জেলা নির্বাচন অফিসে এবং প্রতিটি উপজেলা বা থানার নির্বাচন অফিসে অভিযোগ নিষ্পত্তি কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে।
নথিতে আরও বলা হয়েছে, সহিংসতা বা সন্ত্রাসী কার্যকলাপের কোনো ঘটনা ঘটলে তা শুধু ভোটকেন্দ্রের ৪০০ গজের মধ্যে নয়, বরং পুরো নির্বাচনী এলাকায়ই দ্রুত দমন করতে হবে।
Comments