ডেইলি স্টার-প্রথম আলো বন্ধে শিবির নেতার হুমকি: জামায়াতের প্রতিক্রিয়া

শিবির নেতার হুমকিতে জামায়াতের প্রতিক্রিয়া
ছবি: সংগৃহীত

দেশের শীর্ষস্থানীয় ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার ও বাংলা দৈনিক প্রথম আলো অবশ্যই বন্ধ করতে হবে বলে যে হুমকি দিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (রাকসু) সহসভাপতি (ভিপি) ও জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরের নেতা মোস্তাকুর রহমান, সে ব্যাপারে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এটা জামায়াতের বক্তব্য না। দলের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া হবে। এই বক্তব্যের সত্যতা পেলে ছাত্রশিবিরের 'নিজস্ব পদ্ধতি অনুসারে' ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে।

আজ শনিবার সন্ধ্যায় জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের এবং কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের প্রধান ও দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের দ্য ডেইলি স্টারকে এ কথা বলেন।

একইসঙ্গে 'বাংলাদেশের প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জনের জন্য বাম, শাহবাগী, ছায়ানট ও উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে' বলে যে বক্তব্য দিয়েছেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখার সেক্রেটারি মোস্তাফিজুর রহমান, তার ব্যাপারেও একই সিদ্ধান্ত প্রযোজ্য হবে বলে জানিয়েছেন ‍জুবায়ের।

গত বৃহস্পতিবার রাতে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে তাৎক্ষণিকভাবে বিক্ষোভ মিছিল–পরবর্তী সমাবেশে রাকসু ভিপি মোস্তাকুর রহমান বলেন, 'আমরা আজকের এই প্রোগ্রাম থেকে ঘোষণা দিচ্ছি, প্রথম আলো, ডেইলি স্টারসহ এসব সুশীল সংবাদ পত্রিকাকে অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। আমরা মনে করি, এই প্রোগ্রামে যদি প্রথম আলো, ডেইলি স্টার পত্রিকার কোনো সাংবাদিক আসেন, তাহলে এখনই এখান থেকে চলে যাবেন।'

বৃহস্পতিবার রাতে শিবির নেতা মোস্তাকুর যখন রাজশাহী থেকে সংবাদপত্র দুটি বন্ধের হুমকি দেন, তার কিছু সময় আগে ঢাকায় প্রথম আলোর কার্যালয়ে সন্ত্রাসী হামলা হয়। সন্ত্রাসীরা কার্যালয়ের ভেতরে প্রবেশ করে হামলা ও লুটপাট করে আগুন ধরিয়ে দেয়। একপর্যায়ে সন্ত্রাসীদের একটি অংশ ঢাকার কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউয়ে অবস্থিত ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলা করে ভবনটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। সেখানে ডেইলি স্টারের বহু কর্মী আটকা ছিলেন। পরে কয়েক ঘণ্টার প্রচেষ্টায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা তাদের উদ্ধার করেন।

একই দিন রাতে ইসলামী ছাত্রশিবিরের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখার সেক্রেটারি মোস্তাফিজুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে এক সমাবেশে বলেন, 'রাজনৈতিক লড়াই করে বাংলাদেশের প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জন করা সম্ভব নয়। আমাদের লড়াই শুরু হবে শহীদ ওসমান হাদির ইনকিলাব মঞ্চের সাংস্কৃতিক লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে। আগামীকাল (শুক্রবার) বাম, শাহবাগি, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে, তাহলেই বাংলাদেশের প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জিত হবে।'

জাবির শিবির সেক্রেটারির এ বক্তব্যের পর মধ্যরাতে ধানমন্ডির ছায়ানট ভবনে হামলা হয়। হামলাকারীরা ভবনের প্রতিটি তলা তছনছ করে; বিভিন্ন সামগ্রী নিচে জড়ো করে আগুন ধরিয়ে দেয়। আর শুক্রবার রাতে ঢাকার তোপখানা সড়কে সাংস্কৃতিক সংগঠন উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আগুন লাগে।

উদীচীর একাংশের সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে দাবি করেন, পরিকল্পিতভাবে এই আগুন লাগানো হয়েছে।

দুই শিবির নেতার এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এটা আমাদের বক্তব্য না। আমরা এগুলো বিশ্বাস করি না।'

তাহের আরও বলেন, 'আমার নলেজে এটা আসে নাই। আপনি আমাকে বক্তব্যের কপি পাঠান। আমি বিষয়টা দেখছি। শিবিরের সভাপতির সাথে আমি কথা বলছি।'

শুক্রবার সন্ধ্যায় নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়ে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সুরক্ষা নিশ্চিতের আহ্বান জানান জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান। একই দিনে এর আগে দেওয়া এক বিবৃতিতে যেকোনো আন্দোলন শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে করার আহ্বান জানান তিনি।

একইসঙ্গে সবাই মিলেই গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে বলে মন্তব্য করে জামায়াত আমির আরও বলেন, 'ফ্যাসিবাদের আমলে যেভাবে গণমাধ্যমের ওপর নগ্ন হামলা করা হতো, সেই সংস্কৃতিতে আমরা ফিরতে চাই না। একই সঙ্গে গণমাধ্যমগুলোর প্রতি আমার আহ্বান, দেশের এই সংকটময় মুহূর্তে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করুন এবং যেকোনো ধরনের ঘৃণামূলক প্রচারণা থেকে বিরত থাকুন।'

এ ব্যাপারে দলের নায়েবে আমির তাহের আজ বলেন, 'আমির যে বক্তব্য দিয়েছেন ওটাই আমাদের বক্তব্য। আলোচনা করেই এই বক্তব্য দেওয়া হয়েছে।

'ওরা (দুই শিবির নেতা) যেটা বলেছে সেটা আমাদের নলেজে নাই। যদি (এ ধরনের বক্তব্য) দিয়ে থাকে সেটা খারাপ কাজ হয়েছে।'

বিষয়টি নিয়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল জুবায়ের শুরুতে বলেন, 'এটা তো কনফার্ম না।'

এছাড়া শিবির নেতাদের ওই বক্তব্য এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) দিয়ে বানানো হয়েছে কিনা, সে ব্যাপারেও সন্দেহ প্রকাশ করেন জুবায়ের। বলেন, 'ওই বক্তব্য এআই দিয়ে বানানো হয়েছে কিনা, সে ব্যাপারে খোঁজখবর নিতে বলেছি।'

জুবায়ের আরও বলেন, 'যদি ওরা (দুই শিবির নেতা) এমন বক্তব্য দিয়ে থাকে তাহলে তা অবশ্যই জামায়াতের বক্তব্য না। আমরা এটাও বলেছি যে স্বাধীন গণমাধ্যমের ওপর কোনো ধরনের আঘাত কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য না। আমরা এটাকে টোটালি একটা চক্রান্তের অংশ বলে মনে করি।'

এক্ষেত্রে দুই শিবির নেতার বক্তব্যের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেলে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানতে চাইলে জুবায়ের বলেন, 'তাহলে অবশ্যই আমরা বলব ছাত্রশিবিরের নিজস্ব যে সিস্টেম, সে অনুসারে ব্যবস্থা নিতে।'

এদিকে হাদির মৃত্যুতে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে প্রথম আলো, ডেইলি স্টার নিয়ে রাকসুর ভিপির দেওয়া বক্তব্যের নিন্দা জানিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীরা। শনিবার দুপুরে তারা এক বিবৃতিতে এই নিন্দা জানান।

এ ছাড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (রাবিসাস) এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় রিপোটার্স ইউনিটি এক বিবৃতিতে ওসমান হাদি হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবি, প্রথম আলো, ডেইলি স্টারে হামলা এবং নিউ এইজ সম্পাদক নুরুল কবিরের উপর হামলার প্রতিবাদ জানানো হয়।

Comments

The Daily Star  | English

Farewell

Nation grieves as Khaleda Zia departs, leaving a legacy of unbreakable spirit

8h ago