দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে আমার পরিকল্পনা আছে: তারেক রহমান

ঢাকায় পৌঁছে বক্তব্য দেন তারেক রহমান। ছবি: স্টার

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, দেশের মানুষের জন্য, দেশের ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য তার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা আছে। 

আমেরিকার কৃষ্ণাঙ্গ নেতা মার্টিন লুথার কিংয়ের বিখ্যাত 'আই হ্যাভ আ ড্রিম' ভাষণের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তারেক রহমান বলেন, 'বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের একজন সদস্য হিসেবে আমি বলতে চাই—আই হ্যাভ আ প্ল্যান (আমার একটি পরিকল্পনা আছে) ফর দ্য পিপল অব মাই কান্ট্রি, ফর মাই কান্ট্রি।'

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে দেশে ফিরে রাজধানীর পূর্বাচলের ৩০০ ফিট এলাকায় আয়োজিত গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।

তারেক রহমান বলেন, 'আজ এই পরিকল্পনা দেশের মানুষের স্বার্থে, দেশের উন্নয়নের জন্য, দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য। যদি সেই কার্যক্রম, সেই পরিকল্পনাকে বাস্তবায়ন করতে হয়, তাহলে এই জনসমুদ্রে যত মানুষ উপস্থিত আছেন এবং সারা বাংলাদেশে গণতন্ত্রের শক্তির যত মানুষ আছেন—প্রত্যেকটি মানুষের সহযোগিতা আমার লাগবে।'

তারেক রহমান। ছবি: এএফপি

দীর্ঘ ১৭ বছর পর দেশে ফিরে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জানান তারেক রহমান। তিনি বলেন, 'রাব্বুল আলামিনের অশেষ রহমতে আজ আমি আমার প্রিয় মাতৃভূমিতে ফিরে আসতে পেরেছি।'

জুলাই অভ্যুত্থান ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণা করে তিনি বলেন, 'আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমি ১৯৭১ সালে লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছিল। ঠিক একইভাবে ১৯৭৫-এর ৭ নভেম্বর আধিপত্যবাদীদের হাত থেকে রক্ষার জন্য সিপাহি-জনতার বিপ্লব হয়েছিল। একইভাবে এ দেশের খেটে খাওয়া মানুষ তাদের গণতান্ত্রিক অধিকারকে ছিনিয়ে এনেছিল। কিন্তু ষড়যন্ত্র থেমে থাকেনি।'

তিনি বলেন, '১৯৭১ সালে এ দেশের মানুষ যেমন স্বাধীনতা অর্জন করেছিল, ২০২৪ সালে এ দেশের ছাত্র-জনতাসহ সর্বস্তরের মানুষ, কৃষক-শ্রমিক, গৃহবধূ, নারী-পুরুষ, মাদ্রাসার ছাত্রসহ দলমত, শ্রেণি-পেশা নির্বিশেষে সকল মানুষ ৫ আগস্ট এই দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করেছে।'

জুলাই আন্দোলনের শহীদদের স্মরণ করে তারেক রহমান বলেন, 'কয়েক দিন আগে ২৪-এর আন্দোলনের এক সাহসী প্রজন্মের সদস্য ওসমান হাদিকে হত্যা করা হয়েছে; তিনি শহীদ হয়েছেন। ওসমান হাদি চেয়েছিলেন, এই দেশের মানুষের জন্য গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হোক। ২৪-এর আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন, ওসমান হাদিসহ বিগত স্বৈরাচারের সময় যারা গুম-খুনের শিকার হয়েছেন, তাদের রক্তের ঋণ যদি শোধ করতে হয়, তবে আসুন আমরা আমাদের সেই প্রত্যাশিত বাংলাদেশ গড়ে তুলি।'

'আজ বাংলাদেশের মানুষ কথা বলার অধিকার ফিরে পেতে চায়। তারা গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পেতে চায়। বাংলাদেশের মানুষ চায় যোগ্যতা অনুযায়ী ন্যায্য অধিকার। আজ আমাদের সময় এসেছে সকলে মিলে দেশ গড়ার,' বলেন তিনি।

তরুণ প্রজন্মের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, 'বিভিন্ন আধিপত্যবাদী শক্তির দোসররা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। যেকোনো উসকানির মুখে আপনাদের ধীর ও শান্ত থাকতে হবে। যেকোনো মূল্যে এই দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করতে হবে।'

একটি নিরাপদ বাংলাদেশের স্বপ্নের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, 'আজ আমাদের সময় এসেছে সকলে মিলে দেশ গড়ার। এই দেশে যেমন পাহাড়ের মানুষ আছে, তেমনি সমতলের মানুষ আছে। মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, হিন্দুসহ বিভিন্ন ধর্মের মানুষ বসবাস করে। আমরা চাই সকলে মিলে এমন একটি বাংলাদেশ গড়ে তুলব, যে বাংলাদেশের স্বপ্ন একজন মা দেখেন—অর্থাৎ একটি নিরাপদ বাংলাদেশ। যেখানে একজন নারী, একজন পুরুষ বা একজন শিশু—যেই হোক না কেন, নিরাপদে ঘর থেকে বের হলে নিরাপদে আবার ঘরে ফিরে আসতে পারে।'

তিনি বলেন, 'এই দেশের জনসংখ্যা অর্ধেক নারী, ৪ কোটিরও বেশি তরুণ প্রজন্মের সদস্য, ৫ কোটির মতো শিশু এবং ৪০ লাখের মতো প্রতিবন্ধী মানুষ রয়েছেন। কয়েক কোটি কৃষক-শ্রমিক রয়েছেন। এই মানুষগুলোর একটি প্রত্যাশা আছে এই রাষ্ট্রের কাছে। আজ আমরা সকলে যদি ঐক্যবদ্ধ হই, তবে আমরা এই লক্ষ কোটি মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারি।'

নেতাকর্মীদের সতর্ক করে তারেক রহমান বলেন, 'বিভিন্ন আধিপত্যবাদী শক্তির দোসররা বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। আমাদেরকে ধৈর্যশীল হতে হবে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের সদস্যরা, যারা আগামী দিনে দেশকে নেতৃত্ব দেবেন—এই দায়িত্ব আজ তাদের গ্রহণ করতে হবে। যাতে করে এই দেশকে আমরা সত্য ভিত্তি, গণতান্ত্রিক ভিত্তি ও শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভিত্তির ওপর গড়ে তুলতে পারি।'

তিনি কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, 'যেকোনো মূল্যে আমাদেরকে এই দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করতে হবে। যেকোনো উসকানির মুখে আমাদের ধীর ও শান্ত থাকতে হবে। আমরা দেশের শান্তি চাই।'

ভাষণে ন্যায়পরায়ণতার সঙ্গে দেশ পরিচালনার প্রতিশ্রুতি দেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, 'আসুন আমরা সকলে মিলে প্রতিজ্ঞা করি, আগামী দিনে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে যারা আসবেন, আমরা সকলে নবী করিম (সা.)-এর ন্যায়পরায়ণতার আলোকে দেশ পরিচালনার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।'

মায়ের অসুস্থতার ব্যাপারে তিনি বলেন, 'সন্তান হিসেবে আমার মন আমার মায়ের বিছানার পাশে পড়ে আছে সেই হাসপাতালের ঘরে। কিন্তু যেই মানুষটি এই দেশের মাটির জন্য, মানুষের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন, সেই মানুষগুলোকে (জনতাকে) আমি কোনোভাবেই ফেলে যেতে পারি না।' তিনি মা খালেদা জিয়ার সুস্থতার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চান।

তিনি বলেন, 'সন্তান হিসেবে আমার মন আমার মায়ের বিছানার পাশে পড়ে আছে সেই হাসপাতালের ঘরে। কিন্তু যেই মানুষটি এই দেশের মানুষের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন, সেই মানুষগুলোকে আমি কোনোভাবেই ফেলে যেতে পারি না। সেজন্যই আজ হাসপাতালে যাবার আগে আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার জন্য এখানে দাঁড়িয়েছি।'

সবশেষে তিনি শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, 'যেকোনো মূল্যে আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যাতে মানুষ নিরাপদ থাকতে পারে। শিশু হোক, নারী হোক, পুরুষ হোক—যেকোনো বয়স, শ্রেণি, পেশা বা ধর্মের মানুষ যেন নিরাপদ থাকে, এই হোক আমাদের চাওয়া।'

Comments

The Daily Star  | English

Hasina can’t evade responsibility for Khaleda Zia’s death: Nazrul

In 2018, Khaleda walked into jail, but came out seriously ill, he says

6h ago