চবিকে সত্যিকারের বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরে কাজ করতে চাই: রশিদ দিনার

জয়ী হলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে (চবি) সত্যিকারের বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরে কাজ করতে চান বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনে 'স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন' প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী রশিদ দিনার।
দ্য ডেইলি স্টারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের (এসএডি) সাবেক এই সহ-সমন্বয়ক বলেন, 'ক্যাম্পাসে আসার পর থেকে যখনই শিক্ষার্থীদের পাশে থাকার প্রয়োজন ছিল, আমি ছিলাম। যেকোনো ন্যায্য আন্দোলনেই শিক্ষার্থীরা আমাকে তাদের পাশে পেয়েছেন। জুলাই আন্দোলনেও আমি সম্মুখসারিতে ছিলাম, শিক্ষার্থীরা সেটা দেখেছেন।'
তিনি বলেন, 'আমি কখনোই কারো সঙ্গে আপস করিনি। যখনই প্রয়োজন হয়েছে প্রশাসনসহ সবার সঙ্গেই শিক্ষার্থীদের হয়ে কথা বলেছি, যৌক্তিক অধিকার আদায়ে ছাড় দেইনি। আমাকে শিক্ষার্থীরা খুব ভালোভাবে চেনেন। আমি তাদের কাছ থেকে বেশ সাড়া পাচ্ছি।'
'শিক্ষার্থীরা খুব ভালোভাবেই জানেন যে তাদের অধিকার আদায়ে কে, কীভাবে কাজ করতে পারবে, কে যেকোনো কিছুর বিরুদ্ধে গিয়ে হলেও শিক্ষার্থীদের হয়ে কথা বলবে, কে যোগ্য। আমার বিশ্বাস তারা ভোটের মাধ্যমে যোগ্য প্রার্থীকেই বেছে নেবেন।'
'আমাদের প্যানেলের অনেকেই আছেন, যারা জুলাই আন্দোলনে সাবেক সমন্বয়ক বা সহ-সমন্বয়ক ছিলেন। শিক্ষার্থীরা তাদের চেনেন। যিনি যে ক্ষেত্রে পারদর্শী, তাকে আমরা সেখানে দিয়ে প্যানেল গুছিয়েছি। শিক্ষার্থীরা আমাদের প্যানেলকে পছন্দ করবেন বলে আমরা মনে করছি।'
জয়ী হলে কী করবেন? জানতে চাইলে চবির ইতিহাস বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী রশিদ দিনার বলেন, 'এক বছর সময় বেশি না। আমরা করতে পারব না—এমন কিছুই ইশতেহারে রাখিনি। এর মধ্যে কিছু কাজ আছে যা আমরা দ্রুতই করতে পারব। আবার কিছু কাজ সময়সাপেক্ষ। কিন্তু শুরুটা আমরা করে দিয়ে যেতে পারব।'
তিনি বলেন, 'আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় সমস্যার জায়গা হলো আবাসন ও পরিবহন। আমি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এই দুটি সংকট সমাধানে কাজ শুরু করব। এরপর আছে খাবার। আমরা বলে থাকি যে, এমনি তো না-ই, বরং টাকা দিয়েও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো খাবার পাওয়া যায় না। খাবারের মান উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করব।'
'চবি ক্যাম্পাসকে নিরাপদ ক্যাম্পাস হিসেবে গড়ে তুলতে গুরুত্বের সঙ্গে কাজ করব' উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'নিরাপত্তা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মনে যেন কোনো ধরনের শঙ্কা না থাকে। পাশাপাশি শিক্ষার পরিবেশের উন্নয়ন ও গবেষণাসহ মৌলিক সব সংকট নিয়েই কাজ করব।'
'আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই হাজার ৩০০ একর জায়গা আছে। অথচ প্রতিষ্ঠার ৬০ বছর পেরিয়েও শিক্ষার্থীদের জন্য যথাযথভাবে আবাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা যায়নি। কেবল ২০-২২ শতাংশ শিক্ষার্থীর আবাসনের ব্যবস্থা করা গেছে। এত জায়গা থাকা সত্ত্বেও চবিকে এখনো পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করা যায়নি। আমরা চবিকে "হাফ বিশ্ববিদ্যালয়" বলি। এখানে দুপুরের পর থেকেই শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যান। আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে সত্যিকার অর্থে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরে কাজ করব। এটাই হবে আমার মূল ফোকাস,' যোগ করেন তিনি।
চাকসু নির্বাচন নিয়ে রশিদ দিনার বলেন, 'আমরা বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতিতে একটা ইতিবাচক পরিবর্তন চাই, যেখানে পূর্বের মতো দখলদারিত্ব থাকবে না। সেটা হতে হবে ছাত্র সংসদ-ভিত্তিক ছাত্ররাজনীতির মাধ্যমে। দীর্ঘ ৩৫ বছর পর চাকসু নির্বাচন হচ্ছে। আমাদের ইশতেহারে শুরুর দিকেই আছে চাকসুকে একাডেমিক ক্যালেন্ডারে অন্তর্ভুক্ত করা। আমি নির্বাচিত হলে নিশ্চিত করব যাতে চাকসু সচল থাকে, প্রতি বছরই নির্দিষ্ট সময়ে এই নির্বাচন হয়।'
নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে তিনি বলেন, 'কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিশেষ একটা গোষ্ঠীকে সুবিধা দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পাচ্ছি। আবার কেউ কেউ নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনও করছেন। কিন্তু কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এরকম কিছু ঘটনা আছে। এত বছর পর চাকসু নির্বাচন হচ্ছে, এটা যাতে সুষ্ঠু, গণতান্ত্রিক ও অংশগ্রহণমূলক হয়, সেজন্য আমরা সজাগ দৃষ্টি রাখছি।'
'চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা সংগঠনকে আমরা দেখি প্রশাসনের তাবেদারি করতে। আমরা তাদেরকে কখনো শিক্ষার্থীদের পক্ষ হয়ে প্রশাসনের সঙ্গে নেগোশিয়েট করে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায় করতে দেখিনি। নানা ঘটনায় আমরা দেখেছি, কখনোই তাদের শিক্ষার্থীদের পক্ষে সরাসরি অবস্থান করতে দেখা যায়নি। শিক্ষার্থীরা সেটা ভালো জানেন। তারা অবশ্যই এটা মনে রাখবেন এবং নির্বাচনে ভোটের মাধ্যমে তাদের জন্য যোগ্য প্রতিনিধিকেই তারা নির্বাচিত করবেন।'
Comments