'টেস্ট ক্রিকেট এখনও তার জাদু ছড়িয়ে যাচ্ছে'

২৭ বছরের ট্রফি খরা ঘুচিয়ে অবশেষে কোনো বৈশ্বিক শিরোপা জিতেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রথমবারের মতো আইসিসি ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ (ডব্লিউটিসি) শিরোপা জিতে নিলো দলটি। তাও টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম রোমাঞ্চকর ফাইনালে তারা হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। ফাইনালে যারা বরাবরই দুর্বার।

শেষবার দক্ষিণ আফ্রিকা কোনো বৈশ্বিক শিরোপা জিতেছিল ১৯৯৮ সালের আইসিসি নকআউট ট্রফিতে। যা পরবর্তীতে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির রূপ নেয়। সেই আসরটি হয়েছিল বাংলাদেশে। কিন্তু এরপর সেমি-ফাইনাল কিংবা ফাইনালেই থামতে হয়েছে তাদের।

এই বিজয় ক্রিকেট জগতের বহু প্রজন্মের কিংবদন্তিদের মধ্যে আবেগ ও প্রশংসার জোয়ার এনে দিয়েছে। ভারতীয় কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকার প্রোটিয়াদের দৃঢ়তা ও মানসিক দৃঢ়তা কুর্নিশ জানিয়ে বলেন, 'টেস্ট ক্রিকেট এখনও তার জাদু ছড়িয়ে যাচ্ছে। এমন এক ফাইনালে যেখানে প্রতিটি সেশন ছিল একেকটি গল্প, দক্ষিণ আফ্রিকা ঝড়ের মধ্যে খুঁজে পেয়েছে স্থিরতা।'

'চতুর্থ ইনিংসে মার্করামের আত্মসংযম আর বাভুমার দৃঢ়তায় দল দাঁড়িয়ে ছিল অবিচল। একটি শতরান যা স্মরণীয় হয়ে থাকবে, একটি জুটি যা আশাকে রূপ দিয়েছে ইতিহাসে। দক্ষিণ আফ্রিকাকে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য অভিনন্দন!' যোগ করেন এই কিংবদন্তি।

রোমাঞ্চকর চতুর্থ ইনিংসে এই ম্যাচের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত ছিল আইডেন মার্করামের ম্যাচজয়ী শতরান। ৩১৪ রান তাড়া করে জয় তুলে নেওয়া ছিল লর্ডসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সফল রান তাড়া। প্রাক্তন দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক এবি ডি ভিলিয়ার্সও সেই রোমাঞ্চকর মুহূর্তে হয়েছেন আপ্লুত।

'দারুণ এক জয় এবং অসাধারণ খেলেছে! মার্করামের ম্যাচজয়ী শতরানের জন্য তাকে কুর্নিশ, আর টেমবার জন্যও, যিনি বরফের মতো ঠাণ্ডা মাথায় এবং আগুনের মতো নেতৃত্ব দিয়েছেন পুরো ম্যাচে। আমার দুই ছেলের সঙ্গে এই নাটকীয়তা ও জয়ের সাক্ষী হতে পেরে আমি অভিভূত। এর চেয়ে ভালো কিছু কল্পনাও করিনি!' বলেন ডি ভিলিয়ার্স।

মার্করামের ১৩৪ রানের ইনিংস এবং অধিনায়ক টেম্বা বাভুমার ঠাণ্ডা মাথার ৫৬ রানের ইনিংস জয়ের ভিত্তি তৈরি করে দেয়, অস্ট্রেলিয়ার চাপ থাকা সত্ত্বেও। শ্রীলঙ্কার কিংবদন্তি কুমার সাঙ্গাকারা দক্ষিণ আফ্রিকার স্বচ্ছ উদ্দেশ্য ও পরিকল্পনার প্রশংসা করে বলেন, 'তারা অস্ট্রেলিয়াকে শুধু হারায়নি, দক্ষতায় এবং চাওয়াতেও ছাড়িয়ে গেছে। বাভুমার অসাধারণ নেতৃত্বে দলটি দেখিয়ে দিয়েছে কীভাবে লক্ষ্য, আবেগ ও বিশ্বাস মিলেই তৈরি করে বিজয়ের পথ।'

দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাক্তন ওপেনার হার্শেল গিবস সংক্ষেপে বলেন, 'সাবাস দক্ষিণ আফ্রিকা… টস থেকেই যেন সবকিছু ঠিকঠাক হয়েছে… এখন উপভোগ করো উদযাপন।'

ভারতের যুবরাজ সিং এই ঐতিহাসিক মুহূর্তকে স্মরণ করে বলেন, '২০২৫ সালের এই দল ২৭ বছরের প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে চ্যাম্পিয়নের মতো করে ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ট্রফি জিতে নিয়েছে! আমি সবসময় বিশ্বাস করি, টেস্ট ক্রিকেটেই সবচেয়ে বড় পরীক্ষা হয় মানসিক দৃঢ়তার — আর দক্ষিণ আফ্রিকা সেই পরীক্ষায় দারুণভাবে উত্তীর্ণ হয়েছে!'

তিনি আরও বলেন, 'আইডেন মার্করামের শতরান ছিল অনবদ্য। রাবাদা, মার্কো ইয়ানসেন ও লুঙ্গি এনগিডি পুরো সময় ধরে আক্রমণে রেখেছে প্রচণ্ড তীব্রতা, আর বাভুমা নেতৃত্ব দিয়েছেন শান্ততা ও সাহসিকতায়।'

ফলাফলের দিনে অর্থাৎ চতুর্থ দিন সকালে দক্ষিণ আফ্রিকা দুই উইকেটে ২১৩ রান নিয়ে খেলতে নেমে ৫ উইকেটে ২৮২ রান তুলে জয় নিশ্চিত করে। যা ছিল তাদের টেস্ট ইতিহাসের অন্যতম সেরা জয়। এবং আইসিসি টুর্নামেন্টে 'চিরচেনা ব্যর্থতার' তকমাও অবশেষে মুছে গেল।

অন্যদিকে, শিরোপা ধরে রাখার মরিয়া চেষ্টায় থাকা অস্ট্রেলিয়া লড়াই চালিয়ে গেলেও দক্ষিণ আফ্রিকার দৃঢ় সংকল্প ভাঙতে পারেনি। দিনের প্রথম দুই ঘণ্টায় প্রোটিয়ারা মাত্র তিনটি বাউন্ডারি মেরেছিল, তবুও তারা এক মুহূর্তের জন্যও লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয়নি।

Comments

The Daily Star  | English

If anything happens at DU today, the fault lies with Jamaat, VC: JCD president

Jamaat, Shibir activists gathering around the campus with arms since morning, he says

16m ago