টি-টোয়েন্টি: লক্ষ্য ১৫০ ছাড়ালেই বাংলাদেশের হার যেন অবধারিত!

ছবি: ফিরোজ আহমেদ

টি-টোয়েন্টিতে মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশকে হারাতে হলে প্রতিপক্ষ দলগুলোকে কী করতে হবে? উত্তরটা হয়তো তাদের আগে থেকেই জানা! কী সেটা?

আপনি যদি প্রতিপক্ষ হন, তাহলে বাংলাদেশের বিপক্ষে আগে ব্যাট করে ছুড়ে দিন ১৫০ কিংবা বেশি রানের লক্ষ্য। এরপর একদম নির্ভার হয়ে বোলিং করতে নামুন। কারণ, ম্যাচের ফল আপনার দলের পক্ষেই যাবে!

অবাক হচ্ছেন? তা হওয়ারই কথা। এই ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টিতে ১৫০ বা এর চেয়ে বেশি রানের লক্ষ্য তাড়ায় এখন পর্যন্ত একবারও জিততে পারেনি বাংলাদেশ। এমন পরিস্থিতি তৈরি হওয়া ১০ ম্যাচের সবকটিতেই তারা হেরেছে। প্রতিপক্ষ ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ (তিনবার), নিউজিল্যান্ড ও পাকিস্তান (দুবার করে) এবং আফগানিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারত (একবার করে)।

যার সবশেষ উদাহরণটি দেখা গেল বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের বিপক্ষে। আগেই সিরিজ নিজেদের করে নেওয়া বাংলাদেশ নেমেছিল প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ করার হাতছানি নিয়ে। কিন্তু বিধি বাম! টস হেরে সফরকারীরা আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ৭ উইকেটে ১৭৮ রান করার পর লিটন দাসের দল ১৬.৩ ওভারে মাত্র ১০৪ রানে থামে। সালমান মির্জা, মোহাম্মদ নওয়াজ ও ফাহিম আশরাফের বিপরীতে আসা-যাওয়ার মিছিলে ছিলেন বাংলাদেশের ব্যাটাররা।

এক পর্যায়ে, এই সংস্করণে নিজেদের সর্বনিম্ন দলীয় সংগ্রহে অলআউট হওয়ার শঙ্কা জেগেছিল স্বাগতিকদের। ৬৫ রানে পড়ে গিয়েছিল ৮ উইকেট। তবে মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনের ব্যাটে (৩৪ বলে অপরাজিত ৩৫ রান) শেষমেশ তিন অঙ্কে পৌঁছাতে পারে তারা। তাই ২০১৬ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ইডেন গার্ডেন্সে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৭০ রানে গুটিয়ে যাওয়ার রেকর্ড (!) অক্ষত থেকে গেছে।

মিরপুরের 'শূন্য খাতা'র পাশাপাশি সার্বিক চিত্রও খুবই হতাশাজনক। টি-টোয়েন্টিতে এখন পর্যন্ত ৫৬ ম্যাচে বাংলাদেশকে ১৫০ বা বেশি রানের লক্ষ্যের পেছনে ছুটতে হয়েছে। তারা জয়ী হয়েছে স্রেফ নয়টি ম্যাচে। বাকি ৪৭টিতেই মিলেছে হারের তেতো স্বাদ।

এই নয়টি জয়ের মধ্যে বিদেশের মাটিতে এসেছে পাঁচটি, দেশের মাঠে চারটি। দুটি সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে (শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২০২৪ সালে ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে ২০২৩ সালে)। একটি করে খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে (জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২০১৬ সালে) ও চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে (ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২০২৩ সালে)।

আবার ফেরা যাক মিরপুরে। যদি বলা হয়, এই মাঠে ১৪০ বা এর চেয়ে বেশি রানের লক্ষ্য তাড়ায় বাংলাদেশের জয় কয়টি? আশাবাদী হওয়ার উপায় নেই। জবাব হলো, ১৩ ম্যাচে মাত্র দুটি। ২০১৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে (১৪২ রানের লক্ষ্যে ৭ উইকেটে) ও ২০১৯ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে (১৪৫ রানের লক্ষ্যে ৩ উইকেটে)।

অর্থাৎ পরিসংখ্যান অনুসারে, টি-টোয়েন্টিতে চ্যালেঞ্জিং বা বড় লক্ষ্য তাড়ার কৌশলটা এখনও সেভাবে রপ্ত হয়নি বাংলাদেশের। এই ব্যর্থতার পেছনে রয়েছে ব্যাটারদের দুর্বল স্ট্রাইক রেট, ব্যাটিং লাইনআপের হুড়মুড় করে ধসে পড়া এবং সর্বোপরি শক্ত মানসিকতার ঘাটতি।

শ্রীলঙ্কার মাটিতে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জয়ের পর ঘরের মাঠে পাকিস্তানকেও একই ব্যবধানে হারিয়ে আনন্দিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে বাংলাদেশ দলের। এই ম্যাচের পর পুরস্কার বিতরণী আয়োজনে অধিনায়ক লিটন বলেছেন, তারা সঠিক দিকেই এগোচ্ছেন। তবে লক্ষ্য দেড়শ ছাড়ালেই উল্টো পথে হাঁটার যে 'প্রবণতা' দেখা যায়, তা দূর করার দিকে কবে এগোবে বাংলাদেশ?

Comments

The Daily Star  | English

Hasina can’t evade responsibility for Khaleda Zia’s death: Nazrul

In 2018, Khaleda walked into jail, but came out seriously ill, he says

3h ago