‘ম্যাক্সওয়েলকে পছন্দ করি, আমার জার্সি আর লকেট-দুটোতেই ৩২ নম্বর’

বাংলাদেশ নারী দলের স্পিন বিভাগের সেরা ভরসার নাম নাহিদা আক্তার। গত কয়েক বছর ধরেই দলকে টানছেন তিনি। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে নাহিদাই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি। বাঁহাতি এই স্পিনার বলেছেন সাবেক অধিনায়ক ও বর্তমান জাতীয় দলের নির্বাচক সালমা খাতুন যেভাবে তার ক্যারিয়ার গঠনে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন, তা ভাষায় প্রকাশ করা অসম্ভব। বাঁহাতি স্পিনার হলেও নাহিদার আইডল অস্ট্রেলিয়ান অলরাউন্ডার গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। স্বদেশী কিংবদন্তি সাকিব আল হাসানেরও ভক্ত তিনি।
বাংলাদেশের হয়ে ৫৫ ওয়ানডে খেলে নাহিদার শিকার ৭১ উইকেট, যা সর্বোচ্চ। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা সালমা নেন ৫২ উইকেট। টি-টোয়েন্টিতে ৯৪ ম্যাচ খেলে নাহিদা নেন ১০৭ উইকেট। বাংলাদেশের আর কারো ১০০ উইকেট নেই, দ্বিতীয় সালমার শিকার ৮৪। নাহিদা সম্প্রতি জানিয়েছেন সালমাই তার চলার পথের দিক নির্দেশক।
মূলত বাঁহাতি স্পিনার হলেও ব্যাট হতেও বেশ সাবলীল নাহিদা। এছাড়া ভালো ফিল্ডার হিসেবে সুনাম আছে তার। অলরাউন্ডার পরিচয়কে উপভোগ করা এই ক্রিকেটারের পছন্দ অজি গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, ম্যাক্সয়েলের জার্সির নম্বরই গায়ে চাপান তিনি, , 'আমি সবসময় গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে পছন্দ করি। তাই আমার জার্সি আর লকেট — দুটোতেই ৩২ নম্বর। ওর ফিল্ডিং বিশ্বমানের, ওকে খেলতে দেখলে আমি অনুপ্রাণিত হই। আসলে আমি ৭৫ নম্বর নিতে পারতাম, কিন্তু সেটা সাকিব ভাইয়ের। শ্রদ্ধার কারণে নিইনি। তিনি বাংলাদেশের ক্রিকেটের কিংবদন্তিদের একজন, তার স্থান কেউ নিতে পারবে না।'
সালমা তার মেন্টর
সম্প্রতি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সালমা খাতুনকে দেশের প্রথম নারী নির্বাচক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। ক্রিকেট ওয়েবসাইট ইএসপিএন ক্রিকইনফোকে তিনি বলেন, 'যখন আমি জাতীয় দলে সুযোগ পাই, তখন সালমা খাতুনের অধীনে খেলেছি — তিনি বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটের এক কিংবদন্তি।'
'তার কাছাকাছি থেকে খেলা আমাকে ক্রিকেটের প্রতি আরও বেশি ভালোবাসা শিখিয়েছে। বাংলাদেশের নারী ক্রিকেট আজ যে অবস্থানে, তাতে তার অবদান অপরিসীম। তার অধীনে নিজের যাত্রা শুরু করতে পেরেছিলাম, এটা আমার সৌভাগ্য।'
'যেভাবে তিনি আমাকে পথ দেখিয়েছেন, তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। আমার মা, বাবা আর ভাই ঘরে ছিলেন, কিন্তু মাঠে সালমা আপা আমার পরিবারের মতোই আমাকে দেখাশোনা করতেন। আমি যেন ঠিক পথে থাকি, সে দিকেও তিনি নজর রাখতেন। এখনো যদি কোনো ভুল করি, তিনি তা সংশোধন করে দেন এবং শেখার সুযোগ করে দেন।'
সালমাদের ক্যারিয়ার শেষের পর নাহিদারাই এখন সিনিয়র। দলের জুনিয়রদের দিক নির্দেশনার ভূমিকায় এখন নাহিদাই ভূমিকা পালন করছেন। নারী বিশ্বকাপের দ্বিতীয় ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে লড়াইয়ের আগে তিনি বাঁহাতি স্পিনার সানজিদা আক্তার মেঘলাকে অনুশীলনে দিকনির্দেশনা দিচ্ছিলেন এবং লেগস্পিনার স্বর্ণা আক্তার ও রাবেয়া খানের সঙ্গে বল গ্রিপ ও লাইন-লেন্থ নিয়ে পরামর্শ করছিলেন।
নাহিদা এখন বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি এবং দলের সহ-অধিনায়ক। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার শুরুর দিনগুলো ছিল শেখার, পারফর্ম করারও। সালমা ছাড়াও তিনি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতেন অলরাউন্ডার রুমানা আহমেদের অনুশীলন ও খেলার ধরণ, 'সালমা আপার মতো খেলোয়াড়দের দেখে আমি শিখেছি কীভাবে নিজের খেলা উন্নত করতে হয়, দলকে আরও উপকারীভাবে সহায়তা করা যায়। বিশেষ করে সালমা আপা আর রুমানার শান্ত স্বভাব আমাকে অনেক অনুপ্রাণিত করেছে। দল অনেক রান খরচ করলেও তারা স্থির থাকতেন। সেই মানসিক দৃঢ়তাই আমার মধ্যে এসেছে তাদের কাছ থেকে।'
Comments