সেমিফাইনালের দৌড়: বাংলাদেশ কি টিকে থাকতে পারবে?

তিন রাউন্ড শেষে জমে উঠেছে আইসিসি নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপ। কারও জন্য শুরুটা রূপকথার মতো, কারও জন্য যেন কঠিন সংগ্রামের গল্প। মঞ্চে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার দাপট, ভারতের স্থির অগ্রযাত্রা, আবার দক্ষিণ আফ্রিকার পুনর্জন্মের গল্প, সব মিলিয়ে টুর্নামেন্টটি এখন রঙিন বৈচিত্র্যে ভরা।

বাংলাদেশও প্রথমবারের মতো সেমিফাইনালের স্বপ্নে বাঁচিয়ে রেখেছে আশা। তিন ম্যাচে একটি জয় নিয়ে নিগার সুলতানা জ্যোতি ও তাঁর দল পয়েন্ট টেবিলে ষষ্ঠ স্থানে। তবে সামনের পথ কঠিন, চলতে হবে সাহস ও অঘটনের জোড়া ভরসায়।

তিন রাউন্ড শেষে আট দলের অবস্থাটা এখন যেমন-

১. ইংল্যান্ড : ৬ পয়েন্ট, +১.৮৬৪ নেট রান রেট

তিন ম্যাচ, তিন জয়, এক কথায় দুর্দান্ত সূচনা। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে একতরফা জয় দিয়ে শুরু করে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কাকেও সহজেই হারিয়েছে ইংলিশরা। এখন পর্যন্ত তাদের পারফরম্যান্সে ভুল খুঁজে পাওয়া কঠিন।

২০১৭ সালের পর প্রথমবার ও মোট পঞ্চমবারের মতো বিশ্বকাপ জয়ের লক্ষ্যে এগোচ্ছে দলটি। ইতিমধ্যেই সেমিফাইনাল প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেছে তারা।

অসাধারণ ফর্মে রয়েছেন অধিনায়ক ন্যাট সিভার-ব্রান্ট। শেষ ম্যাচেই করেছেন দারুণ এক ১১৭ রানের ইনিংস, বলের সঙ্গে বল মেলানো গতিতে।

২. অস্ট্রেলিয়া : ৫ পয়েন্ট, +১.৯৬০ নেট রান রেট

তিন রাউন্ড শেষে ইংল্যান্ডের সঙ্গে একমাত্র অপরাজিত দল অস্ট্রেলিয়া। নিউজিল্যান্ড ও পাকিস্তানকে হারিয়েছে তারা, আর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচটি বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয়েছে।

অস্ট্রেলিয়ার শক্তি তাদের গভীরতায়, ব্যাটিং-বোলিং দুই বিভাগেই সমান মানসম্পন্ন বিকল্প আছে। তাই তাদের লক্ষ্য পরিষ্কার: আবারও ফাইনাল অব্দি যাওয়া।

৩. ভারত : ৪ পয়েন্ট, +০.৯৫৯ নেট রান রেট

শুধু প্রথম তিন দলই এখন পর্যন্ত ইতিবাচক নেট রান রেটে আছে, তাদের মধ্যে অন্যতম ভারত। এবার তারা প্রথমবারের মতো ৫০ ওভারের নারী বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন দেখছে।

দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হারের পর নিজেদের পুনরুদ্ধার করতে চায় ভারত। আর সেটা হবে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে, গ্রুপপর্বের সবচেয়ে প্রতীক্ষিত ম্যাচগুলোর একটিতে।

প্রতিকা রাওয়াল, হারলিন দিওল ও ঋচা ঘোষ ব্যাট হাতে আলো ছড়াচ্ছেন। অন্যদিকে দিপ্তি শর্মা, স্নেহ রানা ও ক্রান্তি গৌড় বল হাতে দারুণ কার্যকর। স্বাগতিকদের দলে ম্যাচ জেতানো খেলোয়াড়ের ঘাটতি নেই।

দক্ষিণ আফ্রিকা : ৪ পয়েন্ট, -০.৮৮৮ নেট রান রেট

ইংল্যান্ডের কাছে বড় হারের পর দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে প্রোটিয়ারা। নিউজিল্যান্ড ও ভারতের বিপক্ষে টানা দুই জয় তাদের ফের সেমিফাইনাল আলোচনায় ফিরিয়ে এনেছে।

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তাজমিন ব্রিটসের শতক ছিল অনবদ্য, আর অধিনায়ক লোরা উলভার্ট ভারতের বিপক্ষে ৭০ রানের ইনিংসে ফিরেছেন ছন্দে। ফলে তাদের পরের প্রতিপক্ষদের সতর্ক থাকতে হবে বটে।

নিউজিল্যান্ড : ২ পয়েন্ট, -০.২৪৫ নেট রান রেট

বাংলাদেশকে হারিয়ে অবশেষে জয়ের দেখা পেয়েছে কিউইরা।

অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে হারের পর এখন তাদের জন্য প্রতিটি ম্যাচ প্রায় বাঁচা-মরার সমান। তবু তাদের পেস আক্রমণ ছন্দে ফিরছে জেস কার ও লিয়া তাহুহু নিয়েছেন তিনটি করে উইকেট। অধিনায়ক সোফি ডিভাইনও দুর্দান্ত ফর্মে আছেন; তিন ইনিংসে তাঁর গড় ৮৬.৬৬।

বাংলাদেশ : ২ পয়েন্ট, -০.৩৫৭ নেট রান রেট

টুর্নামেন্টের শুরুতে পাকিস্তানকে হারিয়ে ভালো সূচনা করলেও পরের দুই ম্যাচে ব্যাটিং ব্যর্থতায় হেরেছে বাংলাদেশ।

তবু আশার আলো জ্বালাচ্ছেন ২০ বছর বয়সী পেসার মারুফা আক্তার, এখন পর্যন্ত পাঁচ উইকেট নিয়েছেন তিনি। স্পিনাররাও দিচ্ছেন ভালো সাপোর্ট।

আগামী সোমবার ভিজাগে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচটি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

শ্রীলঙ্কা : ১ পয়েন্ট, -১.৫২৬ নেট রান রেট

তাদের একমাত্র পয়েন্টটি এসেছে বৃষ্টিতে ম্যাচ পরিত্যক্ত হওয়ার কারণে। ভারত ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হেরেছে তারা।

রান তোলাই সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অধিনায়ক চামারি আতাপাত্থুর ৪৩ রানের ইনিংসই এখন পর্যন্ত তাদের সর্বোচ্চ। ইনোকা রানাওয়ীরা বোলিংয়ে কিছুটা আশা জাগাচ্ছেন, এরই মধ্যে সাত উইকেট শিকার করেছেন তিনি।

মঙ্গলবার নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হার মানে প্রায় নিশ্চিত বিদায়।

পাকিস্তান : ০ পয়েন্ট, -১.৮৮৭ নেট রান রেট

এখন পর্যন্ত জয়হীন একমাত্র দল পাকিস্তান। তারা হেরেছে বাংলাদেশ, ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। তবু অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে লড়াইটা ছিল প্রশংসনীয়। সেই ম্যাচে প্রতিপক্ষকে যথেষ্ট চাপে ফেলেছিল তারা।

প্রত্যাশিতভাবেই ব্যাট হাতে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ছিলেন সিদরা আমিন, ভারতের বিপক্ষে করেছেন ৮১ রান। বোলিংয়েও একাধিক বোলার ভালো পারফর্ম করেছেন।

বুধবার কলম্বোতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে জয়ের খোঁজে মরিয়া থাকবে পাকিস্তান।

Comments

The Daily Star  | English
The Costs Of Autonomy Loss of Central Bank

Bangladesh Bank’s lost autonomy has a hefty price

Economists blame rising bad debt, soaring prices and illicit fund flows on central bank’s waning independence

13h ago