গোলকধাঁধায় মিডল অর্ডার
দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে নুরুল হাসান সোহান যখন ক্রিজে আসেন তখন দলের জিততে দরকার ২৭ বলে ৩১ রান, হাতে ৬ উইকেট। যেকোনো বিচারে সহজ সমীকরণ। তবে ৭ বলের উপস্থিতে অদ্ভুতুড়ে ভঙ্গিমায় ব্যাট ঘুরিয়ে তিনি সেই সমীকরণ কঠিন করে তুলতে রাখেন ভূমিকা। এক পর্যায়ে বাংলাদেশের প্রয়োজন দাঁড়ায় ১৪ বলে ২২ রানের।
মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন ৭ বলে ১৭ না করলে দারুণ অবস্থা থেকেও নাটকীয়ভাবে হার দেখতে হতো। এই ম্যাচে ৭ বলে ৫ করা তার বিচ্ছিন্ন কোন ব্যর্থতা নয়। এর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে দুই ম্যাচে সুযোগ পেয়ে করেছিলেন ১০ বলে ৫ ও ৫ বলে ১ রান। রান না পাওয়ার পাশাপাশি তার দুর্বল ব্যাটিং টেকনিকও দলের উদ্বেগের কারণ। ক্রিজে গিয়ে তিনি এমন সব দৃশ্যের জন্ম দেন যাতে যেকোনো ড্রেসিংরুমে ছড়িয়ে যেতে পারে নেতিবাচক আবহ, একটা নিরীহ ডেলিভারিকেও বিপদজনক বানিয়ে ছাড়েন সোহান।
তবু তাকে একাদশে ফেরানোর কারণ জাকের আলি অনিকের ব্যর্থতা। টানা ব্যর্থতার পরও জাকেরকে আস্থায় রেখেছিল টিম ম্যানেজমেন্ট। কিন্তু আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে সুযোগ পেয়ে করেন ১৬ বলে ২০ রান। এই ম্যাচে না হয় দুই অঙ্ক স্পর্শ করেছেন, আগের ৯ ম্যাচ দেখলে ৬ ম্যাচেই তিনি ফেরেন সিঙ্গেল ডিজিটে। আবার কোন ম্যাচে দুই অঙ্কে গেলেও সেখানে বল লাগিয়েছেন অনেক বেশি। ১৮ বলে ১৭, ১১ বলে ১০- টি-টোয়েন্টিতে ছয় বা সাতে নামা ব্যাটারের কাছ থেকে এমন ইনিংস যেকোনো দলের জন্য মহা বিপদের কারণ।
জাকেরের ব্যর্থতায় সোহানকে সুযোগ দেওয়া হয়, সোহানের ব্যর্থতায় ফের জাকেরের কাছে ফিরে যাওয়া। এই চক্রের যেন শেষ নেই! টানা কয়েক ম্যাচে রান না পাওয়ায় এই সিরিজে শুরুতে বাদ দেওয়া হয় শামীম হোসেন পাটোয়ারিকে। বাঁহাতি ব্যাটারকে আলোচনা না করে বাদ দেওয়ায় প্রকাশ্যে নির্বাচকদের নিয়ে অসন্তোষ জানিয়ে বিতর্কের জন্ম দিয়েছিলেন লিটন দাস। পালটা ব্যাখ্যায় শামীমকে বাইরে রাখার জোরালো যুক্তি নিয়ে আসেন প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু। মজার কথা হলো এতকিছুর পর সেই শামীমকেই নিয়ে আসা হয়েছে শেষ ম্যাচের দলে। এই সময়ে তার কোথায় কিছু করে দেখানোরও সুযোগ ছিলো না। অর্থাৎ জাকের-সোহান দুজনের ব্যর্থতায় ফের চলে এলেন শামীম।
জাকের, সোহান খারাপ করার কারণে প্রক্রিয়া অনুযায়ী সুযোগ পাওয়ার কথা মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনের। যাকে এই সিরিজে বাজিয়ে দেখার জন্য দলে নেওয়া হয়েছিলো। বাস্তবতা আভাস দিচ্ছে তিনি হয়ত পুরো সিরিজটা দর্শক হিসেবেই দেখবেন। নির্বাচক ও কোচ-অধিনায়কের চিন্তার দূরত্বের যেন আরেক ছবি এতে বেরিয়ে এলো।
অঙ্কন যদি শেষ ম্যাচ খেলার সুযোগ পান তাহলেও এক ম্যাচে দিয়ে কীভাবে যাচাই করা হবে, এটা বড় প্রশ্ন। কারণ বিশ্বকাপের আগে এটাই বাংলাদেশের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ।
এমনিতে সাম্প্রতিক সময়ে কোন পর্যায়ের টি-টোয়েন্টিতেই রান পাননি অঙ্কন। জাতীয় লিগের টি-টোয়েন্টি আসরের পর ব্যর্থ ছিলেন রাইজিং স্টার্স এশিয়া কাপের আসরেও। তাকে বাজিয়ে দেখতে চেয়েছিলেন নির্বাচকরা। অঙ্কনকে নেওয়ার পেছনে যে যুক্তি ছিলো নির্বাচকদের, টিম ম্যানেজমেন্ট সেই যুক্তির ধারেকাছেও যায়নি।
এমনিতে বেশ কিছু বিতর্ক তৈরি হয়ে যাওয়ায় এই ব্যাপারে কোন মন্তব্য করতে চাইছেন না প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু। জানা গেছে, আপাতত টিম ম্যানেজমেন্টের চাওয়াকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন তারা।
আর টিম ম্যানেজমেন্টের সেই চাওয়ায় ঘুরছে, কে তুলনামূলক কম খারাপ খেলেন-এই হিসেব। গত এশিয়া কাপের আগে থেকেই মিডল অর্ডার, লোয়ার মিডল অর্ডারে রান খরায় ভুগছে বাংলাদেশ। কখনো কখনো কেউ রান করলেও কার্যকর ইনিংস আসছে না। সেলফিশ ঘরানার ব্যাটিং অনেক সময়ই উল্টো বিপদ কমানোর চেয়ে বাড়িয়ে দিচ্ছে।
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজটা জেতার পাশাপাশি প্রস্তুতির চিন্তায় কিছু ঘাটতির জায়গা পূরণ করে স্বস্তি পেতে চেয়েছিল দল। যার একটা এই মিডল অর্ডার ব্যাটিং। সেটা পূরণ হয়নি, দূর হয়নি অস্বস্তি। আসন্ন বিপিএলে এসব জায়গায় কারো পারফরম্যান্স হয়ত বের করে দিতে পারে আপাত সমাধান। তবে বিপিএলের সঙ্গে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের যে ফারাক তাতে চট করে কাউকে বেছে নেওয়া হবে ঝুঁকিপূর্ণ। গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় খটকা নিয়েই আরও একটি বিশ্বকাপ অভিযানে যেতে হতে পারে বাংলাদেশকে। যাকে বলে ভুল পরিকল্পনার একই চক্রেই ঘুরপাক খাওয়া।


Comments