বার্সা বনাম পিএসজি: প্রতিশোধের মঞ্চে ফের মুখোমুখি দুই দৈত্য

৯৩তম মিনিটে ফ্রান্সেসকো আচেরবির গোল স্বপ্ন ভেঙে দিয়েছিল অনেকের। লামিনে ইয়ামালের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের রাতেও সান সিরোতে ইন্টার বিদায় জানায় কাঙ্ক্ষিত পিএসজির সঙ্গে বার্সেলোনার ফাইনালকে। সেই আঘাত বার্সার ড্রেসিংরুম এখনও ভুলে উঠতে পারেনি।
তবে আজ রাতেই (বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা, মোভিস্টার লিগা দে ক্যাম্পিওনেস) সেই অতীতের পুনরাবৃত্তি হতে পারে বুদাপেস্টের পুসকাস এরেনার পথে। এস্টাদি অলিম্পিকে আবার মুখোমুখি হচ্ছে বার্সেলোনা ও পিএসজি, যে মাঠে ২০২৪ সালের এপ্রিলে নেমে এসেছিল নীরবতা।
সেই রাতে জাভির বার্সা এক ঘণ্টা ১০ জন নিয়ে লড়াই করেছিল, এক পর্যায়ে ২–০ এগিয়েও রোনালদ আরাউহোর লাল কার্ডে ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে। প্যারিসে থেকে ২–৩ ব্যবধানে জিতে এসে ঘরের মাঠে শুরুতে এক গোলে এগিয়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত ১–৪ ব্যবধানে হারে দলটি।
দেড় বছর পর দৃশ্যপট বদলে গেছে। হ্যান্সি ফ্লিকের বার্সা প্রায় চারটি শিরোপা জেতার দ্বারপ্রান্তে গিয়েও প্রতিযোগিতায় অভিজ্ঞতার ঘাটতি মেটাতে পারেনি। অন্যদিকে, লুইস এনরিকের নেতৃত্বে পিএসজি স্পর্শ করেছে বহুল কাঙ্ক্ষিত 'বড়-কানওয়ালা' ট্রফি (চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ট্রফি)।
নেইমার, মেসি, এমবাপে তখন সৌদি-আরব, মায়ামি ও মাদ্রিদ থেকে দেখেছেন সেই সাফল্য। কাতারি মালিক নাসের আল-খেলাইফির ১৩ বছরের স্বপ্ন অবশেষে পূর্ণ হয়। এনরিকে অনুপ্রাণিত করেন উসমান দেম্বেলেকে, যিনি শৃঙ্খলিত ও নিবেদিতপ্রাণ তারকা হয়ে ওঠেন। আর এমবাপে-পরবর্তী দলটিকে তিনি বিশ্বাস করান, এই দল আরও শক্তিশালী।
তবে বর্তমান পরিস্থিতি পিএসজির জন্য সহজ নয়। তারা লীগ আঁর শীর্ষে থাকলেও গত সপ্তাহে হেরেছে মার্সেইয়ের কাছে। এনরিকে জানতেন দেম্বেলে ও দেজিরে দুয়ে খেলতে পারবেন না। এর মধ্যে নতুন করে যোগ হয়েছে খভিচা কভারাত্সখেলিয়া ও রক্ষণভাগের মারকুইনিয়োসের নাম। ফলে আক্রমণভাগে নেই সেই ভয়ঙ্কর শক্তি, যারা ইন্টারকে ৫–০ তে বিধ্বস্ত করেছিল।
মাঝমাঠে টিকে আছেন শুধু ভিতিনিয়া, ফাবিয়ান ও জোয়াও নেভেস। সামনে হয়তো ভরসা রাখতে হবে বারকোলা, গনসালো রামোস ও লি কাং-ইনের ওপর। তবু হালকা করে দেখার সুযোগ নেই পিএসজিকে, তাদের শিরোপা রক্ষার মিশন শুরু হয়েছিল আতালান্তাকে ৪–০ উড়িয়ে দিয়ে।
বার্সার দিকেও ইনজুরির ছায়া আছে। হুয়ান গার্সিয়া, গাভি, ফার্মিন লোপেজ ও রাফিনিয়া নেই। তবে ফিরছেন বালদে। ফ্লিকের দল এখন লিগে শীর্ষে, টানা চার জয় আর নিউক্যাসলের মাঠে ২–১ জয়ের আত্মবিশ্বাসে উজ্জীবিত। সে ম্যাচে মার্কাস রাশফোর্ডের জোড়া গোল ও 'পটার' নামে খ্যাত পেদ্রির দাপট ছিল চোখে পড়ার মতো। এনরিকে স্বীকার করেছেন, এই ডাকনাম তিনিই দিয়েছেন। ব্যালন ডি'অরের ১১তম স্থানে থাকা পেদ্রি মুখোমুখি হবেন ৩য় স্থানে থাকা ভিতিনিয়ার, একটি জমজমাট দ্বন্দ্ব অপেক্ষা করছে।
মাত্র ১৬ বছর বয়সেই লামিনে ইয়ামাল চ্যাম্পিয়ন্স লিগে নামবেন বার্সার হয়ে। প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ট্রফি ঘরে তোলার। ২০২৪–এ আরাহোর লাল কার্ডের কারণে বেঞ্চে বসতে হয়েছিল তাকে, যা তিনি এখনও ভোলেননি। এবার মঞ্চে পা রেখেই দাপট দেখাতে চান। প্রশ্ন হলো, আক্রমণে ফ্লিক কাকে বেছে নেবেন -লেভানদোভস্কি নাকি ফেরান? রক্ষণের দায়িত্বও থাকবে কুবারসি ও এরিক গার্সিয়ার ওপর, যদি না আরাহো ফিরতে পারেন।
সব মিলিয়ে, এস্টাদি অলিম্পিকে আজ রাতের এই লড়াই শুধু একটি সেমিফাইনালের টিকিট নয়, বরং পুরনো ক্ষত মুছে নতুন ইতিহাস লেখার মঞ্চ। বার্সা ও পিএসজি -দুই দৈত্যের এই দ্বৈরথ ফুটবলপ্রেমীদের উপহার দেবে এক স্মরণীয় রাত।
Comments