আবুধাবি থেকে

ধুঁকতে থাকা হৃদয়কে বয়ে বেড়ানোর মূল্য দেবে বাংলাদেশ?

towhid hridoy

ব্যাটে বল লাগছে না, টাইমিং হচ্ছে গড়বড়। প্রথম ম্যাচের আগে নেট অনুশীলন সেরে বেরিয়ে যাওয়ার সময় এই নিয়ে সতীর্থ পারভেজ হোসেন ইমনের সঙ্গে আলাপ করছিলেন তাওহিদ হৃদয়। সম্ভবত খুঁজছিলেন সমাধান। মূল আসরে নেমেও সমাধান তিনি পাননি। হংকংয়ের বিপক্ষে রান তাড়ায় মন্থর ইনিংস খেলে আসার পর বলছিলেন, 'আমি চেষ্টা করেছি মারতে, কিন্তু বল ব্যাটে লাগছে না।'

নাহ, হৃদয়ের বল ব্যাটে লাগছে না অনেকদিন ধরেই। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নেমে ৪ রানে সহজ ক্যাচ উঠিয়ে দিয়েছিলেন, সেই ক্যাচ হাতছাড়া হওয়ার পরও কপাল খুলেনি তার। সময় খারাপ গেলে যা হয়, পরের বলেই সরাসরি থ্রোতে হয়ে যান রান আউট। আত্মবিশ্বাস শূন্যে, অফ স্টাম্পের বাইরের বলে দুর্বলতা বেরিয়ে এসেছে দৃষ্টিকটুভাবে। হৃদয় গা ঝাড়া দিয়ে উঠার পথ পাচ্ছেন না। কিন্তু আড়ষ্টতায় বন্দি এই ডানহাতি ব্যাটারকে বহন করে বাংলাদেশ দল ধুঁকছে।

এশিয়া কাপের ঠিক আগে সিলেটে ফিরে গেলে দেখা যাবে হৃদয়ের কাছে ধাঁধার মতন লাগছিল আরিয়ান দত্ত, টিম প্রিঙ্গলকে। ডাচ এই স্পিনাররা ঠিকই বুঝে গিয়েছিলেন হৃদয়ের অফ সাইডের দুর্বলতা। বেশিরভাগ শট তিনি টেনে অন সাইডে খেলতে গিয়ে পা দেন ফাঁদে। হৃদয়ের অফ সাইড অনেকটা ব্লক হয়ে আছে। তার এই সীমাবদ্ধতার খুঁটিনাটি প্রতিপক্ষের লেপটপে সহজেই ধরা পড়ার কথা।

পরিসংখ্যান বলছে সবশেষ খেলা ২০ ইনিংস মাত্র ১১২.৮৮ স্ট্রাইকরেটে মোটে ৪০৩ রান করেছেন হৃদয়। সর্বশেষ ১০ ইনিংস ধরলে ব্যাপারটা আরো নাজুক। কেবল ১০০.৫৪ স্ট্রাইকরেটে তিনি করেন ১৮৬ রান। একই সময় ১৯ ইনিংস খেলে জাকের আলি অনিক যেখানে খেলেছেন ১৩১ স্ট্রাইকরেটে।

হৃদয়ের টি-টোয়েন্টির গ্রাফটা ক্রমাগত অবনতির দিকে। ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন দারুণ সম্ভাবনা নিয়ে। বিশেষ করে ছক্কা মারার সাবলীলতায় মিডল অর্ডারে ভরসা হয়ে উঠেন তিনি। ক্যারিয়ারের প্রথম ২০ ইনিংসে তার স্ট্রাইকরেট ছিলো ১৩৫.৩৪, এমনকি গড়ও ছিলো জুতসই-৩০.৮৭। কিন্তু এখন তিনি উল্টো স্রোতে যাত্রা ধরেছেন।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হেরে টুর্নামেন্টে চরম ব্যাকফুটে চলে যাওয়া বাংলাদেশের পরের প্রতিপক্ষ আফগানিস্তান। হৃদয়কে আরও একটা সুযোগ দিলে সেটা তার জন্য এই পরিস্থিতির কারণেই হতে পারে অনেক বেশি

প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপে বললেন এখনই হৃদয়ের উপর আস্তা হারাতে চান না, তবে দুশ্চিন্তা যে তারাও করছেন ফুটে উঠল তার কণ্ঠে, 'হৃদয় হয়ত তার সেরা ছন্দে নেই। পাশাপাশি যে ধরণের উইকেটে বল ব্যাটে আসে ভালো সেখানে সে বেশি প্রভাব রাখে। এতদিন ইনভেস্ট করার পর এখন পাওয়ার সময়, না হলে ইনভেস্টমেন্টাই ঝামেলাপূর্ণ হয়ে গেল, না? আশা করছি সে ফেরত আসবে।'

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ব্যাটিং ব্যর্থতার দায় অবশ্য টপ অর্ডারকে আগে দিতে চান লিপু, 'তবে শুধু এক তাওহিদ হৃদয়কে দায় দেওয়া যায় না। (শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে) পুরো টপ অর্ডার ফেইল করেছে। একটা খেলোয়াড়কে লক্ষ্য করে কিছু বললে হয় না। এরকম খারাপ সময় যেতে পারে। টপ অর্ডারের যে শুরু হওয়া উচিত ছিলো সেটা হয়নি, রানআউটটা বাজে ক্যালকুলেশন।'

গত কিছু ম্যাচে বাংলাদেশের টপ অর্ডার পারফর্ম করছিলো ভালোই। দুই ওপেনার একসঙ্গে জ্বলে না উঠলেও যেকোনো একজন রান পাচ্ছিলেন। তিনে অধিনায়ক লিটন দাস নিয়মিত রানে আছেন। লঙ্কানদের বিপক্ষে শুরুতে উইকেট পড়ার পর পরীক্ষা ছিলো মিডল অর্ডারের। সেখানে হৃদয়ের ভূমিকা ছিলো গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ধাপে তিনি হয়েছেন ব্যর্থ। মিডল অর্ডারে ব্যাকআপ হিসেবে স্কোয়াডে আছেন সাইফ হাসান, এমনকি নুরুল হাসান সোহানকেও এই পজিশনে বিবেচনা করা যায়। দুই বছর পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ঝড়ো ব্যাট করেছিলেন সাইফ। অফ স্পিন আর ক্ষিপ্র ফিল্ডিং মিলিয়ে নিজেকে টি-টোয়েন্টির জন্য প্রস্তুত করেছেন এক সময় টেস্ট খেলোয়াড়ের তকমা থাকা সাইফ।

আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর আফগানদের বিপক্ষে হারলেই বিদায় নিতে হবে টুর্নামেন্ট থেকে। জিতলেও অপেক্ষায় থাকতে হবে শ্রীলঙ্কা-আফগানিস্তান ম্যাচের ফলের। এমন প্রবল চাপের ম্যাচে খেই হারিয়ে দিকহারা হৃদয়কে একাদশে ক্যারি করা কতটা সমীচীন?

Comments

The Daily Star  | English

Hasina can’t evade responsibility for Khaleda Zia’s death: Nazrul

In 2018, Khaleda walked into jail, but came out seriously ill, he says

3h ago